দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 47

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 47

বিয়ে ও মোহরানা

দুররুল মোখতার কিতাবে মোহরানা সম্পর্কে বলা হয়েছে, মোহরানা হলো এমন ধরনের সম্পদ, যে সম্পদ স্ত্রীকে দিতে হবে দাম্পত্য অধিকার লাভের জন্যে। স্বামী অবশ্যই তা স্ত্রীকে দেবে। এ মোহরানা বিয়ের সময় ধার্য করতে হবে।” মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের নিকট থেকে যৌন তৃপ্তি গ্রহণ করো, সুতরাং তাদের মোহরানা অবশ্যই আদায় করো।” 

ইসলাম নারীকে বিরাট মর্যাদা প্রদান করেছে। নারীকে দিয়েছে তার প্রাপ্য অধিকার। এ অধিকারের মধ্যে মোহরানা অন্যতম। স্ত্রীকে মোহরানা দিতেই হবে। মোহরানা আদায় করা ফরজ-ওয়াজীব।
মোহরানা না দেয়ার নিয়ত যাদের, তারা কিয়ামতের ময়দানে ব্যাভিচারীদের কাতারে দাঁড়াবে। মোহরানা একান্তভাবেই স্ত্রীর সম্পদ। এ সম্পদের উপর কারো কোন অধিকার নেই। 

এ সম্পদ স্ত্রী যেমনভাবে খুশী তেমনভাবে ব্যবহার করতে পারে। শুধু তা-ই নয়, মোহরানা আদায় করতে হবে অন্তরের সন্তোষ ও সদিচ্ছা সহকার এবং মেয়েদের জন্যে আল্লাহর দেয়া এক নিয়ামত মনে করে । কুরআন মজীদে বলা হয়েছেঃ“ এবং স্ত্রীদের প্রাপ্য মোহরানা তাদের আদায় করে দাও আন্তরিক খুশীর সাথে ও তাদের অধিকার মনে করে।” কেননা জাহিলিয়াতের যুগে হয় মোহরানা ছাড়াই মেয়েদের বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যেত, নয় মোহরানা বাবদ যা কিছু আদায় হত তা সবই মেয়েদের বাপ বা অলি-গার্জিয়ানরাই লুটে পুটে খেয়ে নিত। মেয়েরা বঞ্চিতাই থেকে যেত ।

এজন্যে ইসলামে যেমন মোহরানা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তেমনি এ জিনিসকে একমাত্র মেয়েদেরই প্রাপ্য ও তাদের একচেটিয়া অধিকারের বস্তু বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এতে বাপ বা অলী-গার্জিয়ানের কোন হক নেই বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বস্তুত মোহরানা যখন মেয়েদের জন্যে আল্লাহর বিশেষ দান, তখন তা আদায় করা স্বামীদের পক্ষে ফরয এবং স্বামীদের উপর তা হচ্ছে স্ত্রীদের আল্লাহর নির্ধারিত অধিকার। ইসলামিক কাহিনী।

প্রশ্ন উঠতে পারে, স্বামী-স্ত্রী উভয়ই তো উভয়ের কাছে থেকে যৌনসুখ ও পরিতৃপ্তি লাভ করে থাকে। ‘মোহরানা' যদি এরই 'বিনিময়' হয় তাহলে তা কেবল স্বামীই কেন দেবে স্ত্রীকে, তা কি স্বামীদের উপর অতিরিক্ত ‘জরিমানা' হয়ে যায় না? এর জবাবে বলা যায়, প্রকৃত ব্যাপার এই যে, স্বামী বিয়ের মাধ্যমে স্ত্রীর উপর এক প্রকারের কর্তৃত্ব বা নেতৃত্ব লাভ করে থাকে ।

স্বামী স্ত্রীর যাবতীয় অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করে আর স্ত্রী নিজেকে -নিজের দেহমন, প্রেম-ভালবাসা, যাবতীয় সম্পদ ঐশ্বর্য॥ একান্তভাবে স্বামীর হাতে সোপর্দ করে দেয়। এর বিনিময় স্বরূপই মোহরানা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শাফিয়ী মাযহাবের আলেমগণ মোহরানার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেনঃ “বিয়ে হবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিনিময়মূলক একটি বন্ধন ।  islamic history,

বিয়ের পর একজন অপরজনকে নিজের বিনিময়ে লাভ করে থাকে । প্রত্যেক অপরজনের থেকে যেটুকু ফায়দা লাভ করে, তাই হচ্ছে অপরজনের ফায়দার বিনিময়-বদল ।”
আর মোহরানা হচ্ছে এক অতিরিক্ত ব্যবস্থা আল্লাহ্ তা'আলা তা স্বামীর উপর অবশ্য দেয়া ফরয করে দিয়েছেন। এজন্যে যে, বিয়ের সাহায্য সে স্ত্রীর উপর খানিকটা অধিকারসম্পন্ন মর্যাদা লাভ করতে পেরেছে।” 

অতএব বিয়ের আকদ্ অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়ই মোহরানা নির্ধারণ এবং তার পরিমাণের উল্লেখ একান্তই কর্তব্য। নবী করীম (স) অত্যন্ত জোরের সাথে বলেছেনঃ“ বিয়ের সময় অবশ্য পূরণীয় শর্ত হচ্ছে তা, যার বিনিময়ে তোমরা স্ত্রীর যৌন অঙ্গ নিজের জন্যে হালাল মনে করে নাও। আর তা হচ্ছে মোহরানা বা দেন-মোহর।” বিয়ের পর স্ত্রীকে কিছু না দিয়ে তার কাছে যেতেও নবী করীম (স) স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেছেন। 

“হযরত আলী (রা) হযরত ফাতিমা (রা) কে বিয়ে করার পর তাঁর নিকটে যেতে প্রস্তুত হচ্ছিলেন। তখন নবী করীম (স) তাকে কোন জিনিস না দেয়া পর্যন্ত তাঁর নিকট যেতে তাঁকে নিষেধ করলেন।” আল্লামা শাওকানী লিখেছেনঃ নবী করীম (স) স্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তার মনকে স্বামীর প্রতি আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে স্ত্রীকে কিছু না কিছু আগে ভাগে দেবার জন্যে স্বামীকে আদেশ করেছেন।” প্রসঙ্গত মনে রাখতে হবে, বিয়ের সময় দেন-মোহর ছাড়া অপর এমন কোন শর্ত আরোপ করা চলবে না, যা শরীয়তের বিরোধী ।

নবী করীম (স) বলেছেনঃ “কোন মহিলা তার বিয়ের জন্যে তারই অপর এক বোনকে তালাক দেয়ার শর্ত আরোপ করতে পারবে না।” “তার অপর এক বোন' বলতে আপন সহোদরাও হতে পারে, অনাত্মীয় কোন মেয়েলোকও হতে পারে। কেননা সে তার আপন সহোদরা বোন না হলেও মুসলিম হিসেবে সে তার দ্বীনি বোন অর্থাৎ কোন পুরুষ যার স্ত্রী রয়েছে- যদি অপর কোন মেয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়, মেয়ে সে বিয়েতে রাযী হয়ে পুরুষটিকে একথা বলতে পারবে আমাকে বিয়ে কর। না যে, তোমার আগের (মানে বর্তমান) স্ত্রীকে আগে তালাক দাও, তারপর আমাকে বিয়ে কর ।ইসলামিক কাহিনী।

এরূপ শর্ত আরোপ করার তার কোন অধিকার নেই। সে ইচ্ছে করলে এ বিয়ের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করতে পারে। কিন্তু একজনের বর্তমান স্ত্রীকে তালাক দেয়ার শর্ত আরোপ করা এবং সে তালাক হয়ে যাওয়ার পর তার নিকট বিয়ে বসতে রাযী হওয়ার কারো অধিকার থাকতে পারে না। 

এরূপ শর্ত আরোপ করা ইসলামী শরীয়তের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। রাসূলে করীম (স) এ পর্যায়ে স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেনঃ “ আল্লাহর কিতাবে নেই এমন কোন শর্ত আরোপ করা হলে তা অবশ্যই প্রত্যাখ্যাত হবে।” 

মোহরানা না দিয়ে স্ত্রীর নিকট গমন করাই অবাঞ্ছনীয়। হযরত ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন, হযরত আলী যখন হযরত ফাতিমাকে বিয়ে করলেন, তখন নবী করীম (স) তাঁকে বললেন “তুমি ওকে কিছু একটা দাও।” হযরত ইবনে উমর বললেনঃ কোন মুসলমানেরই মোহরানা বাবদ কম বা বেশি কিছু অগ্রিম না দিয়ে তার স্ত্রীর নিকট গমন করা জায়েয নয়।” মালিক ইবনে আনাস বলেছেনঃ স্ত্রীকে তার মোহরানা কিছু-না-কিছু না দিয়ে স্বামী যেন তার নিকট গমন না করে ।

মোহরানার কম॥ সে কম পরিমাণ হল একটি দীনারের এক এক-চতুর্থাংশ কিংবা তিন দিরহাম। বিয়ের সময় এ পরিমাণ নির্দিষ্ট হোক আর নাই হোক, তাতে কিছু আসে যায় না।” দেন মোহরের পরিমাণ কি হওয়া উচিত, ইসলামী শরীয়াতে এ সম্পর্কে কোন অকাট্য নির্দেশ দেয়া হয়নি, নির্দিষ্টভাবে কোন পরিমাণও ঠিক করে বলা হয়নি। 

তবে একথা স্পষ্ট যে, প্রত্যেক স্বামীরই কর্তব্য হচ্ছে তার আর্থিক সামর্থ্য ও স্ত্রীর মর্যাদার দিকে লক্ষ্য রেখে উভয় পক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন পরিমাণ নির্দিষ্ট করে বেঁধে দেয়া। আর মেয়ে পক্ষেরও তাতে সহজেই রাযী হয়ে যাওয়া উচিত। এ ব্যাপারে শরীয়াত উভয় পক্ষকে পূর্ণ আযাদী দিয়েছে বলেই মন হয় । 

এ বিষয়ে শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী যা লিখেছেন, তা নিম্নোক্ত ভাষায় প্রকাশ করা হচ্ছেঃ নবী করীম (স) মোহরানার কোন পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেননি এ কারণে যে, এ ব্যাপারে লোকদের আগ্রহ-উৎসাহ ও ঔদার্য প্রকাশ করার মান কখনো এক হতে পারে না। বরং বিভিন্ন যুগে, দুনিয়ার বিভিন্ন স্তরের লোকদের আর্থিক অবস্থা এবং লোকদের রুচি, দৃষ্টিভঙ্গি, কার্পণ্য ও উদারতার ভাবধারায় আকাশ ছোয়া পার্থক্য হয়ে থাকে। 

বর্তমানেও এ পার্থক্য বিদ্যমান। এজন্যে সর্বকাল যুগে সমাজ স্তর, অর্থনৈতিক অবস্থা ও রুচি-উৎসাহ নির্বিশেষে প্রযোজ্য হিসেবে একটি পরিমাণ স্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট করে দেয়া বাস্তব দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অসম্ভব। যেমন করে কোন সুরুচিপূর্ণ দ্রব্যের মূল্য সর্বকালের জন্যে নির্দিষ্ট করে দেয়া যায় না। দেয়া অবৈজ্ঞানিক ও হাস্যকর। কাজেই এর পরিমাণ সমাজ, লোক ও আর্থিক মানের পার্থক্যের কারণে বেশিও হতে পারে, কমও হতে পারে। 

তবে শুধু শুধু এবং পারিবারিক অভিজাত্যের দোহাই দিয়ে এর পরিমাণ নির্ধারণে বাড়াবাড়ি ও দর কষাকষি করাও আদৌ সমর্থনযোগ্য নয়। তার পরিমাণ এমন সামান্য ও নগণ্য হওয়া উচিত নয়, যা স্বামীর মনের উপর কোন শুভ প্রভাবই বিস্তার করতে সমর্থ হবে না। যা দেখে মনে হবে যে, মোহরানা আদায় করতে গিয়ে স্বামীকে কিছুমাত্র ক্ষতি স্বীকার করতে হয়নি, সেজন্যে তাকে কোন ত্যাগও স্বীকার করতে হয়নি। 

শাহ দেহলভীর মতে, দেন-মোহরের পরিমাণ এমন হওয়া উচিত, যা আদায় করা স্বামীর পক্ষে কষ্টসাধ্য হবে এবং সেজন্যে সে রীতিমত চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বে। পক্ষান্তরে তার পরিমাণ এমনও হওয়া উচিত নয়, যা আদায় করা স্বামীর পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। এজন্যে নবী করীম (স) একদিকে গরীব সাহাবীকে বললেনঃ “ কিছু -না -কিছু দিতে চেষ্টা কর।  islamic history,

আর কিছু না পার, মোহরানা বাবদ অন্তত লোহার একটি আঙ্গুরীয় দিতে পারলেও সেজন্যে অবশ্য চেষ্টা করবে।” একটি হাদীস থেকে জানা যায়, এক জোড়া জুতার বিনিময়ে অনুষ্ঠিত বিয়েকেও রাসূলে করীম (স) বৈধ বলে ঘোষণা করেছিলেন। তিনি মেয়েলোকটিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'তুমি মোহরানা বাবদ যা পেয়েছ, তাতে বিয়ে করতে কি তুমি রাযী আছ?' 

সে বলল, হ্যাঁ। তখন রাসূলে করীম (স) সে বিয়েতে অনুমতি দান করেছিলেন। অপরদিকে কুরআন মজীদে এই মোহরানা সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ এবং তোমরা মেয়েদের এক-একজনকে 'বিপুল পরিমাণ' ধন-সম্পদ মোহরানা বাবদ দিয়ে দিয়েছ।” এ আয়াতের ভিত্তিতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ মোহরানা বাবদ দেয়া জায়েয প্রমাণিত হচ্ছে। হযরত উমর (রা) উম্মে কুলসুমকে বিয়ে করেছিলেন এবং মোহরানা দিয়েছিলেন চল্লিশ হাজার দিরহাম। 

চল্লিশ হাজার দেরহাম তদানীন্তন সমাজে বিরাট সম্পদ। নবী করীম (স) স্বয়ং হযরত উম্মে হাবীবাকে মোহরানা দিয়েছিলেন চারশত দীনার- চার শতটি স্বর্ণমুদ্রা। এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, তাঁর মোহরানার পরিমাণ ছিল আটশ' দীনার। এ আলোচনা থেকে একদিকে যেমন জানা যায় মোহরানার সর্বনিম্ন পরিমাণ, অপর দিকে জানা যায় সর্বোচ্চ পরিমাণ। ইসলামী শরীয়াতে এ দু'ধরনের পরিমাণই জায়েয। 

কিন্তু জাহিলিয়াতের যুগে বিপুল পরিমাণে মোহরানা ধার্য করা হত। পরিমাণ বৃদ্ধির জন্যে কন্যাপক্ষ খুবই চাপ দিত। ফলে দুপক্ষের মধ্যে নানারূপ দর কষাকষি ও ঝগড়াঝাটি হত। এর পরিণামে সমাজে দেখা দিত নানা প্রকারের জটিলতা। বর্তমানেও মুসলিম সমাজে মোহরানা ধার্যের ব্যাপারে অনুরূপ অবস্থাই দেখা দিয়েছে। বলা যেতে পারে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতা-সংস্কৃতির চরমোন্নতির এ যুগে পুরাতন জাহিলিয়াত নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। 

এখন নতুন করে স্মরণ করা আবশ্যক বোধ হচ্ছে নবী করীম (স) এর পুরাতন বাণী। বলেছেনঃ “সবচেয়ে উত্তম পরিমাণের মোহরানা হচ্ছে তা, যা আদায় করা খুবই সহজসাধ্য।” এজন্যে একান্ত প্রয়োজন হচ্ছে অবস্থাভেদে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ পরিমাণের মধ্যে সহজ দেয় একটি পরিমাণ বেঁধে দেয়া এবং এ ব্যাপারে কোন পক্ষ থেকে অকারণ বাড়াবাড়ি করা কিছুমাত্র বাঞ্ছনীয় নয় ।

মোহরানা বাঁধার মান মধ্যম পর্যায়ে আনার প্রচেষ্টা রাসূলে করীম (স) এর সময় থেকেই শুরু হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে একটা ভুল দৃষ্টি যেন মুসলমানদের মধ্যে থেকেই গিয়েছে।
হযরত উমর ফারূক (রা) পর্যন্ত এ সম্পর্কে বিশেষ যত্নবান হয়েছিলেন। তিনি একদা মিম্বরের উপরে দাঁড়িয়ে লোকদের নসীহত করছিলেন এবং মোহরানা সম্পর্কে বিশেষভাবে বলেছিলেনঃ “ সাবধান হে লোকেরা, স্ত্রীদের মোহরানা বাঁধতে গিয়ে কিছুমাত্র বাড়াবাড়ি কর না। 

মনে রেখো, মোহরানা যদি দুনিয়ায় মান-সম্মান বাড়াতো কিংবা আল্লাহর নিকট তাকওয়ার প্রমাণ হত তাহলে অতিরিক্ত মোহরানা বাঁধার কাজ করার জন্যে রাসূলে করীমই ছিলেন তোমাদের অপেক্ষাও বেশি অধিকারী ও যোগ্য । অথচ তিনি তাঁর স্ত্রীদের ও কন্যাদের মধ্যে কারো মোহরানাই বারো ‘আউকিয়া’ (চারশ' আশি দিরহাম কিংবা বড়জোর একশ' কুড়ি টাকা-র বেশি ধার্য করেননি।

মনে রাখা আবশ্যক যে, এক-একজন লোক তার স্ত্রীকে দেয় মোহরানার দরুন বড় বিপদে পড়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত সে নিজের স্ত্রীকে শত্রু বলে মনে করতে শুরু করে।” এমনি এক ভাষণ শুনে উপস্থিতদের মধ্য থেকে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে বললেনঃ “ আল্লাহ তো আমাদের দিচ্ছেন, আর তুমি হারাম করে দিচ্ছ? তুমি লোকদেরকে মেয়েদের মোহরানার পরিমাণ চারশ' দিরহামের বেশি বাঁধতে নিষেধ করছো? তুমি কি শোননি, আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ “তোমরা তোমাদের এক এক স্ত্রীকে মোহরানা দিচ্ছ বিপুল পরিমাণে?”

একজন মেয়েলোক ঠিক বলতে তখন হযরত উমর (রা) বললেনঃ পারল; কিন্তু ভুল করল একজন রাষ্ট্রনেতা।” বললেনঃ “হে আল্লাহ মাফ করে দাও, - সব লোকই কি উমরের তুলনায় অধিক সমঝদার?” বাহ্যত মনে হয়, হযরত উমর (রা) অধিক পরিমাণে মোহরানা বাঁধার কাজকে নিষেধ করা থেকে ফিরে গিয়েছেন । 

বস্তুত হযরত উমরের কথার অর্থ এই ছিল না যে, তিনি অধিক পরিমাণে মোহরানা ধার্য করাকে হারাম মনে করতেন, আর তাকে হারাম করে দেওয়াও তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না বরং বলা যায়, তিনি অধিক পরিমাণে মোহরানা ধার্য করা ভাল মনে করতেন না। বস্তুত মোহরানা পরিমাণের কোন সর্বোচ্চ পরিমাণ নেই, এ কথার উপরই মনীষীদের ইজমা হয়েছে। 

স্বামী যদি বিয়ের উদ্দেশ্যে মেয়ে পক্ষের অসম্ভব দাবীর নিকট মাথা নত করে দিয়ে তাদের মর্জীমত বড় পরিমাণের মোহরানা স্বীকার করে নেয়, আর মনে মনে চিন্তা ও সিদ্ধান্ত করে রাখে যে, কার্যত সে তার কিছুই আদায় করবে না, তা হলেও ব্যাপারটি একটি বড় রকমের প্রতারণার পর্যায়ে পড়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে আদায় করার নিয়ত না থাকা সত্ত্বেও একটা বড় পরিমাণের মোহরানা মুখে স্বীকার করে নেয়া যে কত বড় গুনাহ তা রাসূল করীম (স) এর উদ্ধৃত বাণী থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠে । 

তিনি ঘোষণা করেছেন, যে লোক কোন মেয়েকে কম বেশি পরিমাণে মোহরানা দেয়ার ওয়াদায় বিয়ে করে অথচ তার মনে স্ত্রীর সে হক আদায় করার ইচ্ছা থাকে না, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সম্মুখে ব্যভিচারীরূপে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।” “যে লোক তার স্ত্রীর জন্যে কোন মোহরানা ধার্য করবে অথচ আল্লাহ জানেন যে, তা আদায় করার কোন ইচ্ছাই তার নেই, ফলে আল্লাহর নামে নিজের স্ত্রীকেই প্রতারিত করল এবং অন্যায়ভাবে ও বাতিল পন্থায় নিজ স্ত্রীর যৌন অঙ্গ নিজের জন্যে হালাল মনে করে ভোগ করল, সে লোক আল্লাহর সাথে ব্যভিচারী হিসেবে সাক্ষাৎ করতে বাধ্য হবে।”

সুতরাং মোহরানা ব্যতীত বিয়ে বৈধ হবে না। আর এ মোহরানার ক্ষেত্রে পাত্রী পক্ষেরও কোন বাড়াবাড়ির অবকাশ যেমন নেই তেমনি নেই পাত্রপক্ষের। পাত্র পক্ষের উপর মোহরানার যেমন বোঝা চাপানো উচিত নয়-যা তার পক্ষে আদায় করা অসম্ভব। আবার এমন অঙ্কের মোহরানা ধার্য করা উচিত নয় যাতে করে স্ত্রীর প্রতি অবিচার করা হয়।

 মোহরানা ধার্য করতে হবে না সর্বনিম্ন না সর্বোচ্চ। মাঝামাঝি পর্যায়ের হতে হবে। আর এ মোহরানা বিয়ের অনুষ্ঠানেই সম্ভব হলে আদায় করতে হবে। মহান আল্লাহ সূরা নেছায় বলেছেনঃ “ আর মেয়েদের অভিভাবকদের অনুমতি গ্রহণ করে তাদেরকে দাম্পত্য বন্ধনে আবদ্ধ করো । এবং তাদের মোহরানা প্রচলিত নিয়মে ও সকলের জানামতে তাদেরকেই আদায় করে দাও ।

যৌতুক প্রথা ও ইসলাম

বিয়ের সময় মেয়ের পিতা বা অভিভাবক খুশী হয়ে তার সাধ্যানুযায়ী যৌতুক দেবে। এটা অতি উত্তম সওয়াবের কাজ। কিন্তু এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা হারাম। অনেকে মানুষকে দেখানোর জন্যে বিয়ের সময় মেয়েকে প্রচুর যৌতুক উপহার দেয়। এই যে প্রদর্শনেচ্ছা এটা স্পষ্ট হারাম। অবশ্য এ কথাও যুক্তিসঙ্গত যে, একটা মেয়ে এবং ছেলে যখন নতুন সংসার গড়তে যাচ্ছে তখন তার সংসারে বহু জিনিসের প্রয়োজন হয়। 

সুতরাং মেয়ের ও ছেলের পিতা বা অভিভাবক তাদেরকে খুশী হয়ে যৌতুক দেবে। এতে করে নব দম্পতির সংসার করা সহজ হবে। কিন্তু এটাও হতে হবে অভিভাবকের আয়ত্বের মধ্যে ।
কিন্তু বর্তমান সমাজে বিয়ের সময় ছেলেপক্ষ যেভাবে মেয়েপক্ষের নিকট দাবী করে যৌতুক আদায় করে। তা সম্পূর্ণ হারাম। দাবী করে যৌতুক আদায় করা প্রথা একটি অমানবিক নিকৃষ্ট প্রথা। 

এ জঘন্য প্রথার কারণে কত মেয়ের যে বিয়ে হচ্ছে না, কত মেয়ে যে আত্মহত্যা করছে, কত মেয়ে স্বামীর অত্যাচার ভোগ করছে তার হিসেব নেই। আবার এটাও ঠিক নয় যে কৃপণতার কারণে মেয়ের অভিভাবক বিয়ের সময় তাকে কিছুই দেবে না। নবী পত্নী হযরত হাফসা (রা) হযরত ওমর (রা) এর মেয়ে ছিলেন। ওমর (রা) তাকে বলেছিলেন, “তুমি রাসূল (দ) এর কাছে কিছু চাইবে না। যা প্রয়োজন, আমার কাছে চাইবে।” 

সুতরাং বিয়ের সময় বা পরে মেয়ের পিতা বা অভিভাবক তার সাধ্যানুযায়ী দেবে এটাই স্বাভাবিক। দান যৌতুকের রেওয়াজ যে ইসলামে রয়েছে এবং শরীয়াত তা অসমর্থিতও নয়, তাতে কোন সন্দেহ নেই । হাদীস থেকে স্পষ্ট জানা যায়, বা যৌতুক দেয়ার রেওয়াজ রাসূলে করীম (স) এর যুগেও বর্তমান ছিল এবং নবী করীম (স) নিজে তাঁর কন্যাদের বিয়ের সময় যৌতুক দান করেছেন ।

হযরত আলী (রা) বলেছেনঃ “ রাসূলে করীম (স) ফাতিমাকে যৌতুক হিসেবে দিয়েছিলেন একটি পাড়ওয়ালা কাপড়, একটি পানির পাত্র, আর একটি চামড়ার তৈরি বালিশ যার মধ্যে তীব্র সুগন্ধিযুক্ত ইযখির খড় ভর্তি ছিল।” হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীস থেকে জানা যায়, নবী করীম (স) এই কয়টি জিনিস ছাড়াও দুইটি যাঁতা এবং পাকা মাটির একটি পাত্র ফাতিমা (রা) কে যৌতুক হিসেবে দিয়েছিলেন। 

এসব হাদীসের ভিত্তিতে আল্লামা আহমাদুল বান্না লিখেছেনঃ “এ পর্যায়ের যাবতীয় হাদীস প্রমাণ করে যে, যৌতুক দানের ব্যাপারে মধ্যম নীতি অবলম্বন করা এবং তাতে বিপুল প্রাচুর্যের বাহুল্য না করা বরং প্রত্যেক যুগের দৃষ্টিতে নিতান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেয়াকেই যথেষ্ট মনে করা আবশ্যক।”

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন !