দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 6

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 6

রাসূলগণের উপর বিশ্বাস

মানুষ সৃষ্টির সেরা শ্রেষ্ঠ জীব। কিন্তু এ মানব গোষ্ঠীর প্রকাশ্য শত্রু হল বিতাড়িত শয়তান। মানুষ মহান আল্লাহ্র ‘ইবাদত-বন্দেগী করবে এটাই সর্বকাল ও সর্বযুগের নিয়ম। কিন্তু চিরশত্রু শয়তান তা কোনমতেই হতে দেবে না। সুতরাং সে বিভিন্নরূপ ধারণ করে এবং প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করে। islamic history.

মানুষ যাতে বিতাড়িত শয়তানের প্রলোভনে পড়তে না পারে, সেজন্য মহান আল্লাহ তা'আলা মানুষের হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। নবী-রাসূলগণ মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতে কিতাবপ্রাপ্ত হয়ে সে অনুযায়ী লোকদেরকে চলার জন্য নির্দেশ দিতেন। ঐ কিতাবসমূহের মধ্যে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সকল প্রকার বিধি-বিধানসমূহ লিপিবদ্ধ ছিল। নবী-রাসূলগণের চরিত্র ছিল অত্যন্ত নিখুঁত যা সাধারণ মানুষের জন্য অনুকরণীয় ছিল। 

তাঁদের মন-মানসিকতা ছিল সাধারণ মানুষের জন্য খুবই উদার এবং দয়ায় পরিপূর্ণ। যার কারণে নবী-রাসূলগণ অনেক নির্যাতিত হয়েও মানুষের কল্যাণ এবং তাদের হিদায়াতের জন্য দোয়া করে গেছেন পয়গাম্বরগণের সকলেই মর্যাদার দিক দিয়ে সমান নন। 

কারো কারো মর্যাদা কারো কারো চেয়ে বেশি ছিল। তবে সবচেয়ে মর্যাদাশালী হলেন আমাদের প্রিয় নবী সাইয়্যেদুল মুরছালীন, যার উপাধি খাতামুন্‌নাবিয়্যীন । তিনিই দুনিয়ার শেষ নবী, তাঁর পরে আর কোন নবী এ দুনিয়াতে আগমন করবেন না। 

কারণ কিয়ামত পর্যন্ত যত লোকজন আসবেন তাদের সকলেরও তিনি নবী। তিনি মহান আল্লাহ্র বাণী পবিত্র কোরআনে উল্লিখিত বাণীসমূহ নিজ জীবনে প্রতিপালন করে এবং সে অনুযায়ী মানুষ আল্লাহর আদেশসমূহ পালন করার সুবিধার জন্য স্বীয় হাদীসের মাধ্যমে কিয়ামত, হাশর-নশর, বেহেস্ত-দোযখ ইত্যাদি সকল বিষয়েরই বর্ণনা করে গেছেন। সুতরাং তাঁর অবর্তমানে নায়েবে রাসূলগণ এসব বিষয়াবলি সম্পর্কে লোকদেরকে পথ প্রদর্শন করবেন ।

হযরত আদম (আঃ) হতে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে একলাখ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দু'লাখ চব্বিশ হাজার পয়গাম্বর অবতীর্ণ হয়েছিলেন। 

নবী-রাসূলগণের মধ্যে বিখ্যাত কয়েকজন নবী-রাসূলগণ যথাক্রমে ঃ হযরত আদম (আঃ), হযরত শীষ (আঃ), হযরত নূহ (আঃ), হযরত ইদ্রিস (আঃ), হযরত ইব্রাহীম (আঃ), হযরত ইসমাইল (আঃ), হযরত ইসহাক (আঃ), হযরত ইয়াকুব (আঃ), হযরত ইউসুফ (আঃ), হযরত দাউদ (আঃ), হযরত সুলায়মান (আঃ), হযরত সালেহ (আঃ), হযরত লূত (আঃ), হযরত শুআইব (আঃ), হযরত মূসা (আঃ), হযরত হারুন (আঃ), হযরত উযায়ের (আঃ), হযরত যাকারিয়া (আঃ), হযরত ইয়াহ্ইয়া (আঃ), হযরত হুদ (আঃ), হযরত ইউনুস (আঃ), হযরত ইলিয়াস (আঃ), হযরত জুলকিফল (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)।

উল্লেখ্য যে, সকল নবীগণই মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতে এসেছেন তাই সকল নবীগণের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা ইসলামী পরিচায়ক হিসেবে সকল মুসলমানের জন্য একান্ত ফরয।

কিয়ামাতের প্রতি বিশ্বাস

কিয়ামত শব্দের অর্থ মহাপ্রলয়ের দিন । সেদিন একমাত্র মহান আল্লাহ্র অস্তিত্ব ছাড়া আর কিছুই বাকি থাকবে না। সেদিনের উপর যার বিশ্বাস নেই, সে অমুসলিম, বেঈমান, কাফির। মহান আল্লাহ্ মানব জাতিকে সৃষ্টি করার পর তাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার জন্য একটা সুন্দর বিধি-বিধান দান করেছেন । 

সে অনুযায়ী মানুষ নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করছে কি না, সে ব্যাপারে পূর্বেই সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, শেষ বিচারের দিন তোমাদের যাবতীয় কাজ-কর্মের হিসাব-নিকাশ নেয়া হবে। 

এরপর শেষ বিচারের দিন মানুষ স্বীয় কাজকর্মের হিসাব নিকাশ দান করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে যাবে । যারা মহান আল্লাহ্র বিধান অনুযায়ী জগতে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করেছে সেদিন তারা মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতে পুরস্কৃত হবে। 

অর্থাৎ চিরস্থায়ী সুখময় স্থান অমরপুরী বেহেশত উদ্যানের অধিবাসী হবে। আর যারা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ্র বিধান অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করেনি, তারা লাঞ্ছনা, অপমান এবং আল্লাহর পক্ষ হতে তিরস্কৃত হয়ে দুঃখময় স্থান জাহান্নামে নিপতিত হবে। 

আদি মানব হযরত আদম (আঃ) হতে আরম্ভ করে দুনিয়ার সর্বশেষ যে শিশুটি এসেছে, এদের প্রত্যেক প্রাণীকেই সেদিন অর্থাৎ হাশরের মাঠে মহান আল্লাহ্ তা'আলার সম্মুখে উপস্থিত হয়ে নিজেদের দুনিয়ার জীবনের সকল কাজ-কর্মের হিসাব-নিকাশ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পেশ করতে হবে। সেদিন নেক্‌কার বান্দাদের ডানহাতে ‘আমলনামা থাকবে আর গুনাহ্গার লোকদের বাম হাতে তাদের আমলনামা থাকবে। 

এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআন মজিদে ঘোষণা করেন—“যে ব্যক্তিকে হাশরের দিন তার ডান হাতে ‘আমলনামা দেয়া হবে ‘আমলনামা হাতে পেয়ে সে ব্যক্তি লোকদেরকে বলতে থাকবে, এ দেখ আমার 'আমলনামা। তোমরা এটা পাঠ করে দেখ! দুনিয়ার জীবনে আমার বিশ্বাস ছিল যে, আমি নিশ্চয়ই হিসাব-নিকাশের সম্মুখীন হব। আর সে কথা স্মরণ করেই আমি আমার জীবনকে পরিচালিত করেছি। সে ব্যক্তি ঐ দিন পরম আনন্দে থাকবে। 

পরিশেষে সে অমরপুরী বেহেশ্ত উদ্যানের অধিবাসী হবে।” অপরদিকে যাদের ‘আমলনামা বাম হাতে দেয়া হবে তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কোরআন মজিদের অন্য আয়াতে ঘোষণা করেন—“যে ব্যক্তিকে তার ‘আমলনামা বাম হাতে দেয়া হবে সে বলবে, আমাকে 'আমলনামা না দিলে খুবই ভালো হত। জানি না হিসাব-নিকাশে আমার পরিণাম কি দাঁড়াবে! সেদিন প্রত্যেকেই নতজানু হয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। 

সকলকেই তাদের স্বীয় ‘আমলনামা দেখার জন্য ডাকা হবে। মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতে তাদেরকে তখন বলা হবে, দুনিয়ার জীবনে তোমরা যা করেছিলে আজ তার বিনিময় পাবে। এ দেখ আমার হাতে তোমাদের দুনিয়াবী জীবনের কর্মফলসমূহের খতিয়ানের কপি। এ খতিয়ানেই লিপিবদ্ধ করা আছে তোমাদের দুনিয়াবী জীবনের সকল কর্মকাণ্ড । 

তোমরা যখনই যে কাজ করেছিলে সাথে সাথে তা আমি সম্মানিত ফিরিশ্তাগণের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করিয়ে রেখেছি। পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান দীর্ঘ সে দিনটিতে মানুষের দুঃখ-কষ্টের কোন অন্ত থাকবে না। সকলেই নিজেদের মুক্তির চিন্তায় পেরেশান থাকবে। 

আদরের স্ত্রী-পুত্র, কন্যা, ভাই-বোন, মা-বাপ, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সেদিন কেউ কারও কোন পরিচয় দেবে না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআন মজিদে ঘোষণা দিয়ে বলেন—“হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। আর ঐদিনকে ভয় কর যেদিন পিতা-পুত্রের কোন উপকারে আসবে না ।”

সেদিন মানুষের ‘আমলনামার তারতম্য অনুসারে তাদের মধ্যে ব্যবধান হবে। কেউ সুখ-শান্তিতে থাকবে আবার কেউ অশান্তির চরম শিখরে থাকবে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদে উল্লেখ হয়েছে—“কতকের চেহারা সেদিন হাসি-খুশি থাকবে, আবার কতকের চেহারা থাকবে মলিন ।” বদকার দোযখী লোকদের থেকে সেদিন বেহেশতের অধিবাসীগণকে আলাদা করে রাখা হবে। 

সেদিন মানুষের হাত, পা অর্থাৎ পঞ্চইন্দ্রিয় দ্বারা যেসব কাজ-কর্ম সে দুনিয়ায় জীবিত থাকাকালে করেছিল তারাই তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদে উল্লেখ আছে— “ঐদিন মুখের জবান বন্ধ করে দেয়া হবে এবং হাতসমূহ কথা বলবে এবং পাসমূহ সাক্ষ্য দেবে, সে ব্যক্তি ইহকালীন জীবনে যেসব কাজকর্ম করেছে।”

হঠাৎ করেই কিয়ামত আরম্ভ হবে না। এর পূর্বে কিছু কিছু ছোট-বড় ঘটনা ঘটবে যাতে মানুষ বুঝতে পারবে যে, কিয়ামত অতি নিকটবর্তী। হাদীসের আলোকে নিম্নে কিয়ামতের ছোট-বড় কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা করা
হল ।

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন