পাত্র-পাত্রীর মতামত ও অভিভাবকের পরামর্শ
দাম্পত্য সম্পর্ক চিরস্থায়ীভাবে যার সাথে স্থাপন করা হবে, তাকে পরস্পর দেখে দেবে। এ ক্ষেত্রে বিয়ের উপযুক্ত পাত্র-পাত্রীকে ইসলাম স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে। পাত্র-পাত্রীর অভিভাবক পাত্র-পাত্রী পছন্দ করবে আর পাত্রী হয়ত পাত্রকে পছন্দ করবে না অথবা পাত্র পছন্দ করবে না এ সুযোগ নেই । মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা বিয়ে কর সেই মেয়েলোক, যাকে তোমার ভাল লাগে৷ যে তোমার পক্ষে ভাল হবে।”
এ পর্যায়ে নবী করীম (স) বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন কোন মেয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেবে তখন তাকে নিজ চোখে দেখে তার গুণ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা করে নিতে অবশ্যই চেষ্টা করবে, যেন তাকে ঠিক কোন আকর্ষণে বিয়ে করবে তা সে স্পষ্ট বুঝতে পারে।” এ হাদীসটির বর্ণনাকারী হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) অতঃপর বলেনঃ “রাসূলের উক্ত কথা শুনে আমি একটি মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলাম ।
তারপর তাকে গোপনে দেখে নেয়ার জন্যে আমি চেষ্টা চালাতে শুরু করি শেষ পর্যন্ত তার মধ্যে এমন কিছু দেখতে পাই, যা আমাকে আকৃষ্ট করে ও উদ্বুদ্ধ করে তাকে বিয়ে করে স্ত্রী হিসেবে বরণ করে নিতে। অতঃপর তাকে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করি।” ইমাম আহমাদ বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায় যে, হযরত জাবির একটি গাছের ডালে গোপনে বসে থেকে প্রস্তাবিত কনেকে দেখে নিয়েছিলেন। হযরত মুহাম্মদ ইবনে মুসলিমা থেকে রাসূলে করীমের কথাটি বর্ণিত হয়েছে।
তিনি বলেছেনঃ “যখন কোন পুরুষের মনে কোন বিশেষ মেয়ে বিয়ে করার বাসনা জাগবে, তখন নিজ চোখে দেখে নেয়ায় কোনই দোষ নেই।” হযরত মুগীরা ইবনে শুরাহ (রা) তাঁর নিজের বিয়ের প্রসঙ্গ রাসূলে করীমের সামনে পেশ করলে তখন রাসূলে করীম (স) আদেশ করলেনঃ “তাহলে কনেকে দেখে নাও।”
কেননা তাকে বিয়ের পূর্বে দেখে নিলে তা তোমাদের মাঝে স্থায়ী প্রেম-ভালবাসার সম্পর্ক সৃষ্টির অনুকূল হবে।”
রাসূলে করীম (স) ইরশাদ করেছেনঃ “তোমাদের কেউ যখন কোন মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় তখন তার এমন কোনকিছু দেখো যদি তার পক্ষে সম্ভব হয় যা তাকে বিয়ে করতে উদ্বুদ্ধ করবে, তবে তা তার অবশ্যই দেখে নেয়া কর্তব্য।” এভাবে বহুসংখ্যক রেওয়ায়েত হাদীসের কিতাবসমূহে উদ্ধৃতি পাওয়া যায়, যা থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, একজন পুরুষ যে মেয়েকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক, সে তাকে বিয়ের পূর্বেই দেখে নিতে পারে।
শুধু তাই নয়, রাসূলে করীম (স) এ সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন এবং না দেখে বিয়ে করাকে তিনি অপছন্দ করেছেন । হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেছেনঃ “নবী করীম (স) বিবাহেচ্ছুক এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি মেয়েটিকে দেখেছ? সে বললঃ না, দেখিনি তখন রাসূলে করীম (স) বললেনঃ যাও তাকে দেখে নাও।” কিন্তু এরপর প্রশ্ন থেকে যায়, কনেকে কতদূর দেখা যেতে পারে? অধিকাংশ মুহাদ্দিসের মতে মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় দেখা যেতে পারে এজন্যে যে, মুখমণ্ডল দেখলেই কনের রূপ-সৌন্দর্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করা সম্ভব । আর হস্তদ্বয় গোটা শরীরের গঠন ও আকৃতি বুঝিয়ে দেয় । কাজেই এর বেশি দেখা উচিত নয় ।
ইমাম আওজায়ী বলেছেনঃ “তার প্রতি তাকানো যাবে, খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখা যাবে এবং তার মাংসপেশীসমূহও দেখা যাবে।” কনে সম্পর্কে সম্যক ধারণা করা যায় এবং বিয়ে করা সম্পর্ক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয় যতখানি এবং যেভাবে দেখলে, ততখানি এবং সেভাবে দেখা অবশ্যই জায়েয হবে, সন্দেহ নেই ।
হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত উমর ফারূক (রা) হযরত আলী তনয়া উম্মে কুলসুমকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন হযরত আলী কন্যাকে তাঁর নিকট পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, যেন তিনি তাকে দেখে নিতে পারেন। তখন এই দেখার উদ্দেশ্যই হযরত উমর উম্মে কুলসুমের পায়ের দিকে কাপড় তুলে ফেলে দিয়েছিলেন। তার পরের প্রশ্ন, কনের অনুমতি ও জ্ঞাতসারে দেখা উচিত, কি অনুমতি ব্যতিরেকে ও অজ্ঞাতসারেই? এ সম্পর্কেও বিভিন্ন মত দেখা যায় ।
ইমাম মালিক বলেছেনঃ “কনের অনুমতি ব্যতিরেকে তাকে দেখা যাবে না, তার প্রতি তাকানো যাবে না। কেননা তাকে দেখার জন্যে তার অনুমতি নেয়া তার অধিকার বিশেষ (বিনানুমতিতে দেখলে সে অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়)।” ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল বলেছেনঃ “কনে যদি বস্ত্রাচ্ছাদিতাই থাকে, তবে তার অনুমতি নিয়েই দেখা কি বিনামুমতিতে, তার দুটোই সমান।” তবে এ সম্পর্কে রাসূল করীমের একটি কথা স্পষ্ট পথ নির্দেশ করে এবং তার দ্বারা মতবিরোধের অবসান হয়ে যায় ।
আবূ হুমাইদ সায়েদী বর্ণনা করেছেন, রাসূলে (স) ইরশাদ করেছেনঃ “তোমাদের কেউ যখন কোন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে, তখন তাকে দেখা তার পক্ষে দূষণীয় নয়। কেননা সে কেবলমাত্র এই বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার কারণেই তাকে দেখছে (অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়) যদিও সে স্ত্রীলোকটি কিছুই জানে না।” এ হাদীস থেকে স্পষ্ট জানা গেল যে, কনেকে যদি দেখা হয় শুধু এজন্যে যে, তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে এবং এ দেখার মূল ও একমাত্র উদ্দেশ্য যদি এই হয় যে, পছন্দ হলেই তাকে বিয়ে করতে রাযী হবে, তবে সে দেখা যদি কনের অজ্ঞাতসারেও হয়, তবুও তাতে কোন দোষ হবে না।
এই প্রসঙ্গে একটি কথা পরিষ্কার বলে দেয়া ভাল। যদি কারো নিত্য নতুন যুবতী মেয়ে দেখা শুধু দর্শনসুখ লাভের বদরুচি হয়ে থাকে, তবে তাকে কোন মেয়েকে দেখানো জায়েয নয়। এ সম্পর্কে ইসলামবিদদের মধ্যে কোন দ্বিমত নেইঃ “ কোন মেয়েলোকের প্রতি যৌনসুখ লাভ, যৌন উত্তেজনার দরুন কিংবা কোন সন্দেহ সংশয় মনে পোষণ করে দৃষ্টিপাত করা জায়েয নয়।”
এজন্যে ইমাম অমাদ বলেছেনঃ “কনের চেহারা ও মুখমণ্ডলের দিকে দেখা যাবে, তবে যৌনসুখ লাভের জন্যে নয়। এমনকি তার সৌন্দর্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা করার উদ্দেশ্যে তার প্রতি বারবারও তাকানো যেতে পারে।” কোন কোন মনীষীর মতে কনের অজ্ঞাতসারেই তাকে দেখা উচিত, যেমন হযরত যাবির (রা) দেখেছিলেন।
ইমাম শাফিয়ীর মতে বিয়ের প্রস্তাব রীতিমত পেশ করার পূর্বে কনেকে দেখে নেয়া বাঞ্ছনীয় যেন প্রস্তাব কোন কারণে ভেঙ্গে গেলে কোন পক্ষের জন্যেই লজ্জা বা অপমানের কারণ না ঘটে। আর বরের নিজের পক্ষে যদি কনেকে দেখা আদৌ সম্ভব না হয়, তাহলেও অন্তত নির্ভরযোগ্য সূত্রে তার সম্পর্কে যাবতীয় বিষয়ে সম্যক খোঁজ-খবর লওয়া বরের পক্ষে একান্তই আবশ্যক ।
এ উদ্দেশ্যে আপন আত্মীয়া স্ত্রীলোককে পাঠানো যেতে পারে তাকে দেখার জন্যে। হযরত আনাস (রা) বর্ণিত একটি হাদীস
থেকে এ সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়া যায়। নবী করীম (স) একটি মেয়েকে বিয়ে করার মনস্থ করেন। তখন তাকে দেখার জন্য অপর একটি স্ত্রীলোককে পাঠিয়ে দেন এবং তাকে বলে দেনঃ “কনের মাড়ির দাঁত পরীক্ষা করবে এবং কোমরের উপরিভাগ পিছন দিক থেকে ভাল করে দেখবে।” বলাবাহুল্য, দেহের এ দুটো দিক একজন নারীর বিশেষ আকর্ষণীয় দিক। দাঁত দেখলে তার বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞান-প্রতিভা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করা চলে। তার মুখের গন্ধ মিষ্টি না ঘৃণ্য তাও বোঝা যায়। আর পেছন দিক দিয়ে কোমরের উপরিভাগ একটি নারীর বিশেষ আকর্ষণীয় হয়ে থাকে ।
এ সব দিক দিয়ে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্যে রাসূলে করীম (স) তাকীদ করেছেন। তার অর্থ, বিয়ের পূর্বে কনের এসব দিক সম্পর্কে সম্যক ধারণা করে নেয়া ভাল। এ পর্যায়ে একটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখা আবশ্যক যে, কনে দেখার কাজ আনুষ্ঠানিক বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পূর্বে সম্পন্ন করাই যুক্তিযুক্ত।
আল্লামা আ-লূসী বলেছেনঃ “মনীষীগণ আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পূর্বেই কনে দেখার এই কাজটি সম্পন্ন করা উচিত বলে মনে করেছেন। দেখার পর পছন্দ না হলে তা প্রত্যাহার করবে। তাতে কারো মনে কষ্ট লাগবে না বা অসুবিধা হবে না। কিন্তু রীতিমত প্রস্তাব দেয়ার পর দেখে অপছন্দ হওয়ার কারণে প্রত্যাখ্যান করা হলে তার পরিণাম যে ভাল নয় তা সুস্পষ্ট।” দাম্পত্য সম্পর্কে স্থাপনের পূর্বে মেয়েকে যেমন ছেলে দেখবে তেমনি দেখবে ছেলেকে-মেয়ে ।
ছেলে-মেয়ের যতদিক পছন্দ করবে অনুরূপভাবে মেয়েও ছেলের বিভিন্ন দিক পছন্দ বা অপছন্দ করবে। হযরত ওমর (রা) এ ব্যাপারে স্পষ্ট বলেছেন, “তোমরা তোমাদের মেয়েদেরকে কোন কুৎসিৎ কদর্য চেহারার ছেলের নিকট বিয়ে দিও না । কেননা মেয়ের দেহের যে সব অংশ একজন ছেলের নিকট আকর্ষণীয় অনুরূপভাবে একজন মেয়ের নিকটও একজন পুরুষের ঐ সব অংশ আকর্ষণীয়।
অতএব মেয়ে অবশ্যই দেখবে কোন ধরনের পুরুষের সাথে তার বিয়ে হচ্ছে। মেয়ের অমতে মেয়ের পছন্দের বাইরে তার বিয়ের ব্যাপারে অভিভাবক তাকে বাধ্য করতে পারে না। মেয়ে তার বিয়ের পূর্বেই যার সাথে সে বিয়ে করবে, তার সমস্ত দিক দেখে জেনে বুঝেই বিয়ে করবে।
Disclaimer: যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন ! |