দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 42

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 42


স্বামী-স্ত্রী একে অপরের ভূষণ

আধুনিক ইতিহাস- যার ভিত্তি নাস্তিকতাবাদের উপরে স্থাপিত। যে ভাবে রচিত হয়েছে, যা পাঠ করলে পাঠকের মনে এমন ধারণার সৃষ্টি হয় যে, মানুষের সৃষ্টি পশু প্রজাতি হতে। মানুষ আদি যুগে পশুর ন্যায়ই জীবন যাপন করতো। মানুষ ও পশুর মধ্যে কোন প্রভেদ ছিল না। ভোগবাদী মানসিকতা নিয়ে রচিত এ সমস্ত ইতিহাস মানুষকে মানুষ বানানোর পরিবর্তে পশুত্বের স্তরেই নামিয়ে দিয়েছে। 

কোন মর্যাদাই মানুষের জন্যে অবশিষ্ট রাখেনি। অপরদিকে মানুষের তৈরি কিছু সংখ্যক ধর্ম মানুষ জাতির মধ্যে বিভিন্নভাবে বিভেদের স্থায়ী রেখা অঙ্কিত করার চেষ্টা করেছে। সাদা ও কালো মানুষে ব্যবধান করেছে। ভাষাগত কারণে ব্যবধান সৃষ্টি করেছে। ভৌগোলিক কারণে একদল মানুষকে অপর দলের উপরে প্রাধান্য দিয়েছে। আবার নারীকে পুরুষ হতে আলাদা করেছে।
নারীকে পুরুষ হতে ঐ সমস্ত ধর্মও তথাকথিত আদর্শ আলাদা করেই ক্ষান্ত হয়নি। 

পুরুষকে নারীর উপরে বিরাট মর্যাদা দান করেছে। নারীকে করেছে পুরুষের সেবাদাসী। মানুষ হিসেবেই নারীকে স্বীকৃতি দেয়নি। কোন আদর্শ, কোন কোন ধর্ম নারীকে কি দৃষ্টিতে দেখে সে সম্পর্কে পূর্বে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এখন আমরা আলোচনা করবো ইসলাম নারী ও পুরুষ সম্পর্কে কি ধারণা পোষণ করে। পৃথিবী বিখ্যাত ইসলামী দার্শনিক আল্লামা আব্দুর রহিম (রহঃ) নারী সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি কোরআন হাদীস ও বিজ্ঞান দিয়ে অত্যন্ত সারগর্ভ আলোচনা করেছেন তাঁর পরিবার ও পারিবারিক জীবন নামক গ্রন্থে। 

তিনি লিখেছেন, “ইসলামে নারী ও পুরুষ সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করা হয়, তা কুরআন মজীদের নিম্নোদ্ভূত আয়াতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বলা হয়েছেঃ “হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই আল্লাহকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক জীবন্ত সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জুড়ি। আর এই উভয় থেকেই সৃষ্টি করেছেন পুরুষ ও নারী (সৃষ্টি করে) ছড়িয়ে দিয়েছেন।” এ আয়াতে সমগ্র মানবতাকে সম্বোধন করা হয়েছে, তার মধ্যে যেমন রয়েছে পুরুষ, তেমনি নারী। ইসলামিক কাহিনী।

এ উভয় শ্রেণীর মানুষকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, পুরুষ ও নারী একই উৎস থেকে প্রবাহিত মানবতার দুটো স্রোতধারা ।
নারী ও পুরুষ একই জীবন সত্তা থেকে সৃষ্ট, একই বংশ থেকে নিঃসৃত দুনিয়ার এই বিপুল সংখ্যক নারী ও পুরুষ সেই একই সত্তা থেকে উদ্ভূত। নারী আসলে কোন স্বতন্ত্র জীবসত্তা নয়, না পুরুষ। নারীও পুরুষের মতই মানুষ, যেমন মানুষ হচ্ছে এই পুরুষরা। এদের কেউ-ই নিছক জন্তু জানোয়ার নয়। islamic history,

মৌলিকতার দিক দিয়ে এ দুয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। পুরুষের মধ্যে যে মানবীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে, নারীর মধ্যেও তা বিদ্যমান। এ সব দিক দিয়েই উভয়ে উভয়ের একান্তই নিকটবর্তী, অতীব ঘনিষ্ঠ। এজন্যে তাদের যেমন গৌরববোধ করা উচিত, তেমনি নিজেদের সম্মান ও সৌভাগ্যের বিষয় বলেও একে মনে করা ও আন্তরিকভাবে মেনে নেয়া কর্তব্য। প্রথম মানবী হাওয়াকে প্রথম মানব আদম থেকে সৃষ্টি করার মানেই হচ্ছে এই যে, আদম সৃষ্টির মৌলিক উপাদান যা কিছু তাই হচ্ছে হাওয়ারও। 

আয়াতের শেষাংশ থেকে জানা যায়, মূলত নারী পুরুষ জাতির বোন আর পুরুষরা নারী জাতির সহোদর কিংবা বলা যায়, নারী পুরুষেরই অপর অংশ এবং এ দুয়ে মিলে মানবতার এক অভিন্ন অবিভাজ্য সত্তা ।
সূরা আল-হুজুরাত-এ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ “হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদের বিভিন্ন গোত্র ও বংশ শাখায় বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা পরস্পরের পরিচয় লাভ করতে পার। 

তবে একথা নিশ্চিত যে, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে আল্লাহ ভীরু ব্যক্তি হচ্ছে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানার্হ।” এ আয়াত থেকে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে বড় বড় যে কয়টি কথা জানা যায়, তা হচ্ছে এইঃ দুনিয়ার সব মানুষ সকল কালের, সকল দেশের সকল জাতের ও সকল বংশের মানুষ কেবলমাত্র আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে দুনিয়ার সব মানুষ সমান, কেউ ছোট নয়, কেউ বড় নয়, কেউ উচ্চ নয়, কেউ নীচ নয় । 

সৃষ্টিগতভাবে কেউ শরীফ নয়, কেউ নিকৃষ্ট নয়। উভয়ের দেহেই একই পিতামাতার রক্ত প্রবাহিত। দুনিয়ার সব মানুষই একজন পুরুষ একজন নারীর যৌন মিলনের ফল হিসেবে সৃষ্ট। দুনিয়ার এমন কোন পুরুষ নেই, যার সৃষ্টি ও জন্মের ব্যাপারে কোন নারীর প্রত্যক্ষ দান নেই কিংবা কোন নারী এমন নেই, যার জন্মের ব্যাপারে কোন পুরুষের প্রত্যক্ষ যোগ অনুপস্থিত। 

এ কারণে নারী পুরুষ কেউই কারো উপর কোনরূপ মৌলিক শ্রেষ্ঠত্বের দাবী করতে পারে না এবং কেউই অপর কাউকে জন্মগতকারণে হীন, নীচ, নগণ্য ও ক্ষুদ্র বলে ঘৃণা করতেও পারে না। মানবদেহের সংগঠনে পুরুষের সঙ্গে নারীরও যথেষ্ট অংশ শামিল রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে নারীর অংশই বেশি থাকে প্রত্যেকটি মানব শিশুর দেহ সৃষ্টিতে ।

নারী ও পুরুষ যে সবদিক দিয়ে সমান, প্রত্যেকই যে প্রত্যেকের জন্যে একান্তই অপরিহার্য কেউ কাউকে ছাড়া নয়,হতে পারে না, স্পষ্টভাবে জানা যায় নিম্নোক্ত আয়াতদ্বয় থেকেঃ “নিশ্চয়ই আমি নষ্ট করে দেই না তোমাদের মধ্য থেকে কোন আমলকারীর আমলকে, সে পুরুষই হোক আর নারীই হোক, তোমরা পরস্পর পরস্পর থেকে আসলে এক ও অভিন্ন।” 

তাফসীরকারগণ 'তোমরা পরস্পর পরস্পর থেকে, আসলে এক ও অভিন্ন' আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, এ বাক্যটুকু ধারাবাহিক কথার মাঝখানে বলে দেয়া একটি কথা ।
এ থেকে এ কথাই জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এখানে আল্লাহ তাআলা যে বিষয়ের ওয়াদা করেছেন, তাতে পুরুষদের সাথে নারীরাও শামিল। ইসলামিক কাহিনী।

কেননা পরস্পর পরস্পর থেকে হওয়ার মানেই হচ্ছে এই যে, এরা সবাই একই আসল ও মূল থেকে উদ্ভুত এবং তারা পরস্পরের সাথে এমনভাবে জড়িত ও মিলিত যে, এ দুয়ের মাঝে পার্থক্যের প্রাচীর তোলা কোনক্রমে সম্ভব নয়। দ্বীনের দৃষ্টিতে তারা সমান, সেই অনুযায়ী আমল করার দায়িত্বও দুজনার সমান এবং সমানভাবেই সে আমলের সওয়াব পাওয়ার অধিকারী তারা। এক কথায় নারী যেমন পুরুষ থেকে, তেমনি পুরুষ নারী থেকে কিংবা নারী পুরুষ উভয়ই অপর নারী পুরুষ থেকে প্রসূত। 

“মেয়েরা হচ্ছে পুরুষদের পোশাক, আর তোমরা পুরুষরা হচ্ছো মেয়েদের পরিচ্ছদ।" এ আয়াতেও নারী ও পুরুষকে একই পর্যায়ে গণ্য করা হয়েছে এবং উভয়কেই উভয়ের জন্যে 'পোশাক' বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
আয়াতে উল্লেখিত 'লেবাস' শব্দটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। 'লেবাস' মানে পোশাক, যা পরিধান করা হয়, যা মানুষের দেহাবয়ব আবৃত করে রাখে। 

প্রখ্যাত মনীষী রবী ইবনে আনাস বলেছেনঃ স্ত্রীলোক পুরুষদের জন্যে শষ্যাবিশেষ, আর পুরুষ হচ্ছে স্ত্রীলোকদের জন্য লেপ। স্ত্রী পুরুষকে পরস্পরের 'পোশাক' বলার তিনটি কারণ হতে পারে : যে জিনিস মানুষের দোষ ঢেকে দেয়, দোষত্রুটি গোপন করে রাখে, দোষ প্রকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাই হচ্ছে পোশাক। স্বামী-স্ত্রীও পরস্পরের দোষত্রুটি লুকিয়ে রাখে কেউ কারো কোন প্রকারের দোষ দেখতে বা জানতে পারলে তার প্রচার বা প্রকাশ করে না প্রকাশ হতে দেয় না ।

এজন্যে একজনকে অন্যজনের 'পোশাক' বলা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী মিলন শয্যায় আবরণহীন অবস্থায় মিলিত হয়। তাদের দুজনকেই আবৃত রাখে মাত্র একখানা কাপড় । ফলে একজন অন্যজনের পোশাকস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায় ।
এদিক দিয়ে উভয়ের গভীর, নিবিড়তম ও দূরত্বহীন মিলনের দিকের ইঙ্গিত সুষ্পষ্ট। স্ত্রী পুরুষের জন্যে এবং পুরুষ স্ত্রীর জন্যে শান্তিস্বরূপ। 

যেমন অপর এক আয়াতে বলা হয়েছেঃ “এবং তার থেকেই তার জুড়ি বানিয়েছেন যেন তার কাছ থেকে মনের শান্তি ও স্থিতি লাভ করতে পারে।” ইবনে আরাবী এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ “পুরুষের জন্য স্ত্রীরা কাপড় স্বরূপ, একজন অপর জনের পারে, শান্তি ও স্বস্তি লাভ করতে পারে। নিকট খুব সহজেই মিলিত হতে পারে। তার সাহায্যে নিজের লজ্জা ঢাকতে
তিনি আরো বলেছেন যে, এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, “স্বামী-স্ত্রীর কেউ নিজেকে অপর জনের থেকে সম্পর্কহীন করে ও দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না। 

কেননা স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক মিল-মিশ ও দেখা-সাক্ষাত খুব সহজেই সম্পন্ন হতে পারে।” প্রত্যেকেই অপরের সাহায্যে স্বীয় চরিত্র পবিত্র ও নিষ্কলুষ রাখতে পারে। স্ত্রী ছাড়া অপর কারো সামনে বিবস্ত্র হওয়া হারাম বলে এ অসুবিধা থেকেও এই স্ত্রীর সাহায্যেই রেহাই পেতে পারে। রাসূল করীম (স) বলেছেনঃ “মেয়েলোকেরা যে পুরুষদেরই অর্ধাংশ কিংবা সহোদর এতে কোন সন্দেহ নেই।” এথেন্সবাসীরা হচ্ছে সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য প্রাচীনতম জাতি। 

কিন্তু সেখানে নারীকে পরিত্যক্ত দ্রব্য-সামগ্রীর মত মনে করা হত। হাটে বাজারে প্রকাশ্যভাবে নারীর বেচাকেনা হত। শয়তান অপেক্ষাও অধিক ঘৃণিত ছিল সেখানে নারী। ঘরের কাজকর্ম করা এবং সন্তান প্রসব ও লালনপালন ছাড়া অন্য কোন মানবীয় অধিকারই তাদের ছিল না। স্পার্টাতে আইনত একাধিক স্ত্রী গ্রহণ নিষিদ্ধ থাকলেও কার্যত প্রায় প্রত্যেক পুরুষই একাধিক স্ত্রী রাখতো। এমনকি নারীও একাধিক পুরুষের যৌনক্ষুধা নিবৃত্ত করতে সেখানে বাধ্য হত। 

সমাজের কেবল নিম্নস্তরের মেয়েরাই নয়, সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়েরা বৌ'রা পর্যন্ত এ জঘন্য কাজে লিপ্ত থাকতো। রুমানিয়ায়ও এর রেওয়াজ ছিলো ব্যাপকভাবে।
শাসন কর্তৃপক্ষ দেশের সব প্রজা-সাধারণের জন্য একাধিক বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সমাজের কোন লোক পাদ্রী-পুরোহিত কিংবা সমাজনেতা কেউই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আওয়াজ তুলেনি। ইয়াহুদী সমাজে নারীদের অবস্থা ছিল আরো মারাত্মক। 

মদীনার 'ফিতুম' নামক এক ইয়াহুদী বাদশাহ আইন জারী করেছিল : “যে মেয়েকেই বিয়ে দেওয়া হবে, স্বামীর ঘরে যাওয়ার আগে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে এক রাত্রি যাপন করতে হবে।” খৃস্টধর্মে তো নারীকে চরম লাঞ্ছনার নিম্নতম পংকে নিমজ্জিত করে দেয়া হয়েছে। পোলিশ লিখিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, নারীকে চুপচাপ থেকে পূর্ণ আনুগত্য সহকারে শিক্ষালাভ করতে হবে। নারীকে শিক্ষাদানের আমি অনুমতি দেই না, বরং সে চুপচাপ থাকবে। 

কেননা আদমকে প্রথম সৃষ্টি করা হয়েছে, তার পরে হাওয়াকে। আদম প্রথমে ধোঁকা খায়নি, নারীই ধোঁকা খেয়ে গুনাহে লিপ্ত হয়েছে। জনৈক পাদ্রীর মতে নারী হচ্ছে শয়তানের প্রবেশস্থল। তারা আল্লাহর মান-মর্যাদার প্রতিবন্ধক, আল্লাহর প্রতিরূপ, মানুষের পক্ষে তারা বিপজ্জনক। পাদ্রী সন্তান বলেছেনঃ নারী সব অন্যায়ের মূল, তার থেকে দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয় ।
নারী হচ্ছে পুরুষের মনে লালসা উদ্রেককারী, ঘরে ও সমাজে যত অশান্তির সৃষ্টি হয়, সব তারই কারণে। 

এমনকি, নারী কেবল দেহসর্বস্ব, না তার প্রাণ বলতে কিছু আছে, এ প্রশ্নের মীমাংসার জন্যে পঞ্চম খৃস্টাব্দে বড় বড় খৃস্টান পাদ্রীদের এক কনফারেন্স বসেছিল 'মাকুন' নামের এক জায়গায়। ইংরেজদের দেশে আইন ছিল যে, পুরুষ তার স্ত্রীকে বিক্রয় করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এক একটি স্ত্রীর দাম ধরা হয়েছিল অর্ধশিলিং ।

এক ইটালীয়ান স্বামী তার স্ত্রীকে কিস্তি হিসেবে আদায়যোগ্য মূল্যে বিক্রয় করেছিল। পরে ক্রয়কারী যখন কিস্তি বাবদ টাকা দিতে অস্বীকার করে, তখন বিক্রয়কারী স্বামী তাকে হত্যা করে। অষ্টাদশ খৃস্টাব্দের শেষভাগে ফরাসী পার্লামেন্টে মানুষের দাস প্রথার বিরুদ্ধে যে আইন পাস হয়, তার মধ্যে নারীকে গণ্য করা হয়নি। 

কেননা অবিবাহিত নারী সম্পর্কে কোন কিছু করা যেতো না তাদের অনুমতি ছাড়া। গ্রীকদের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা কি ছিল, তা তাদের একটা কথা থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়। সেখানে বলা হতঃ আগুনে জ্বলে গেলে ও সাপে দংশন করলে তার প্রতিবিধান সম্ভব; কিন্তু নারীর দুষ্কৃতির প্রতিবিধান অসম্ভব। পারস্যের ‘মাজদাক' আন্দোলনের মূলেও নারীর প্রতি তীব্র ঘৃণা পূঞ্জিভূত ছিল। 

এ আন্দোলনের প্রভাবাধীন সমাজে নারী পুরুষের লালসা পরিতৃপ্তির হাতিয়ার হয়ে রয়েছে। তাদের মতে দুনিয়ার সব অনিষ্টের মূল উৎস হচ্ছে দুটি। একটি নারী, আর দ্বিতীয়টি ধনসম্পদ। প্রাচীন ভারতে নারীর অবস্থা অন্যান্য সমাজের তুলনায় অধিক নিকৃষ্ট ছিল প্রাচীন ভারতের প্রখ্যাত আইন রচয়িতা মনু মহারাজ নারী সম্পর্কে বলেছেনঃ 'নারী নাবালেগ হোক, যুবতী হোক, আর বৃদ্ধ হোক নিজ ঘরেও স্বাধীনভাবে কোন কাজ করতে পারবে না।'

মিথ্যা কথা বলা নারীর স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য। মিথ্যা বলা, চিন্তা না করে কাজ করা, ধোঁকা প্রতারণা, নির্বুদ্ধিতা, লোভ, পংকিলতা, নির্দয়তা। এ হচ্ছে নারীর স্বভাবগত দোষ।' ইউরোপে এক শতাব্দীকাল পূর্বেও পুরুষগণ নারীদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালাত। পুরুষের অত্যাচার বন্ধ করার মত কোন আইন সেখানে ছিল না। নারী ছিল পুরুষের গোলাম। নারী সেখানে নিজ ইচ্ছায় কোন কাজ করতে পারত না। নিজের উপার্জন করেও নিজের জন্যে তা ব্যয় করতে পারত না। islamic history,

মেয়েরা পিতামাতার সম্পত্তির মত ছিল। তাদের বিক্রয় করে দেয়া হত। নিজেদের পছন্দসই বিয়ে করার কোন অধিকার ছিল না তাদের। প্রাচীন আরব সমাজেও নারীর অবস্থা কিছুমাত্র ভাল ছিল না। তথায় নারীকে অত্যন্ত 'লজ্জার বস্তু' বলে মনে করা হত । কন্যা-সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে পিতামাতা উভয়ই যারপর নাই অসন্তুষ্ট হত ।

পিতা কন্যা সন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করে ফেলত। আর জীবিত রাখলেও তাকে মানবোচিত কোন অধিকারই দেয়া হতো না । নারী যতদিন জীবিত থাকত, ততদিন স্বামীর দাসী হয়ে থাকত। আর স্বামী মরে গেলে তার উত্তরাধিকারীরাই অন্যান্য বিষয় সম্পত্তির সাথে তাদেরও একচ্ছত্র মালিক হয়ে বসত। সৎ-মা পিতার স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী বানানো সে সমাজে কোন লজ্জা বা আপত্তি কাজ ছিল না। বরং তার ব্যাপক প্রচলন ছিল সেখানে। 

সেখানে নারীর পক্ষে কোন মীরাস পাওয়া একেবারেই অসম্ভব ছিল। আধুনিক সভ্যতা নারীমুক্তির নামে প্রাচীন কালের লাঞ্ছনার গহ্বর থেকে উদ্ধার করে নারী স্বাধীনতার অপর এক গভীর বিবরে নিক্ষেপ করেছে। নারী স্বাধীনতার নামে তাকে লাগামহীন জন্তু জানোয়ার পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে। আজ সভ্যতা, সংস্কৃতি ও শিল্পের নামে নারীর লজ্জা শরম আবরু ও পবিত্রতার মহামূল্য সম্পদকে প্রকাশ্য বাজারে নগণ্য পণ্যের মত ক্রয় বিক্রয় করা হচ্ছে। 

পুরুষরা চিন্তার আধুনিকতা উচ্ছলতা ও শিল্পের অগ্রগতি ও বিকাশ সাধনের মোহনীয় নামে নারী সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে ঘরের বাইরে নিয়ে এসেছে এবং ক্লাবে, নাচের আসরে বা অভিনয় মঞ্চে পৌঁছিয়ে নিজেদের পাশবিক লালসার ইন্ধন বানিয়ে নিয়েছে। বস্তুত আধুনিক সভ্যতা নারীর নারীত্বের সমাধির উপর লালসা চরিতার্থতার সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করেছে।
এ সভ্যতা প্রকৃতপক্ষে নারীকে দেয়নি কিছুই, যদিও তার সব অমূল্য সম্পদ সে হরণ করে নিয়েছে নির্মমভাবে। 

বিশ্ব নবীর আবির্ভাবকালে দুনিয়া সব সমাজেই নারীর অবস্থা প্রায় অনুরূপই ছিল। রাসূল করীম (স) এসে মানবতার মুক্তি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার যে বিপ্লবী বাণী শুনিয়েছেন, তাতে যুগান্তকালের পংকিলতা ও পাশবিকতা দূরীভূত হতে শুরু হয়। নারীর প্রতি জুলুম ও অমানুষিক ব্যবহারের প্রবণতা নিঃশেষ হয়ে গেল। মানব সমাজে তার সম্মান ও যথাযোগ্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হলো। জীবনক্ষেত্র তার গুরুত্ব যেমন স্বীকৃত হয়, তেমনি তার যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদাও পুরাপুরি বহাল হল ।

নারী মানবতার পর্যায়ে পুরুষদের সমান বলে গণ্য হল। অধিকার ও দায়িত্বের গুরুত্বের দিক দিয়েও কোন পার্থক্য থাকল না এদের মধ্যে। নারী ও পুরুষ উভয়ই যে বাস্তবিকই ভাই ও বোন, এরূপ সাম্য ও সমতা স্বীকৃত না হলে তা বাস্তবে কখনই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। নারী ও পুরুষ পিতামাতার উত্তরাধিকারের দিক দিয়েও সমান। একটি গাছের মূল কাণ্ড থেকে দুটো শাখা বের হলে যেমন হয়, এও ঠিক তেমনি। 

কাজেই যারা বলে যে, নারী জন্মগতভাবেই খারাপ, পাপের উৎস, পংকিল, তারা সম্পূর্ণ ভুল কথা বলে। কেননা বিবি হাওয়া স্ত্রী পুরুষ সকলেরই আদি মাতা, তার বিশেষ কোন উত্তরাধিকার পেয়ে থাকলে দুনিয়ার স্ত্রী পুরুষ সকলেই তা পেয়েছে। তা কেবল স্ত্রীলোকেরাই পেয়েছে, পুরুষরা পায়নি এমন কথা বলা তো খুবই হাস্যকর। আর বেহেশতে আল্লাহর নিষিদ্ধ গাছের নিকট যাওয়া ও তার ফল খাওয়ায় দোষ কিছু হয়ে থাকলে কুরানের দৃষ্টিতে তা আদম ও হাওয়া দুজনেরই রয়েছে। শুরুতে দুজনকেই নির্দেশ দেয়া হয়েছিলঃ “হে আদম! 

তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং সেখান থেকে তোমরা দুজনে এই গাছটির নিকটেও যাবে না। গেলে তোমরা দুজনই জালিমদের মধ্যে গণ্য হবে।” পরবর্তী কথা থেকেও জানা যায়, আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার কারণে তাঁদের যে ভুল হয়েছিল, তা এক সঙ্গে তাঁদের দুজনেরই হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত তাঁরা দুজনই সেজন্যে আল্লাহর নিকট তওবা করে পাপক্ষালন করেছিলেন। 

একথাই বলা হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াত কয়টিতেঃ “অতঃপর তারা দুজনই যখন সে গাছ আস্বাদ করল, তাদের দুজনেরই লজ্জাস্থান প্রকাশিত হয়ে পড়ল। এবং তারা দুজনই বেহেশতের গাছের পাতা নিজেদের গায়ে লাগিয়ে আবরণ বানাতে থাকে এবং তাদের দুজনের আল্লাহ তাদের দুজনকে ডেকে বললেন : “আমি কি তোমাদের দুজনকেই তোমাদের (সামনের) এই গাছটি সম্পর্কে নিষেধ করিনি? 

আমি বলিনি যে, শয়তান তোমাদের দুজনেরই প্রকাশ্য দুশমন? তখন তারা দুজনে বললঃ হে আমাদের রব, আমরা নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করেছি, এখন তুমি যদি আমাদের ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি রহমত নাযিল না কর, তাহলে আমরা বড়ই ক্ষতিগ্রস্থ হব।” আজো তথাকথিত সভ্য মানুষের মন থেকে নারী সম্পর্কে আপত্তিকর ধারণা বিদায় নেয়নি ।

নারীমুক্তির নামে নারীকে কৌশলে নির্যাতন করা হচ্ছে। ইতিহাসের দু'টো পর্যায়ে নারীরা নির্যাতিত হয়েছে। একবার অন্ধকারাচ্ছন্নমুখতার যুগে। আরেকবার হচ্ছে এই আধুনিক যুগে। অন্ধকার যুগে নারীর উপরে চলতো বিভিন্ন কায়দায় নির্যাতন আর আধুনিক যুগে নারী স্বাধীনতার নামে নারী মুক্তির নামে নারীদেরকে তাদের স্বীয় মান সম্মান ও উচ্চ আসন থেকে টেনে নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। তাদের মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। 

ইসলামী বিপ্লব পূর্ব ইরানে নারী সম্পর্কে। প্রবাদবাদ প্রচলিত ছিল, “ নারী হলো এক আপদ তবে কোন পুরুষ এই আপদহীন নয়।” আজোও আর্জেন্টিনায় প্রচলিত আছে, “একটি ভালো দরজার যেমন কাঠ দরকার তেমনি নারীর জন্যে কাষ্ঠদণ্ড প্রয়োজন।” অর্থাৎ নারীকে পশুর ন্যায় পিটানোর জন্যে লাঠি একান্ত প্রয়োজন। ভারতে প্রবাদ বাক্য আছে, নারী হলো নরকের প্রধান প্রবেশ পথ।” আমেরিকায় প্রবাদ প্রচলিত, “যেখানেই নারী সেখানেই সমস্যা।” 

জার্মানীতে বলা হয়, “ যখনই কোন নারী মারা যায় তখনই পৃথিবীর সমস্যা কিছুটা কমে যায়।” ফ্রান্সে বলা হয়, “নারী হলো পুরুষের সাবান বিশেষ।” আয়ারল্যাণ্ডে বলা হয়, “নারী শয়তানকেও প্রতারিত করে।” রাশিয়ায় বলা হয়, “মুরগীর বাচ্চা যেমন মুরগী চিনতে পারে না তেমনি নারীকে চিনতে পারে না কোন পুরুষ। নারীর হৃদয় অন্ধকার জঙ্গলের মতো।”. 

অস্ট্রেলিয়ায় পশুর পাশাপাশি নারীকে দিয়ে বোঝাবহন করা হতো। খাদ্যের অভাব দেখা দিলে নারীকে হত্যা করে ভক্ষণ করা হতো। ১৯১৯ সনের পূর্ব পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় নারীগণ কোন প্রকার সম্পদের অধিকার হয়নি। ১৯০৭ সন পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডেও ঐ একই অবস্থা ছিল নারীর ক্ষেত্রে। বৃটেনে ১৮৭০ সনে ও জার্মানে ১৯০০ সনের পূর্ব পর্যন্ত নারীর কোন অধিকার ছিল না। অথচ ইসলাম পৃথিবীতে আগমন করেই নারীর মর্যাদা প্রদান করেছে।

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন !