দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 5

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 5

আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস

মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ পাক দুনিয়ার আদি মানব হযরত আদম (আঃ) হতে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত অসংখ্য নবী ও রাসূলগণকে মানব জাতির হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে যেসব বিধানসমূহ দান করেছেন সেগুলোকে আসমানী কিতাব বলে । পবিত্র হাদীস শরীফের বর্ণনায় সেসব আসমানী কিতাবসমূহের সংখ্যা ১০৪ বানা বলে প্রতীয়মান হয়। 

এসবের মধ্যে ৪ খানা কিতাব ও বাকি ১০০ খানা সহীফা বলে প্রসিদ্ধ। এসব আসমানী কিতাবসমূহের মূল বক্তব্য ছিল মহান আল্লাহর একত্ববাদ এবং উল্লিখিত বিধি-বিধানসমূহ মানুষ তাদের স্বীয় বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটায়ে ইহকালীন জীবনে শান্তি ও পরকালীন জীবনে মুক্তি লাভের পথ সুগম করা। 

সুতরাং যারা এসব বিধি-বিধানসমূহ সঠিকভাবে বিশ্বাস করেছে তাদের জন্য রয়েছে চির শান্তিময় রমনীয় স্থান বেহেশত উদ্যান, আর যারা এগুলোকে অবিশ্বাস করেছে তাদের জন্য রয়েছে ভীষণ কষ্টদায়ক শান্তির স্থান দোযখের আগুন আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি তৎকালীন অমুসলিম কাফির সম্প্রদায়ের লোকেরা সন্দেহ প্রকাশ করে এগুলোকে যাদুকরের যাদুক্রিয়া বলে অভিহিত করত। 

তখন মহান আল্লাহ্ তাআলা ঐ সকল অমুসলিম কাফিরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ করে ঘোষণা দিলেন – “কোরআনের সূরাসমূহের মত তোমরা নিজেরাও দশটি সূরা রচনা করে হাজির কর এবং এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ তাআলাকে ছাড়া তোমাদের অন্য কোন সহযোগীকে ডেকে নাও।” কিন্তু তৎকালীন আরবের কোন লোক এ চ্যালেঞ্জ মেনে নেয়ার সাহস পেল না।

তখন মহান আল্লাহ পুনরায় ঘোষণা করলেন—“হে অবিশ্বাসী কাফির সম্প্রদায়গণ! আমার বান্দা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর আমি যে বাণীসমূহ নাযিল করেছি এতে যদি তোমাদের কোনরূপ সন্দেহ থাকে, তবে তোমরা কোরআনের মত একটি সূরা রচনা কর। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) উম্মি হয়ে যদি এমন একটি গ্রন্থ রচনা করতে পারেন বলে তোমাদের ধারণা হয়ে থাকে, তাহলে তোমরাও অনুরূপ একটি সূরা রচনা করে দেখাও দেখি!

তোমরাত সকলেই নামকরা বড় বড় কবি-সাহিত্যিক। দশটি সূরার চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম—দশটির প্রয়োজন নেই, একটি মাত্র সূরা রচনা করে দেখাও!” এবারও আরবের কোন লোক অগ্রসর হবার সাহস পেল না ।

তখন মহান আল্লাহ্ পুনরায় ঘোষণা দিলেন—“যদি তাদের দাবীসমূহ সত্য হয় তাহলে তারা কোরআনের কোন বাক্যের সমতুল্য একটি বাক্য মাত্র রচনা করুক।”দোযখের আযাব বেহেশতের শান্তি!


উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ্র এতসব ঘোষণায় সাড়া দিয়ে তৎকালীন মক্কা-মদীনার অবিশ্বাসী কাফির সম্প্রদায়ের পণ্ডিতরা একটি সূরা তো দূরের কথা, একটি বাক্য পর্যন্ত রচনা করতে পারেনি। অথচ তারা সকলেই তৎকালীন সময়ের খ্যাতিমান পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। শেষ পর্যন্ত কাফিররা এ কোরআনের উপর বিশ্বাস না করলেও একথা স্বীকার করেছে যে, এ কোরআন কোন মানব রচিত গ্রন্থ নয় বরং এটি ঐশী বাণী। 
 
মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতে প্রেরিত ১০৪ খানা কিতাবের মধ্যে পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে, ১০০ খানা সহীফা বা ছোট কিতাব। বাকী ৪ খানা বড় কিতাব। নিম্নে এগুলো কোন নবীর উপর নাযিল হয়েছিল তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হল
১০০ খানা সহিফা যথাক্রমে— হযরত আদম (আঃ)-এর উপর দশখানা । 

হযরত শীস (আঃ)-এর উপর পঞ্চাশ খানা । হযরত ইদ্রীস (আঃ) এর উপর ত্রিশখানা । হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর উপর দশখানা । ৪ খানা কিতাব যথাক্রমে—
১। তাওরাত : এ আসমানী কিতাবখানা হযরত মূসা (আঃ)-এর উপর পরিপূর্ণভাবে লিখিত আকারে, সিনাই নামক পর্বতে নাযিল হয়েছিল। হযরত মূসা (আঃ)-এর অনুসারীগণকে বণী ইসরাঈল সম্প্রদায় বলা হয় ৷

২। যাবুর ঃ এ আসমানী কিতাবখানা নাযিল হয়েছিল তৎকালীন সময়ের বাদশাহ এবং নবী হযরত দাউদ (আঃ)-এর উপর। পবিত্র হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে—হযরত দাউদ (আঃ) এত সুন্দর কন্ঠের অধিকারী ছিলেন যে, যাবূর কিতাব যখন তিনি তিলাওয়াত করতেন তখন পশু-পাখি, জ্বিন-ইনসান এমনকি সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত তাঁর তিলাওয়াত শুনার জন্য অধির আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করত ।

৩। ইঞ্জীল : এ আসমানী কিতাবখানা হযরত ঈসা রুহুল্লাহ (আঃ)-এর উপর নযিল হয়েছিল। তাঁর অনুসারী সম্প্রদায়কে ঈসায়ী বা খ্রিস্টান বলে আখ্যায়িত করা হয় ।

৪ । কোরআন : এ আসমানী কিতাবখানা সর্বশেষ নবী ও রাসূলগণের সর্দার বা সাইয়্যেদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর নাযিল হয়েছিল। এটি সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব বলে খ্যাত। এ পবিত্র কারআন মাজীদের মধ্যে উল্লেখিত ১০০ খানা সহীফা এবং অন্য তিনখানা কিতাবের মূল বিষয়বস্তুসমূহ বিদ্যমান। এ কিতাবখানা বিশ্বের সকল মানুষের জন্য তাদের সকল প্রকার বিধি-বিধান এবং সকল সমস্যার সঠিক সমাধান দানকারী একটি নির্ভরযোগ্য কিতাব। 

যেসব লোক এ কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এর সর্বময় বিধি-বিধান অনুযায়ী নিজেদের ব্যক্তি জীবন, সামাজিক ও পারিবারিক সর্বক্ষেত্রে পরিচালিত করবে সে সব লোক ইহকালীন জীবনে পরম সুখ-শান্তি এবং পরকালীন জীবনে অনাবিল শান্তির নীড় সুখময় স্থান বেহেশ্ত উদ্যান লাভ করে ধন্য হতে পারবে। মানব জাতির ইসলামী জীবন-বিধান এ কিতাবের উপরই নির্ভরশীল ।

সকল প্রকার আসমানী কিতাবসমূহকে মহান আল্লাহর বাণী হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে। কিন্তু মহা পবিত্র কোরআন মজীদ অবতীর্ণ হবার পর পূর্ববর্তী সকল কিতাবসমূহের হুকুমসমূহ পালনবিধি রহিত হয়ে গেছে। এ ছাড়া তাওরাত ও ইনজীল কিতাবের অনুসারীগণ পরবর্তীতে তাদের স্বপক্ষীয় করে তোলার জন্য কিছু কিছু আয়াত পরিবর্তন করেছিল। 

কিন্তু মহান আল্লাহ্র অশেষ অনুগ্রহে পবিত্র কোরআনকে কেউ পরিবর্তন করতে পারেনি আর কিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করেও তা পারবে না। কেননা এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেন— “নিশ্চয়ই এ কিতাবের বাণীসমূহ আমি নাযিল করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষণ করব।” সুতরাং যার হিফাযতের দায়িত্ব মহান আল্লাহ্র হাতে ন্যাস্ত তাতে কোনরূপ পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই ।

উল্লিখিত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হল, আসমানী কিতাবসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানী পরিচায়ক হিসেবে প্রতিটি মুসলমানের জন্য একান্ত ফরয।

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন