দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 40

বেহেস্ত ও দোযখের বিবরণ

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 40

বেহেশতের পরিচয়

ইহকালীন জীবনে যে সকল লোক মহান আল্লাহ্ ও তদীয় রাসূলের নির্দেশিত পথে পরিচালিত হয়েছে, মৃত্যুর পর তথা পরকালীন জীবনে মহান আল্লাহ্ দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে স্বীয় কর্মফলের প্রতিদান হিসেবে পুরস্কার স্বরূপ, যে স্থানটি দান করবেন ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় তাকে বেহেশ্ত বলে । বেহেস্ত ফারসী শব্দ আরবি পরিভাষায় একে বলা হয় জান্নাত আর বাংলাতে এর অর্থ হল সুসজ্জিত বাগান। অতএব বেহেশতের পরিচয়, নমুনা ও নিআমাত সমূহের বর্ণনা দেয়া কোন লোকের পক্ষেই সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীস গ্রন্থসমূহে উল্লেখ আছে, বেহেশতের নি'আমাতসমূহের যে সমাহার রয়েছে, এসবের কল্পনাও করতে পারেনি, চোখেও দেখেনি। তবে পবিত্র কোরআন ও হাদীসের বর্ণনায়ই যা কিছু শুনে অবগত। বেহেশতের বর্ণনা দিতে গিয়ে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতে মহান আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেন— “সে বেহেশ্তসমূহের তলদেশ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে। সেখানে তারা যা পেতে ইচ্ছা করবে তাই পাবে এবং বেহেশতের অধিবাসীগণ সেখানে চিরস্থায়ী ভাবে বসবাস করবে।”

বেহেশতের মধ্যে যাকে, সর্বনিম্নতম বেহেশ্তটি দান করা হবে এর পরিধি হবে দশটি দুনিয়ার সমান এবং ৮০ হাজার সেবক তাকে দান করা হবে। সেখানে সে ব্যক্তি পরম আনন্দে বসবাস করবে। বেহেশতের হুর-গেলমানদের রূপ-লাবন্যের ব্যাপরে বর্ণিত আছে-যদি ঐ সকল হুর-গেলমানরা দুনিয়ার জমিনে আড়ালে থেকে সামান্য একটু উঁকি দেয় তাহলে চন্দ্র-সূর্যের আলো সে জ্যোতিতে মলিন হয়ে যাবে। বেহেশতের আবহাওয়া কোনরূপ উত্তপ্ত গরমও নয়, আবার একেবারে শীতলও নয় সেখানকার আবহাওয়াসমূহ হবে মানান মত এবং স্বাস্থ্য সম্মত ।

বেহেশতের সংখ্যা : সুখ-শান্তি ও কৃতকর্মের ফলাফল অনুসারে বেহেশতের মোট সংখ্যা ৮টি। যথা—১। জান্নাতুল ফিরদাউস, ২। জান্নাতুন্নাঈম ৩। জান্নাতুল মাওয়া। ৪। জান্নাতুল খুলদ। ৫। দারুস্সালাম ৬। দারুল কারার। ৭। জান্নাতুল ‘আদন, ৮। ইল্লিয়্যীন।
মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্ তা'আলা বেহেশত সৃষ্টি করে তার একশভাগের তিনভাগ মাত্র এ দুনিয়ার সৃষ্ট জীবের সাথে তুলনা দিয়েছেন। 

আর সাতানব্বই ভাগই গোপন রেখেছেন। অর্থাৎ এ দুনিয়ার জমিনে আমরা যে সব সুন্দরতম বস্তুসমূহ উপভোগ করছি ও দেখছি বেহেশতের তুলনায় একশভাগের মাত্র তিনভাগের সমান। আর ক্ষণস্থায়ী এ ভোগ-বিলাস লাভের আশায় অনেকেই মিথ্যা মরিচিকার পেছনে ডুবে আছে তা দেখে বড়ই দুঃখ ও আফসুস হয়। সুতরাং আমাদের সকলেরই উচিত, দুনিয়ার মোহে একান্তভাবে ঝাঁপিয়ে না পড়ে পরকালীন জীবনের সুখ-সম্পদ লাভে সময় থাকতে সচেষ্ট হওয়া উচিত। মহান দয়াময় আল্লাহ আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের উন্নতি দান করুন। ইসলামিক কাহিনী।

দোযখের পরিচয়

ইহকালীন জীবনে যে সকল লোক মহান আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের নির্দেশিত পথে পরিচালিত না হয়ে এর বিপরীতভাবে নিজেদের খেয়াল খুশিমত পরিচালিত হয়েছে তাদের এসব অন্যায়ের ফলে মহান আল্লাহর নিকট শাস্তির বিধান করে যে স্থানটি নির্ধারিত করে রাখা হয়েছে, ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় তাকে জাহান্নাম বাংলাতে এর অর্থ হল অতল সমুদ্র
এ দোযখের উপর দিয়ে পুলছিরাত প্রতিষ্ঠিত। 

দোযখের শাস্তির অন্যতম উপকরণ হল আগুন । সুতরাং দোযখীদের সবকিছুই আগুনের দ্বারা তৈরি। বর্তমান দুনিয়ার আগুনের সাথে দোযখের আগুনের কোনরূপ তুলনাই চলেনা। কেননা এ দুনিয়ার আগুনের তুলনায় জাহান্নামের আগুন উনসত্তর গুণ বেশি তেজস্বী এবং সে আগুনের রং খুবই কালো অন্ধকারময়, এ ব্যাপারে রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন—“দোযখের আগুনকে একহাজার বছর তাপ দেয়ার পর সেটি লাল বর্ণ ধারণ করে। 

এভাবে একহাজার বছর তাপ দেয়ার পর কিছুটা সাদা বর্ণ ধারণ করেছে, আবার একহাজার বছর তাপ দেয়ার পর সেটি কালো বর্ণ ধারণ করেছে। আর এখনও সে কালো বর্ণই আছে।”
দোযখীদেরকে আগুনের পোশাক পরিধান করতে দেয়া হবে। আর আগুনের বিছানাপত্র দেয়া হবে। তাদের খাদ্য হবে যাক্কুম নামক কাঁটাযুক্ত গাছ, দুনিয়ার জমিনে যার কোন উপমা চলেনা। তাদের পানীয় হিসেবে দেয়া হবে পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ ও রক্ত। 

রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন, দোযখের সর্বনিম্ন শাস্তি দানকারীকে একজোড়া আগুনের তৈরি জুতা পরিধান করতে দেয়া হবে। আর সে জুতার ফিতা সমূহও হবে আগুনের তৈরি। সে জুতা পরিধান করার ফলে সে ব্যক্তির মাথার মগজ বিগলিত হয়ে টগবগ করতে থাকবে। এরূপ অবস্থা দেখে সে ব্যক্তি মনে করবে যে তাকেই বুঝি সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেয়া হচ্ছে।” অথচ পূর্বেই বলা হয়েছে, এটি হল সর্ব নিম্নমানের শাস্তি ।

কষ্টদান করার নিমিত্তে দোযখীদের কৃতকর্মের ফলাফল অনুযায়ী দোযখের সংখ্যা ৭টি। যথা—১। জাহান্নাম, ২। হাবিয়াহ, ৩। সাকার, ৪। হুতামাহ, ৫। সা'য়ীর, ৬। জাহীম ও ৭। লাজা ।
শাস্তির এসব উপকরণ ছাড়াও দোযখীদের জন্য বিশাল আকারের বিষধর সাপ বিচ্ছু রয়েছে। সে সকল সাপ-বিচ্ছুর বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন—“যদি সে সাপগুলো দুনিয়ার জমিনে সামান্য একটু নিঃস্বাস ফেলত, তাহলে কিয়ামাত পর্যন্ত (বিষের তাড়নায়) দুনিয়ার জমিনে কোনরূপ ফসল উৎপন্ন হতো না। 

সে সাপগুলো দোযখীদেরকে দংশন করতে থাকবে এবং এর বিষক্রিয়া চল্লিশ বছর পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে, দংশনের তোড়ে সে ব্যক্তি সত্তর গজ নিচে পড়ে যাবে। কিন্তু এতসব শাস্তি কষ্টের মধ্যেও দোযখীদের প্রাণ বের হবেনা বরং জীবন্ত অবস্থায়ই তারা এসব যন্ত্রণা অনুভব করতে থাকবে এবং আজীবনই তাদের এরূপ শাস্তি চলতে থাকবে।” কতইনা কষ্টদায়ক দোযখের শাস্তি। islamic history,

সুতরাং এতসব আলোচনা হতে শিক্ষা লাভ করে ইহকালীন জীবনে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্ ও তদীয় রাসূলের নির্দেশিত পথে পরিচালিত হয়ে দোযখের শাস্তিসমূহ হতে মুক্তিলাভের জন্য কৃতকর্ম করে বেহেস্ত লাভের উপযোগী হবার যোগ্যতা অর্জন করার জন্য চেষ্টা-সাধনা করা সকলেরই কর্তব্য ।

নারী সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী

প্রাক ইসলামী যুগে নারীগণকে এ জগত শুধু অনুপোকারীই নয় বরং সভ্যতার কলঙ্ক ও জঞ্জাল মনে করে জীবনের কর্মময় ময়দান থেকে হটিয়ে দিয়ে হীনতা নীচুতা ও লাঞ্ছনা গঞ্জনার এমন অন্ধকারময় কুয়ার অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করে ছিলো, যেখান থেকে উঠে এসে জীবনে উন্নতি লাভ করার আর কোন আশাই ছিল না। ইসলাম নারীদের প্রতি জগতবাসীর এহেন অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠে কঠোর প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেছে এবং পরিষ্কার রূপে ঘোষণা দিয়েছে যে, এ পার্থিব জীবনে নারী-পুরুষ একে অপরের মুখাপেক্ষী। 

নারীগণকে শুধু লাঞ্ছিত ও অবহেলিত রাখার জন্য এবং তাদেরকে জীবনের প্রশস্তময় রাজপথ হতে কণ্টকের ন্যায় দূরে নিক্ষেপ করার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। কেননা পুরুষের সৃষ্টির পেছনে যেমন প্রকৃতির একটি মহান উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে, তেমনি নারী সৃষ্টির মূলেও রয়েছে তার এক সুমহান উদ্দেশ্য। প্রকৃতি তাদের উভয় শেণী দ্বারাই তার বাঞ্চিত্ উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করতে চায়। 

কুরআন মজীদে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন : “আকাশ ও পৃথিবীর সার্বভৌম মালিকানা আল্লাহ তায়ালার । তিনি যা ইচ্ছে তা সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছে তিনি ছেলে যাকে ইচ্ছে মেয়ে দান করেন । অথবা যাকে ইচ্ছে ছেলে ও মেয়ে এক জোড়া সন্তান দেন। আবার যাকে ইচ্ছে নিঃসন্তান করে বন্ধ্যা বানিয়ে রাখেন। নিঃসন্দেহে তিনি মহাজ্ঞানী ও মহা শক্তিশালী সত্তা।”(সূরা শুরু ৪৯-৫০)

ইসলাম নারীদেরকে নীচুতা হীনতা ও অবমাননার অন্ধকারময় কূপ হতে হাত ধরে উঠিয়ে সমাজ জীবনে সর্বময় অধিকার দান করে পূনঃ প্রতিষ্ঠিত করেছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেনঃ “আমরা হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)-এর যমানায় নিজ নারীদের সাথে কথাবার্তা বলতে এবং দ্বিধাহীন ব্যবহার প্রদর্শন করতে ভয় পেতাম। কারণ না জানি আমাদের সম্পর্কে আল্লাহর কোন অহী নাযিল হয়। নবী করীম (সাঃ)-এর ইনতেকালের পর হতে আমরা তাদের সাথে দ্বিধাহীন-চিত্তে ও অসংকোচে জীবন যাপন করতে থাকি। (বুখারী, ইবনে মাজা)

এ অত্যাচারিত অবহেলিত মজলুম শ্রেণীটির এ পার্থিব জগতে জীবিত থাকারও অধিকার ছিল না। আল কুরআন এসে দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলো। এরা, এ জগতে জীবিত থাকার জন্য এসেছে, এদেরকে জীবিত কবর দেয়া চলবে না । এদের অধিকারের উপর যে লোকই হস্তক্ষেপ করুক না কেন, তাকেই আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। ইরশাদ হচ্ছে, “যখন জীবিত কবর দেয়া মেয়েদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, কি অপরাধে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে ?” (সূরা তাকবীর islamic story,

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এ অত্যাচারিত অবহেলিত মজলুম শ্রেণীটির জন্য যেরূপ সাহায্যের হস্ত সম্প্রসারিত করে ছিলেন এবং যে শিক্ষাবলী ও আদর্শ স্থাপন করেছেন, আজ পর্যন্ত দুনিয়ার কোন সংস্কারক বা তথাকথিত মহামানব ও নারী অধিকারের দাবীদার সুধীজন এমন আদর্শ ও শিক্ষার নজীর পেশ করতে পারেনি। তিনি দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন : “মাতার অবাধ্যগত হওয়া, অধিকার আদায় করা থেকে বিরত রাখা, ধন সম্পদ স্তূপীকৃত করে রাখা এবং মেয়েদেরকে জীবিত কবর দেয়াকে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন।” (বুখারী)

ইবনে আব্বাসের বর্ণনা, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন।যদি কোন লোকের মেয়ে হয়, তবে সে মেয়েকে জীবিত কবর দিবে না এবং তার সাথে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য মূলক ব্যবহারও দেখাবে না। আর মেয়ের উপর ছেলেকে প্রাধান্য দেবে না। তা-হলেই আল্লাহ তায়ালা তাকে বেহেস্তে দাখিল করবেন। (আবুদাউদ, মুস্তাদরেক) ইসলামিক কাহিনী।

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন !