দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 2

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 2

পবিত্র কোরআন পাঠের ফযীলত

পবিত্র কোরআন পাঠের ফযীলত সম্পর্কে অনেক বর্ণনা উল্লেখ রয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে কয়েকটি উদ্ধৃতি আলোচিত হল ।
* হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন—“যে ব্যক্তি পবিত্র কোরআনের একটি অক্ষর পাঠ করবে, সে দশটি নেকী পাবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি অক্ষর। বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর এবং মীম একটি অক্ষর। সুতরাং এ তিনটি অক্ষর পাঠ করলে ত্রিশটি নেকী পাওয়া যাবে।

* হযরত ওসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত এক হাদীসে উল্লেখ আছে— “তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করেছে এবং অপরকেও শিক্ষা দিয়েছে।” (বুখারী শরীফ)
* হযরত আবুবকর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন—“রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য তোমরা ঐ জিনিস হতে অনেক মূল্যবান আর কোন জিনিস পাবে না, যা স্বয়ং আল্লাহ্ তা'আলার পবিত্র জবান হতে বের হয়েছে। তথা আল-কোরআন।”

* হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত নবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন যে—পবিত্র কোরআনের মর্যাদায় অনেক লোক মর্যাদার উচ্চ শিখরে আরোহণ করবে, আর কোরআন (মুসলিম শরীফ) শরীফের অমর্যাদার কারণে অধিকাংশ লোক নিকৃষ্টতম পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। জাহান্নামের বর্ণনা!

* পবিত্র হাদীস শরীফে আরও উল্লেখ আছে—“যে ব্যক্তি মহাপবিত্র কোরআন মজিদ পাঠ করে এবং তদানুযায়ী আমল করে, কিয়ামাতের দিন (পুরস্কার স্বরূপ) তার মাতা-পিতাকে সূর্যের আলো অপেক্ষাও জ্যোতির্ময় টুপি পরিধান করান হবে।”

যারা কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে জানে না তাদের দুরবস্থার কথা বর্ণনা করে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা হয়েছে—“যার অন্তরে কোরআনের কোন অংশ নেই, সে ব্যক্তি বিরান (জন-মানবহীন) ঘরের মত।” অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোরআন শিক্ষা করেনি বা কোরআন পড়তে জানে না সে অনুপযুক্ত লোক । সুতরাং তার জীবনের কোন মূল্য নেই।

তিরমীযি শরীফের হাদীসে রাসূলে কারীম (সাঃ) হতে উদ্ধৃত এক হাসীসে বর্ণিত আছে—নফল ইবাদাতসমূহের মধ্যে মহাপবিত্র কোরআনে কারীম তিলাওয়াতের ছাওয়াব অনেক বেশি। সুতরাং তোমরা সর্বদা পবিত্র কোরআন মজিদ তিলাওয়াত করবে। কেননা হাশরের মাঠে পবিত্র কোরআন মজিদ তার পাঠকের জন্য (মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর নিকট) সুপারিশ করবে ।

* অন্য এক হাদীসে রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-মানুষের মৃত্যুর পর যখন তাকে কবরে দাফন করা হবে তখন মুনকার-নাকীরের প্রশ্ন করার সময়ে মৃতের পক্ষ হতে একজন যুবক বলবে ইনি আমার বন্ধু! আমি তাঁকে একাকী ভাবে ছেড়ে যেতে পারি না। 

কেননা দুনিয়াতে থাকাকালীন সময়ে এ ব্যক্তি মহাপবিত্র কোরআনে কারীম তিলাওয়াত করেছিল আর এখন আমিই তার ঐ পবিত্র কোরআন । সুতরাং আপনাদের প্রশ্ন আপনারা করতে পারেন, আমি কিন্তু আমার এ বন্ধুকে বেহেশতে না পৌঁছায়ে তাঁর নিকট হতে বিদায় নিতে পারব না। 

এরপর মৃতব্যক্তির নিকট আত্মপরিচয় দিয়ে বলবে, আমি আপনার দুনিয়াতে পাঠকারী ঐ কোরআন যা আপনি কখনও উচ্চৈঃস্বরে কখনও নিম্নস্বরে পাঠ করতেন। এখন আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, মুনকার-নাকীরের প্রশ্নের জন্য আপনার কোন ভয় নেই। 

এরপর ফিরিশ্তাদের প্রশ্নের পর তাঁকে বেহেশতের পোশাক ও বিছানা দান করা হবে। যাঁর সাথে দুনিয়ার কোন কিছুর তুলনা করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। (হাকেম) মহান করুণাময় আল্লাহ্ আমাদের সকলকেই কোরআন মজিদ পাঠ করে সকল নি'আমাতসমূহ অর্জন করার তৌফিক দান করুন।

উল্লিখিত আলোচনা হতে বুঝা গেল, কোরআন মজীদ পাঠ করলে আল্লাহ্ এবং রাসূলের প্রিয়পাত্র হওয়া যায়। যে কোরআনের প্রতিটি হরফ পাঠে দশটি করে নেকী পাওয়া যায়, যে কোরআন শিক্ষা এবং ‘আমলের ফলে মাতা-পিতাকে নূরের টুপি দান করা হবে, কবর, হাশর ও মহান আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করে ইহকালীন জীবনে শান্তি ও পরকালীন জীবনে মুক্তিলাভের বর্ণনা উল্লেখ রয়েছে। 

সাধ্য থাকতে কখনও সে কোরআন পাঠে অবহেলা করা সমীচীন নয়। তাই সকলেরই উচিত হাতে সময় থাকতে এখনও কোরআন মজিদ সহীহ্-শুদ্ধভাবে পাঠের অভ্যাস করে নিজের জীবনকে সুন্দর-সুশৃংখলভাবে সাজানোর চেষ্টা করা ।

ইলম শিক্ষা করার বিবরণ

‘ইলম দু'প্রকার। যথা : দুনিয়াবী ‘ইলম ও দ্বীনী ইলম। দুনিয়াবী “ইলম শিক্ষা না করলে ইহকালীন উন্নতি হাছিল হয় না, আর দ্বীনী ইলম শিক্ষা না করলে পরকালীন উন্নতি হাছিল হবে না। 

ইহকাল অস্থায়ী আর পরকাল চিরস্থায়ী। মানুষ ইহকাল লাভের জন্য দুনিয়াবী ‘ইলম লাভ করার নিমিত্ত হাজার হাজার টাকা খরচ করতে রাজী কিন্তু চিরস্থায়ী পরকালের মুক্তিলাভের জন্য দ্বীনী ইলম শিক্ষা করতে টাকা খরচ করতে রাজী হয় না। সমাজের এ অবস্থার কারণ দ্বীনী ‘ইলমের অজ্ঞতা এবং পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস না থাকা ৷ 

অথচ দ্বীনী ‘ইলম শিক্ষা করার ব্যাপারে হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ) স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন—“প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ‘দ্বীনী এলেম শিক্ষা করা অবশ্য কর্তব্য (ফরয)।” এ ফরয ত্যাগ করলে দোযখে শাস্তি ভোগ করতে হবে। 

হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফতোয়ার কিতাব শামীর ১ম খণ্ডের ৪০ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে, “দ্বীনী ‘ইলম দরকার পরিমাণ শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরযে ‘আইন, অপরের উপকারের জন্য প্রয়োজনের বেশি শিক্ষা করা ফরযে কিফায়া, বিদ্যার সাগর হওয়া মুস্তাহাব।

উল্লিখিত বর্ণনায় বুঝা গেল একশত জনের মধ্যে একশত জন মুসলমান নর-নারীর উপরই দ্বীনী “ইলম শিক্ষা করা ফরয। এ ‘ইলম শিক্ষা করা প্রথম প্রকারের ‘ইবাদাত। বুখারী শরীফের একটি হাদীসে আছে, রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন, “সমস্ত রাত জেগে থেকে নফল ইবাদাত করার চেয়ে এক ঘণ্টাকাল ‘ইলম শিক্ষা করা উত্তম।”

বর্তমান জমানার মুসলমান সমাজ দ্বীনী 'ইলম শিক্ষার ফরয তরক করে নিজের জীবনটা নষ্ট করে ফেলছে এবং তাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে দ্বীনী ইলম শিখাতে অনিচ্ছুক। মোটকথা নিজেরাও ফরয ‘ইলম শিক্ষা করা থেকে বিরত থেকে জীবনটা নষ্ট করছে, সন্তান-সন্ততিদের জীবনটাও নষ্ট করে ফেলছে। 

এক্ষণে পরকালের শাস্তি হতে মুক্তি পেতে হলে নিজেদেরকে দ্বীনী ইলম শিক্ষার ফরয আদায় করতে হবে এবং নিজ সন্তানদেরকেও দ্বীনী ইলম শিক্ষার ফরয আদায় করাতে হবে। 

সন্তানদেরকে দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিলে মৃত্যুর পর কবরে থেকে দোয়া পেতে থাকবে এবং হাশরের মাঠে পুরস্কার স্বরূপ নূরের টুপি এবং রুমাল পাওয়ার আশা আছে। দ্বীনী ইলম শিক্ষা করতে গিয়ে যদি কেউ মারা যায়, তাহলে তাদের মর্যাদা খুবই উচ্চস্তরে হবে, এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীস শরীফে ঘোষণা হয়েছে। 

হযরত রাসূলে কারীম (সা) ইরশাদ করেন—“যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম তাজা করার জন্য 'ইলম শিক্ষা করে আর এমতাবস্থায় সে মারা যায়, তাহলে বেহেশতের মধ্যে তার এবং নবীদের মধ্যে কেবল একটি মাত্র স্তরের ব্যবধান হবে।

অর্থাৎ নবুওয়াতের স্তর ব্যতীত সে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
বুখারী এবং মুসলিম শরীফের এক হাদীসে আছে, রাসূল কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন—“মহান আল্লাহ্ পাক যার মঙ্গল বা কল্যাণ কামনা করেন তিনি তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। আমি উক্ত “ইলম বণ্টনকারী মহান আল্লাহ্ উক্ত 'আলেমকে তা বুঝার শক্তি দান করেন। জান্নাত জাহান্নামের বর্ণনা ”

“ইলমে দ্বীন শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলে কারীম (সাঃ) আরও ঘোষণা করেন—“দ্বীনী ইলম শিক্ষা করতে সুদূর চীন দেশে যেতে হলেও সেখানে গিয়ে দ্বীনী “ইলম শিক্ষা কর।”
প্রকাশ থাকে যে, শামী কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪০ পৃষ্ঠায় লেখা আছে, শরী'আতের 'ইলম দু'ভাগে বিভক্ত। যথা : ফিক্কাহ যা শারীরিক ‘ইবাদাত আর তাসাওউফ যা অন্তর পরিশুদ্ধির বিদ্যা। সুতরাং উভয় প্রকার 'ইলমই প্রয়োজন পরিমাণ শিক্ষা করা ফরয।


Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন