দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 41

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 41

মানুষের স্বভাব ও সংসার জীবন

মানুষের স্বভাবই এই যে, মানুষ একা থাকতে পছন্দ করে না এবং একা সে থাকতে পারে না। অবশ্যই তার সঙ্গীর দরকার হয়। নর বা নারী পরস্পরকে সাথী হিসেবে গ্রহণ করে। এ গ্রহণ করা কোন ক্ষণস্থায়ী কামনা বাসনা বাস্তবায়িত করার উদ্দীপনার কারণে নয় বরং এর পেছনে ক্রিয়াশীল থাকে চিরস্থায়ী পরিকল্পনা। নর নারী বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েই এ পরিকল্পনা পারিবারিক জীবনের মধ্যে বাস্তবায়িত করে। 

পারিবারিক এ জীবনে পুরুষ স্বামী হিসেবে আর নারী স্ত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। উভয়ের ঐকান্তিকতা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, মনের মিল, উভয়ের প্রেম ভালোবাসা পারিবারিক জীবনকে সুদৃঢ় ও অবিচ্ছেদ্য করে এক স্থায়ী ভিত্তি দান করে। এভাবে মানুষ গড়তে থাকে বংশধারা ও উত্তরাধিকারী। পারিবারিক ব্যবস্থায় বিয়ে এবং দাম্পত্য জীবন, এটা আকস্মিক কোন ব্যাপার নয়। বরং এ মানব স্বভাবেরই এক অনবদ্য দাবী। 

বিশ্ব প্রকৃতি স্বয়ং এ ব্যবস্থা সৃষ্টিসমূহের প্রতিটি স্তরে কার্যকরী রয়েছে। সক্রিয় রয়েছে প্রতিটি বস্তু ও প্রাণীর মধ্যে। পিপীলিকা, মৌমাছি, উইপোকার পারিবারিক জীবন দেখলে স্তম্ভিত না হয়ে পারা যায় না।
পৃথিবীতে কোন একটি প্রাণীও জোড়াবিহীন নেই। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে জানিয়েছেন, “প্রতিটি বস্তুকেই আমি সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায় পৃথিবীর সৃষ্টিসমূহ জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করার পেছনে বংশ বৃদ্ধি করার প্রবণতা ও উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে। 

যখনই এভাবে দুটো জিনিসের মিলন সাধিত হবে, তখনই তা থেকে তৃতীয় এক জিনিসের উদ্ভব হতে পারে। সৃষ্টিলোকের কোন একটি জিনিসও এ নিয়মের বাইরে নয়; একটি ব্যতিক্রমও কোথাও দেখা যেতে পারে না। তাই কুরআন মজীদে দাবী করে বলা হয়েছেঃ “মহান পবিত্র সেই আল্লাহ, যিনি সৃষ্টিলোকের সমস্ত জোড়া সৃষ্টি করেছেন। উদ্ভিদ ও মানবজাতির মধ্য থেকে এবং এমন সব সৃষ্টি থেকে, যার সম্পর্কে মানুষ কিছুই জানে না।” 

এ আয়াত থেকে প্রমাণীত হয় যে, 'বিয়ে' ও 'সম্মিলিত জীবন যাপন' এবং তার ফলে তৃতীয় ফসল উৎপাদন করার ব্যবস্থা কেবল মানুষ জীব জন্তু ও উদ্ভিদ গাছপালার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এ হচ্ছে গোটা বিশ্বপ্রকৃতির অন্তর্নিহিত এক সূক্ষ্ম ও ব্যাপক ব্যবস্থা। প্রাকৃতিক জগতের কোন একটি জিনিসও এ থেকে মুক্ত নয়। গোটা প্রাকৃতিক ব্যবস্থাই এমনিভাবে রচিত যে, এখানে যত্রতত্র যেমন রয়েছে পুরুষ তেমনি রয়েছে স্ত্রী এবং এ দুয়ের মাঝে রয়েছে এক দুর্লংঘ্য ও অনমনীয় আকর্ষণ, যা পরস্পরকে নিজের দিকে প্রতিনিয়ত তীব্রভাবে টানছে। islamic history,

প্রত্যেকটি মানুষ স্ত্রী ও পুরুষের মধ্যেও রয়েছে অনুরূপ তীব্র আকর্ষণ এবং এ আকর্ষণই স্ত্রী ও পুরুষকে বাধ্য করে পরস্পরের সাথে মিলিত হতে। সম্মিলিত ও যৌথ জীবনযাপন করতে। মানুষের অন্তর অভ্যন্তরে যে স্বাভাবিক ব্যাকুলতা, আকুলতা ও সংবেদনশীলতা রয়েছে বিপরীত লিঙ্গের সাথে একান্তভাবে মিলিত হওয়ার জন্যে, তারই পরিতৃপ্তি প্রশমন সম্ভবপর হয় এই মধু মিলনের মাধ্যমে। 

ফলে উভয়ের অন্তরে পরম প্রশান্তি ও গভীর স্বস্তির উদ্রেক হয় অতি স্বাভাবিকভাবে। মানুষের অন্তর্লোকে যে প্রেম ভালবাসা প্রীতি ও দয়া-অনুগ্রহ, স্নেহ-বাৎসল্য ও সংবেদনশীলতা স্বাভাবিকভাবেই বিরাজমান, তার কার্যকারিতা ও বাস্তব রূপায়ণ এই বৈবাহিক মিলনের মাধ্যমেই সম্ভব হতে পারে। 

এজন্যে হাদীসে কুরসীতে ইরশাদ হয়েছে : “আল্লাহ বলেছেন : আমিই আল্লাহ, আমারই নাম রহমান, অতীব দয়াময়, করুণা নিধান, আমিই ‘রেহেম' (রক্ত সম্পর্কমূলক আত্মীয়তা) সৃষ্টি করেছি এবং আমার নিজের নামের মূল শব্দ দিয়েই তার নামকরণ করেছি।” অন্য কথায়,প্রেমপ্রীতি, দয়া-সংবেদনশীলতা ও স্নেহ-বাৎসল্য মানব-প্রকৃতি নিহিত এক চিরন্তন সত্য। আর এ সত্যের মুকুল পুষ্পাকৃতি লাভ করতে পারে না এবং এ পুষ্প উন্মুক্ত উদ্ভাসিত হতে পারে না মানব মানবীর মিলন ব্যতিরেকে ।

এ মিলনই সম্ভব হতে পারে পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনের মাধ্যমে । মন, প্রাণ ও দেহ এ তিনটি জিনিষের একাত্মতা ও মিলন ছাড়া পারিবারিক জীবন টিকে থাকতে পারে না। যৌন মিলন ছাড়াও দাম্পত্য জীবন একই ধারায় প্রবাহিত হয় না। স্বামী যদি স্ত্রীর নিকট হতে বা স্ত্রী যদি স্বামীর নিকট হতে যৌন তৃপ্তি লাভ করতে না পারে, একে অপরে অতৃপ্ত থেকে গেলে, অথবা এ জীবন পবিত্র ও অভ্রান্ত পদ্ধতির উপরে প্রতিষ্ঠিত না হলে মানুষ মানসিক স্থিতি লাভ করতে পারে না। 

ফলে একে অপরের মনের কাছাকাছিও আসতে ব্যর্থ হয়। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ দাম্পত্য জীবন লাভ করে ও পারিবারিক জীবনের ভিত্তিস্থাপন করে। রাষ্ট্র ও সমাজের অন্যান্য চালিকা শক্তি এ দাম্পত্য জীবনকে পূর্ণরূপে সমর্থন করে।
এ দাম্পত্য জীবনের সূচনা পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই মানব প্রকৃতির ভেতরে নিহিত। ইসলাম মানুষের সৃষ্টি এবং তার ক্রমবিকাশ ও সভ্যতা সংস্কৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট যুক্তিযুক্ত ধারণা দেয়। ইসলামিক কাহিনী।

হযরত আদম (আঃ) ও মা হাওয়ার মাধ্যমেই যাবতীয় মানবীয় প্রতিষ্ঠানের সূচনা। তারা অজ্ঞ মূর্খ বা অসভ্য ছিলেন না। পৃথিবীর প্রথম মানুষ যিনি তাকে আল্লাহ তায়ালা যাবতীয় জ্ঞান বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়ে, বস্তুর ব্যবহার শিক্ষা দিয়ে একজন নবী-রাসূল বানিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন। মানব সভ্যতার যাত্রা সেখান হতেই। তারই বংশধারা হতে মানুষ এ পর্যন্ত এসেছে। মানব সভ্যতার ক্রম বিকাশের কোন স্তরেই মানব জাতি জ্ঞানবিজ্ঞান ও পারিবারিক ব্যবস্থা ছাড়া জীবনযাপন করেনি।

কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ, যারা নিজেদেরকে বিজ্ঞানী বলে দাবী করে, তারা যাবতীয় সত্য অস্বীকার করে মানব জাতির ক্রমবিকাশ ও মানব সভ্যতা সম্পর্কে এক উদ্ভট ধারণা পেশ করেছে। তাদের ধারণা অনুযায়ী অভি প্রাচীনকালে মানব সমাজে বিয়ের আদৌ কোন প্রচলন ছিল না। মানুষ নিতান্ত পশুর স্তরে ছিল এবং পশুদের ন্যায় জীবনযাপন করত। তখনকার মানুষের একমাত্র লক্ষ্য ছিল খাদ্য সংগ্রহ ও যৌন প্রবৃত্তির পরিতৃপ্তি লাভ। 

যৌন মিলন ছিল নিতান্ত পশুদের ন্যায়। তখনকার সমাজে বিষয় সম্পত্তির উপর ছিল না ব্যক্তিগত স্বত্ত্বাধিকার, ছিল না * কোন বিশেষ নারী বিশেষ কোন পুরুষের স্ত্রী বলে নির্দিষ্ট। ক্ষুৎপিপাসা নিবৃত্তির জন্যে তাদের সম্মুখে ছিল খাদ্য পরিপূর্ণ বিশাল ক্ষেত্র, তেমনি যৌন প্রবৃত্তির নিবৃত্তির জন্যে ছিল নির্বিশেষে গোটা নারী সমাজ। 

উত্তরকালে মানুষ তখন ধীরে ধীরে সভ্যতা ও সামাজিকতার দিকে অগ্রসর হল, বিস্তীর্ণ ও ব্যাপক হতে থাকল তাদের জ্ঞান, বুদ্ধি ও চেতনাশক্তি; তখন নারী পুরুষের মাঝে স্থায়ী সম্পর্ক স্থাপনের এবং বিশেষ পুরুষের জন্যে বিশেষ নারীকে নির্দিষ্ট করার প্রশ্ন দেখা দিল। সন্তান প্রসব, পাপন-পালনের ও সংরক্ষণের যাবতীয় দায়িত্ব যেহেতু স্বাভাবিকভাবেই নারীদের উপর বর্তে সেজন্যে সেই প্রাথমিক যুগে নারীর গুরুত্ব অনুভূত এবং সমাজ ক্ষেত্রে এক বিশেষ মর্যাদা স্বীকৃত হল।  islamic history,

সেকালে সন্তান পিতার পরিবর্তে মা'র নামে পরিচিত হত। কিন্তু এ রীতি অধিক দিন চলতে পারেনি। নারীদের সম্পর্কে পুরুষদের মনোভাব ক্রমে ক্রমে বদলে গেল। নারীদের স্বাভাবিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পুরুষরা তাদের স্থাবর সম্পত্তির ন্যায় দখল করে বসল এবং দখলকৃত বিত্ত সম্পত্তির উপযোগী আইন কানুন নারীদের উপরও চালু করল। কিন্তু সমাজ যখন ক্রমবিবর্তনের ধারায় আরো কয়েকটি স্তর অভিজ্ঞন করে গেল, তখন পরিবার ও গোত্রের ভিত্তি স্থাপিত হল। 

রাষ্ট্র ও সরকার সংস্থা গড়ে উঠল। আইন ও নিয়মনীতি রচিত হল। তখন বিয়ের জন্যে নারীদের তার পিতা-মাতার অনুমতিক্রমে কিংবা নগদ মূল্যর বিনিময়ে লাভ করার রীতি শুরু হল। যদিও মূল্যদানের সে আদিম রীতি আজকের সভ্য সমাজেও কোন না কোন রূপ নিয়ে চালু হয়ে আছে। বস্তুত পাশ্চাত্য সমাজতত্ত্বে মানুষকে পশুরই অধঃস্তন মনে করে নেয়া হয়েছে, তাই মানব জীবন ও সমাজের এই পাশবিক সূচনার ইতিহাসও সম্পূর্ণ মনগড়াভাবে রচনা করে নিতে হয়েছে। 

কিন্তু তাই মানুষের প্রকৃত ইতিহাস হবে৷ এমন কথা সত্য নয়।
প্রকৃত ব্যাপার হলো, মানুষের সৃষ্টির প্রথম হতেই একটি পরিবারে যাবতীয় শর্তসহ পারিবারিক ব্যবস্থা মানুষের মাঝে উপস্থিত ছিল এবং সে ধারাবাহিকতা এ পর্যন্তও চলে আসছে। পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার দিনটি পর্যন্ত তা টিকে থাকবে। 

ইসলামী চিন্তাবিদগণ একথাও স্বীকার করেন মানব সভ্যতা ক্রমবিকাশের কোন কোন স্তরে মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে, মানুষ পশুস্তরে পৌঁছে গেছে, এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত দার্শনিক আল্লামা আব্দুর রহিম (রাহঃ) তাঁর পরিবার ও পারিবারিক জীবন নামক গ্রন্থে বলেন, অবশ্য ক্রমবিবর্তনের কোন স্তরে মানব সমাজের কোন শাখায় এর ব্যতিক্রম ঘটেনি, তেমন কথা বলা যায় না। বরং ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় কোন কোন স্তরে মানব জাতির কোন কোন শাখায় পতনযুগের অমানিশা ঘনীভূত হয়ে এসেছে এবং সেখানকার মানুষ নানাদিক দিয়ে নিতান্ত পশুর ন্যায় জীবন যাপন করতে শুরু করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। 

এ পর্যায়ে এসে তারা ভুলেছে সৃষ্টিকর্তার প্রতি মানবীয় কর্তব্য। নবীগুণের উপস্থাপিত জীব-আদর্শকে অস্বীকার করে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে ধাবিত হয়েছে এবং একান্তভাবে নফসের দাস ও জৈব লালসার গোলাম হয়ে জীবনযাপন করেছে। যখন সব রকমের ন্যায়নীতি ও মানবিক আদর্শকে যেমন পরিহার করা হয়েছে, তেমনি পরিত্যাগ করেছে পারিবারিক জীবনের বন্ধনকেও। এই সময় কেবলমাত্র যৌন লালসার পরিতৃপ্তিই নারী পুরুষের সম্পর্কে একমাত্র বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইসলামিক কাহিনী।

কিন্তু তা সত্ত্বেও এ অবস্থা ছিল সাময়িক। বর্তমান সময়েও এরূপ অবস্থা কোথাও না কোথাও বিরাজিত দেখতে পাওয়া যায়। তাই মানব সমাজের সমগ্র ইতিহাস যে তা নয় যেমন ইউরোপীয় চিন্তাবিদরা পেশ করেছেন, তা বলাই বাহুল্য। বর্ণিত অবস্থাকে বড় জোর সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রমই বলা যেতে পারে। অথচ এই ব্যতিক্রমের কাহিনীকে ইউরোপীয়, ইতিহাসে গোটা মানব সমাজ ও সভ্যতার ইতিহাস বলে ধরে নেয়া হয়েছে। 

অতএব বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলা যায়, সেটা মানব সমাজের ইতিহাস নয়, তা হল ইতিহাসের বিকৃতি, মানবতার বিজয় দৃপ্ত অগ্রগতির নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতায় নগণ্য ব্যতিক্রম মাত্র ।
পৃথিবীতে অগণিত মানুষ। এই মানুষের মধ্য বিচ্ছিন্ন কোন জনগোষ্ঠী অমানুষের মতো, পশুর ন্যায় জীবন-যাবন করতে পারে। সভ্যতা হতে বিচ্ছিন্ন কোন গোষ্ঠীর ইতিহাসকে পৃথিবীর গোটা মানবজাতির ইতিহাস বলে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করার কারণ হলো মানুষকে নাস্তিকতাবাদের দিকে অগ্রসর করা। 

নবুওয়াত, রেসালাত, কোরআন ও হাদিসের প্রতি অবিশ্বাসী করে গড়ে তোলা। বর্তমান বিংশ শতাব্দীর হিরায় কিরণে উদ্ভাসিত পৃথিবীকে যারা বিজ্ঞানের অবদান বলে গর্ব করেন, তারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন এখন পর্যন্ত এ ধরনের মানব গোষ্ঠীর অস্তিত্ব রয়েছে যারা পশুর ন্যায় জীবন যাপন করে। বস্ত্র ব্যবহার, রান্না পদ্ধতি তারা জানে না । বর্তমান সভ্যতার সাধারণ কোন বস্তু সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞানই নেই ।

এই ধরনের অসভ্য জনগোষ্ঠীর ইতিহাসকে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের ইতিহাস বলে আখ্যায়িত করা নিতান্তই উদ্দেশ্য প্রণোদিত বৈকি। মানুষকে মহাসত্যের আহবান হতে ফিরিয়ে রাখার অপকৌশল । পারিবারিক জীবনের প্রতি মানুষের অনাগ্রহ সৃষ্টি করার অপচেষ্টা। ইসলাম মানুষকে পারিবারিক পরিবেশে পারিবারিক জীবনেই পূর্ণমানুষ হিসেবে গড়ার সূচনা করে। এ প্রসঙ্গে আল্লামা আব্দুর রহীম (রাহঃ) তাঁর উক্ত গ্রন্থে বলেন, “পরিবার এবং পারিবারিক জীবন হচ্ছে সমাজ জীবনের ভিত্তিপ্রস্তর। 

এখানেই সর্বপ্রথম ব্যস্টি ও সমষ্টির সম্মিলন ঘটে এবং এখানেই হয় অবচেতনভাবে মানুষের সামাজিক জীবন যাপনের হাতেখড়ি। ইসলামের শারীর-বিজ্ঞানে ব্যক্তি দেহে ‘কল্‌ব' এর যে গুরুত্ব, ইসলামী সমাজ জীবনে ঠিক সেই গুরুত্ব পরিবারের, পারিবারিক জীবনের । তাই কব সম্পর্কে রাসূলে করীম (সঃ) এর বাণী : “দেহের মধ্যে এমন একটি মাংসপিণ্ড রয়েছে, তা যখন সুস্থ ও রোগমুক্ত হবে, সমস্ত দেহসংস্থাও হবে সুস্থ ও রোগশূন্য। 

আর তা যখন রোগাক্রান্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে, তখন সমগ্র দেহ জগত চরমভাবে রোগাক্রান্ত ও বিষ জর্জরিত। তোমরা জেনে রাখ যে, তাই হল কল্‌ব বা হৃদপিণ্ড।” পরিবার সম্পর্কেও একথা পুরোপুরি সত্য। তাই সমাজ জীবনে, সমাজ জীবনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগকে সুস্থ করে তোলা যাদের লক্ষ্য, পারিবারিক জীবনকে সুস্থ ও সর্বাঙ্গ সুন্দর করে গড়ে তোলা তাদের নিকট সর্ব প্রথম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। অন্যথায় সমাজ সংস্কার ও আদর্শিক জাতি গঠনের কোন প্রচেষ্টাই সফল হতে পারে না ।

সুস্বাস্থ্য ও আয়ুর দৃষ্টিতেও বিবাহিত ও পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব সর্বজনস্বীকৃত। জতিসংঘের একটি বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিলঃ বিবাহিত নারী পুরুষ অবিবাহিতদের তুলনায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এ অবিবাহিতরা নারী বা পুরুষ বিধবা তালাকপ্রাপ্ত বা চিরকুমার যাই হয়ে থাক না কেন । 

নদীর যে কেন্দ্রস্থল থেকে বহু শাখা প্রশাখা নানাদিকে প্রবাহিত, সেই সঙ্গমস্থলের পানি যদি কর্দমাক্ত হয়, যদি হয় বিষাক্ত ও পংকিল, তাহলে সে পানি প্রবাহিত হবে যত উপনদী, ছোট নদী ও খালবিলে তা সবই সে পানির সংস্পর্শে তিক্ত ও বিষাক্ত হবে অনিবার্যভাবে। অতএব পারিবারিক জীবন যদি আদর্শভিক্তিক, পবিত্র ও মাধুর্যপূর্ণ না হয়, তাহলে সমগ্র জীবন। জীবনের সমগ্র দিক ও বিভাগও বিপর্যন্ত, বিষাক্ত ও অশান্তিপূর্ণ হবে, এটাই স্বাভাবিক এবং এর সত্যতায় কোনই সন্দেহ থাকতে পারে না।

পৃথিবীর মানব সভ্যতা ও তার কার্যাবলীর ইতিহাস যেমন অগ্রগতি উন্নতির ইতিহাস নয় তেমনি ধ্বংসের অতলে
তলিয়ে যাওয়ার ইতিহাসও নয়। এ দুয়ের সংমিশ্রণেই গড়ে উঠেছে রচিত হয়েছে মানব জাতির ইতিহাস। কিন্তু সে সমস্ত জাতির পতনের ইতিহাস আজকের মানুষ পড়ছে, সে ইতিহাস পর্যালোচনা, অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে অধ্যায়ন করলে এ কথাই প্রতিভাত হয়, সে সমস্ত জাতির পারিবারিক ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত নড়বড়ে। 

প্রথমে তাদের পারিবারিক জীবনে নেমেছে ধ্বস, তারপর সে ধ্বস তাদের গোটা জাতিকে দ্রুত গতিতে গ্রাস করে পৃথিবীতে তাদেরকে ইতিহাসে ধ্বংসশীল জাতির তালিকায় স্থান দিয়েছে। এক সময় পৃথিবীতে মুসলিম জাতির উন্নতি ছিল বিস্ময়কর । গোটা পৃথিবী ছিল তাদের প্রভাবাধীন। পৃথিবীর অন্যান্য জাতি তাদের সমস্যা সমাধাকল্পে সমাধান চাইতো মুসলমানদের নিকটে। পৃথিবীতে মুসলিম জাতির এই বিস্ময়কর উত্থানের পশ্চাতে ছিল মুসলমানদের সুদৃঢ় পারিবারিক প্রথা । ইসলামিক জীবনী।

মুসলিম পরিবার ছিল ইসলামী আদর্শের সূতিকাগার। ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে গঠিত এ সমস্ত পরিবার ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নতুন প্রজন্ম এসমস্ত পরিবার হতেই ইসলামের রঙে রঙিন হয়ে বের হতো। তারিক, মুছা, উরুজ বার্বারোসা, সালাউদ্দিন আইয়ুবী ঐ সমস্ত পরিবারেরই শ্রেষ্ঠ অবদান। আজ মুসলিম পরিবার হয়ে পড়েছে পাশ্চাত্য প্রভাবাধীন। ফলে মুসলিম জাতির জীবনে নেমে এসেছে লাঞ্ছনা। 

আল্লামা আব্দুর রহিম (রহঃ) এর ভাষায়, “মুসলিম জাতির বর্তমান দুর্বলতা ও অধোগতির মূল কারণও যে এই পরিবার ও পারিবারিক জীবনে সূচিত বিপর্যয়, তা দৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তাশীলের নিকট কিছুমাত্র অস্পষ্ট নয়। তাই জাতীয় পুনর্গঠনের এ সন্ধিক্ষণে পরিবার পুনর্গঠনের গুরুত্ব সর্বপ্রথম স্বীকৃতব্য। মুহূর্তের তরেও ভুলে গেলে চলবে না যে, পরিবার ও পারিবারিক জীবনই হল ইসলামী সমাজের রক্ষাদুর্গ। 

এ দুর্গের অক্ষুণ্ন ও সুরক্ষিত থাকার উপরই একান্তভাবে নির্ভর করে ইসলামী সমাজ ও জাতীয় জীবনের পবিত্রতা, সুস্থতা এবং বলিষ্ঠতা ও স্থিতি । মুসলিম জাতির এ দুর্গ এখনো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়নি, যদিও ঘুণে ধরে একে অন্তঃসারশূন্য করে দিয়েছে অনেকখানি। উপরন্তু পাশ্চাত্যের নাস্তিকতাবাদ, নগ্ন ও নীতিহীন সভ্যতার ঝঞ্জা বায়ু এর উপর প্রতিনিয়ত আঘাত হানছে প্রচণ্ডভাবে। আল্লাহ না করুন, এ দুর্গও যদি চূর্ণ হয়ে যায়, তাহলে মুসলিম জাতির সামষ্টিক অবলুপ্তি অবশ্যম্ভাবী সন্দেহ নেই। ইসলামিক জীবনী।

এ প্রেক্ষিতে এ পর্যায়ের আলোচনা, গবেষণা ও বিচার বিশ্লেষণ যে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ তা বলাই বাহুল্য ।
সুতরাং পৃথিবীতে মুসলিম জাতি তার হারানো গৌরব যদি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তাহলে তাদেরকে এমন ধরনের পারিবারিক ব্যবস্থার গোড়া পত্তন করতে হবে, যে পরিবার হবে এক একটি ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে প্রতিষ্ঠান হতে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে ওমর, আলী, খালেদ, তারিক, মুছার মতো নর কেশরীগণ ।

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন !