দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 4

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 4

ফিরিশতাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন

মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন মাটি, পানি, আগুন ও বাতাসের সমন্বয়ে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। জ্বিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুনের শিখা নিয়ে। আর ফিরিশতাগণকে সৃষ্টি করেছেন নূর দিয়ে। আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে ফিরিশতাদের সৃষ্টি একটু ব্যতিজ ধের্মী। কারণ ফিরিশতারা কোন পুরুষও নন আর মহিলাও নন। 

এনাদের পানাহার, তন্দ্রা, নিদ্রা কিছুই নেই। সর্বদা এনারা মহান আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকেন এবং আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকেন। এনাদের আকৃতি-প্রকৃতি কোন মানুষেরই জানা নেই, এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন— “মহান আল্লাহ্ তা'আলা ফিরিশতাগণকে দু'তিন, চার ডানাবিশিষ্টভাবে সৃষ্টি করে স্বীয় সংবাদ বাহকরূপে নিয়োজিত করেছেন। আবার যখন ইচ্ছা করেন তখন তাদের আকৃতি-প্রকৃতি নিজ ইচ্ছায় পরিবর্তন করে থাকেন।”

ফিরিশতাগণের মোট সংখ্যা কত তা একমাত্র মহান আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত আর কেউ জানে না। দারিত্ব এবং মর্যাদার দিক দিয়ে সকল ফিরিশতা এক সমান নয়। ফিরিশতাগণের মধ্যে চারজন ফিরিশতাই সর্বপ্রধান। যেমন— ১। হযরত জিব্রাঈল (আঃ) ২। হযরত মীকাঈল (আঃ) ৩। হযরত আবরাঈল (আঃ) ও ৪। হযরত ইস্রাফীল (আঃ) । নিম্নে এনাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা
১। হযরত জিব্রাঈল (আঃ) : ইনি এত দ্রুতগতি সম্পন্ন যে, চোখের পরকে শত-সহস্র মাইল রাস্তা অতিক্রম করতে পারেন। 

মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে নবী ও রাসূলগণের নিকট ওহীসমূহ পৌছায়ে দেয়াই ছিল তাঁর কাজ। আমাদের প্রিয়নবী হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ)-এ নিকট তিনি অসংখ্যবার আল্লাহর নির্দেশে এসেছিলেন। এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীস শরীফ হতে জানা যায়, হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর একাত্ত পরিচিত হযরত দাহিয়্যাতুল কালবী নামক সাহাবীর আকৃতিতেই বেশির ভাগ আগমন করেছেন। 

বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসেই তিনি বেশির ভাগ রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর দরবারে আসা-যাওয়া করতেন। হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায়, পবিত্র রমজান মাসে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) রাসূলে কারীম (সাঃ)-কে এক খতম কোরআন মজিদ পাঠ করে শুনাতেন। আর এক খতম রাসূলে কারীম (সাঃ) জিব্রাঈল (আঃ)-কে পাঠ করে শুনাতেন ।

হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর নিকট হযরত জিব্রাঈল (আঃ) যে ওহী নিয়ে আসতেন তৎকালীন কাফির মুশরিকরা এ কথা বিশ্বাস করত না; বরং তারাও এ ব্যাপারে নানারূপ ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত। কাফিরদের এরূপ- উক্তির জবাবে মহান আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কোরআনে এর সত্যতা সম্পর্কে ঘোষণা করেন—“হে কাফির অবিশ্বাসীগণ! পবিত্র কোরআন মাজীদকে তোমরা রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর মনগড়া কথা বলে মনে করে থাক। 

প্রকৃতপক্ষে এটি রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর মনগড়া কথা নয়; বরং তা একজন মহা উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন দূতের কথা। উক্ত দূত হযরত জিব্রাঈল (আঃ) অত্যন্ত শক্তিশালী । যিনি মহান আল্লাহর নির্দেশে 'আরশে আযীম হতে বাণীসমূহ নিয়ে এসে রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর নিকট পৌছায়ে দিয়ে থাকেন।”

২। হযরত মীকাঈল (আঃ) : ইনি মহান আল্লাহর পক্ষ হতে দু'টি গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। যেমন—(ক) তিনি আকাশ হতে মহান আল্লাহ্র আদেশক্রমে মেঘসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং যখন যেখানে মেঘ-বৃষ্টি, ঝড় ইত্যাদি হওয়া দরকার মহান আল্লাহ্র নির্দেশে সে কাজ সমাধা করেন। (খ) মহান আল্লাহ্ তা'আলা কর্তৃক নির্ধারিত রিযিকসমূহ সৃষ্ট জীবের মধ্যে বণ্টন করে থাকেন ।

৩। হযরত ‘আযরাঈল (আঃ) : হযরত 'আযরাঈল (আঃ) মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতে আদিষ্ট হয়ে যাবতীয় সৃষ্টিকুলের রূহ কবজ করার দ্বায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। তিনি মহান আল্লাহ্ রাব্বুল 'আলামীনের 'আরশের নিচে সিদরাতুল মুনতাহা নামক একটি বরই (কুল) গাছের নিচে বসে আছেন, ঐ গাছের পাতায় সমস্ত প্রাণীদের নাম-ঠিকানা সবকিছুই সুন্দরভাবে লেখা রয়েছে। 

কোন প্রাণীর হায়াত যখন শেষ হয়ে যায়, তখন ঐ বরই গাছের একটি পাতা হযরত আযরাঈল (আঃ)-এর সম্মুখে ঝরে পড়ে। তখন সে নাম-ঠিকানা অনুযায়ী যে প্রাণীর রূহ যেভাবে কাজ করার কথা লেখা থাকবে, ঠিক সেভাবেই কবজ করে থাকেন।
৪। হযরত ইস্রাফীল (আঃ) : ইনি মহান আল্লাহর নির্দেশে সিঙ্গা মুখে নিয়ে অপেক্ষা করছেন এবং নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে উক্ত সিঙ্গায় ফুৎকার দিলেই কিয়ামাতের ধ্বংসলীলা আরম্ভ হয়ে যাবে।

এছাড়া আরও কয়েকজন ফিরিশ্তার দায়িত্ব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল ঃ
(ক) কিরামান কাতিবীন বা সম্মানিত লিখকগণ : মানব জাতি এবং জ্বিন জাতিসমূহের দৈনন্দিন জীবনের সকল প্রকার কর্মকাণ্ড লেখার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ হতে একদল ফিরিশতা নিযুক্ত আছেন। এসব ফিরিশতাদ্বয় মানব ও জ্বিন জাতির প্রত্যেকের দু'কাঁধে নিয়োজিত হয়ে তাদের দৈনন্দিন জীবনের পাপ-পুণ্যসমূহ লিপিবদ্ধ করে রাখেন, যা পরবর্তীতে হাশরের মাঠে মানুষ তাদের কৃতকর্মের ফলাফলরূপে দেখতে
পাবে।

(খ) মুনকার এবং নাকীর : এ দু'জন সম্মানিত ফিরিশতা মহান আল্লাহর পক্ষ হতে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে কবরবাসীকে প্রশ্নোত্তর করবেন। যে সকল কবরবাসী মুর্দাগণ তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবেন তাদের আত্মাকে “ইল্লীয়্যীন” বা সুখময় স্থানে রাখা হবে। আর যারা তাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে না তাদের আত্মাকে সাত তবক জমিনের নিচে “সিজ্জীন” বা দুঃখময় স্থানে রাখা হবে এবং এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত
থাকবে।

(গ) রুমাত ফিরিশতা ঃ উল্লেখ্য যে, মুনকার ও নাকীর ফিরিশতাদ্বয় কবরে প্রশ্নোত্তর করার জন্য আসার পূর্বে কবরবাসির নিকট “রুমাত” নামক একজন ফিরিশতা আসবেন এ ব্যাপারে হাদীসে উল্লেখ আছে— “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন— একদা রাসূলে কারীম (সাঃ) আমাকে ডেকে বললেন, হে ইবনে সালাম! 

জেনে রেখ কবরে মুনকার-নাকীর নামক ফিরিশ্তাদ্বয়ের পূর্বে “রুমাত” নামক একজন ফিরিশ্তা আসবেন যার চেহারা হবে খুবই আলোকোজ্জ্বল । তিনি কবরে এসে মুর্দাকে উঠায়ে বসায়ে বলবেন, “হে কবরবাসী! তুমি তোমার জীবনের যাবতীয় কর্মের হিসাব লিপিবদ্ধ কর।” তখন কবরবাসী অজুহাত পেশ করে বলবে যে, কলম কোথায়? 

কাগজ কোথায় যে আমি এসব লিখে দেব? তখন সে “রুমাত” নামক ফিরিশ্তা
বলবেন, তোমার কাফনের কাপড়কে কাগজ, হাতের আঙ্গুলকে কলম এবং মুখের থুথুকে কালিরূপে ব্যবহার কর। আদিষ্ট হয়ে কবরবাসী তার জীবনের সকল পুণ্য কার্যাবলী লিপিবদ্ধ করবে কিন্তু পাপের কথা সে লিখতে চাইবে না। এরপর এক পর্যায়ে ফিরিশ্তার ধমকে এবং গুরুজের আঘাতে সে কবরবাসী নিজের জীবনের গুনাহরাশি সমূহও লিখবে ।

এরপর তাকে বলা হবে, হে কবরবাসী! তোমার হাতের সীল দ্বারা এতে মোহরাংকিত করে দাও। নির্দেশ প্রাপ্ত হয়ে কবরবাসী তাই করবে। এরপর উক্ত কাপড়খানি মুর্দার গলায় পেঁচিয়ে দিয়ে উক্ত “রুমাত” নামক ফিরিশ্তা চলে যাবেন। এরপর প্রশ্ন-উত্তরকল্পে মুনকার এবং নাকীর নামক ফিরিশ্তাদ্বয় কবরে আসবেন ।

রিদ্বওয়ান ফিরিশ্তা : বেহেশ্তবাসীদের যাবতীয় সেবার কাজে ইনি নিয়োজিত রয়েছেন। ইনি বেহেশতের অন্যান্য ফিরিশতাগণের প্রধান হিসেবে যাবতীয় কাজের সমাধান দেবেন ।
মালেক ফিরিশ্তা : ইনি দোযখের যাবতীয় শাস্তি দেয়ার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন । দোযখের অন্যান্য ফিরিস্তাগণের প্রধান হিসেবে তিনি যাবতীয় শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দেবেন।

পূর্বেই বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ্র অগণিত, অসংখ্য ফিরিশ্তা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত রয়েছেন যাদের নাম কিংবা সংখ্যা কারও জানা নেই। সুতরাং উল্লিখিত গুণাবলীর সাথে সম্পৃক্ত ফিরিস্তাগণের প্রতিও আমাদেরকে অবশ্যই ঈমান রাখতে হবে। কারণ ফিরিশ্তাগণের প্রতি ঈমান স্থাপন করাও প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ঈমানের অঙ্গ হিসেবে ফরয।

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন