অমুসলিমদের সাথে সংসার জীবন
ইসলাম তার অনুসারী পুরুষদেরকে যেমন নিষেধ করেছে অমুসলিম মেয়েদেরকে বিয়ে করতে তেমনি নারীদেরকও নিষেধ করেছে অমুসলিম পুরুষদেরকে বিয়ে করতে। কারণ এ ধরনের বিয়ে সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষেত্রে নানা জটিলতার সৃষ্টি করে । কোন কাফের নারী-পুরুষের সাথে ইসলাম মুসলমানদের বিয়ের সম্পর্ক চিরতরে হারাম ঘোষণা করেছে। আল্লাহ পাক বলেন, “তোমরা মুসলমানরা কাফির মেয়েকে বিয়ের বন্ধনে বেঁধে রেখো না।”
এ আয়াতের পূর্বে বলা হয়েছেঃ “ মুসলিম মেয়েরা কাফিরদের জন্যে হালাল নয় এবং মুসলিম পুরুষরাও অনুরূপভবে হালাল নয় কাফির মেয়েদের জন্যে।” আর এর কারণ হচ্ছে ইসলাম ও কুফরের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য। আল্লামা শাওকানী লিখেছেনঃ “এ আয়াতে প্রমাণ করছে যে, মু'মিন-মুসলিম মেয়ে কাফির পুরুষের জন্যে হালাল নয়।” আর প্রথমোক্ত আয়াতের তাফসীরে লিখেছেনঃ “ এর অর্থ এই যে, যে মুসলমানের স্ত্রী কাফির সে আর তার স্ত্রী থাকেনি।
কেননা দ্বীন দুই হওয়ার কারণে এ দুয়ের বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেছে । আহলি কিতাব-ইয়াহুদী ও নাসারা বা খৃস্টান-মেয়ে বিয়ে করার ব্যাপারটি বিস্তারিত আলোচনা সাপেক্ষ। এখানে তা পেশ করা যাচ্ছে। আল্লামা আবূ বকর আল জাস্সাস লিখেছেনঃ আহলি কিতাব মেয়ে বিয়ে করার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।
একটি মত হচ্ছে এই যে, আহলি কিতাবের আযাদ বংশজাত বা জিম্মী মেয়ে হলে তাদের বিয়ে করা মুসলিম পুরুষদের জন্যে জায়েয, এতে কোন মতভেদ নেই। যদিও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) তা পছন্দ করেন না,মকরুহ মনে করেন। তাঁর সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছেঃ তিনি আহলি কিতাবের খানা খাওয়ায় কোন দোষ মনে করতেন না, তবে তাদের মেয়ে বিয়ে করাকে মকরুহ্ মনে করতেন ।
তাঁর সম্পর্কে অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ ইয়াহুদী ও খৃস্টান মেয়ে বিয়ে করা সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা'আলা মুসলিমদের জন্যে মুশরিক মেয়ে বিয়ে করাকে স্পষ্ট ভাষায় হারাম করে দিয়েছেন। আর মরিয়ম পুত্র ঈসা কিংবা অপর কোন আল্লাহর বান্দাকে রব বলে মনে করা অপেক্ষা বড় কোন শির্ক হতে পারে বলে আমার জানা নেই। আর ইয়াহুদী-নাসারাদের বিশ্বাস ও আকীদা এমনিই, তাই তারাও মুশরিকদের মধ্যে গণ্য । অতএব তাদের মেয়ে বিয়ে করাও জয়েয নয় ।
কেননা আহলি কিতাবও মুশরিক। এজন্যে ইয়াহুদীরা বলেছেঃ উজাইর • আল্লাহর পুত্র, আর খৃস্টানরা বলেছেঃ ঈসা আল্লাহর পুত্র। যদিও বদরুদ্দীন আইনী লিখেছেন যে, এ আয়াত মনসুখ হয়ে গেছে। মায়মুন ইবনে মাহরান হযরত ইবনে উমর (রা) কে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ আমরা এমন জায়গায় থাকি, যেখানে আহলি কিতাবের সাথে খুবই খোলা-মেলা থাকে । ইসলামিক কাহিনী ।
এমতাবস্থায় আমরা কি তাদের মেয়ে বিয়ে করতে পারি? এর জবাবে তিনি দু'টো আয়াত পাঠ করেনঃ “এবং আহলি কিতাব বংশের সেসব চরিত্র -সতীত্বসম্পন্না মেয়ে (বিয়ে করা তোমাদের জন্যে জায়েয।” এবং “এবং মুশরিক মেয়ে যতক্ষণ না ইসলাম কবুল করছে, ততক্ষণ তোমরা তাদের বিয়ে কোরো না।” প্রথম আয়াতে আহলি কিতাবে মেয়ে করা জায়েয বলা হয়েছে, আর দ্বিতীয় আয়াতে মুশরিক মেয়ে বিয়ে করতে স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করা হয়েছে।
অন্যকথায় তিনি এ ব্যাপারে নিজস্ব কোন ফয়সালা শোনালেন না। শুধু আয়াত পড়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয়ে থাকলেন। আল্লামা আবূ বকর লিখেছেন যে, একমাত্র হযরত ইবনে উমর ছাড়া সাহাবীগণের এক বিরাট জামা'আত যিম্মি আহলি কিতাবের মেয়ে বিয়ে করা জায়েয মনে করতেন। তাঁদের মতে দ্বিতীয় আয়াতটি কেবলমাত্র মুশরিকদের সম্পর্কেই প্রযোজ্য, সাধারণ আহলি কিতাবদের সম্পর্কে নয়।
হাম্মাদ বলেনঃ আমি হযরত সায়ীদ ইবনে জুবাইর (রা) কে ইয়াহুদী নাসারা মেয়ে বিয়ে করা জায়েয কিনা জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেনঃ তাতে কোন দোষ নেই। তাঁকে উপরিউক্ত দ্বিতীয় আয়াতটি স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে মূর্তিপূজক ও অগ্নিপূজক মেয়েদের সম্পর্কে নির্দেশ, তারা নিশ্চয়ই হারাম। হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান (রা) ফায়েলা বিনতে ফেরারা নাম্নী এক খৃস্টান মহিলা বিয়ে করেছিলেন।
হযরত তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা) ও এক সিরীয় ইয়াহুদী মেয়ে বিয়ে করেছিলেন। হাসান, ইবরাহীম নখয়ী ও শাবী প্রমুখ তাবেয়ী হাদীস-ফিকাহবিদও এ বিয়ে জায়েয বলে মনে করতেন। কিন্তু এ পর্যায়ে হযরত উমর ফারুক (রা) এর একটি নির্দেশ চমক লাগিয়ে দেয় ।
হযরত হুযায়ফা (রা) এক ইয়াহুদী মেয়ে বিয়ে করলে তিনি তাকে নির্দেশ পাঠালেনঃ ‘ইয়াহুদী মেয়ে বিয়ে করা কি হারাম?' ।
তার জবাবে হযরত উমর (রা) লিখলেনঃ “ হারাম নয় বটে, কিন্তু আমি ভয় করছি, আহলি কিতাব বলে তোমরা যদি তাদের বিয়ে কর তাহলে তোমরা তাদের মধ্য থেকে বদ্কার ও চরিত্র-সতীত্বহীনা মেয়েই বিয়ে করে বসবে।” যারা তিন খোদায় বিশ্বাসী, আল্লাহর অংশীদার আছে বলে যারা বিশ্বাসের তাদের সাথে বিয়ের সম্পর্ক স্থাপন সুস্পষ্ট হারাম কিন্তু আহলি কিতাবের অনুসারী মেয়ে বিয়ে করা অনেকে বৈধ মনে করেন কিছু শর্ত সাপেক্ষে।
নিজের চরিত্র ভালো রাখা, পাক পবিত্র থাকাসহ স্বামী ব্যতীত অন্য কারো সাথে মেলামেশা না করা ৷ কারণ ওদের মধ্যে উল্লেখিত ব্যাপারে তেমন বিধিনিষেধ নেই । তারপরেও সন্তান-সন্ততি মায়ের ধর্ম অথবা পিতার ধর্ম অনুসরণ করবে। এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ সমস্যা মুসলিম পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট। সুতরাং বিয়ের সম্পর্ক মুসলমানদের সাথে স্থাপন করাই সর্বদিক দিয়ে উত্তম ।
বিয়ের পূর্বে পাত্র-পাত্রীর মতামত জানতে হবে
দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন কোন সাময়িক বা ক্ষণস্থায়ী সম্পর্ক নয়৷ এটা চিরস্থায়ী ব্যাপার। সুতরাং হঠাৎ করেই এ ধরনের চিরস্থায়ী বন্ধন সৃষ্টি হতে যেমন, পারে না আর হলেও তার টিকে থাকার নিশ্চয়তা নেই। এ কারণে ইসলামের বিধান হলো কারো সাথে বিয়ের সম্পর্ক স্থাপন করার পূর্বে উভয় পক্ষের অভিভাবকগণ পরস্পরের প্রস্তাব দিয়ে আলাপ আলোচনা করবে। অথবা ছেলে বা মেয়েও তাদের নিজের বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারে। এ ব্যাপারে ইসলামে কোন বাধা নিষেধ নেই । হাদীস শরীফে এ ধরনের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়।ইসলামিক কাহিনী ।
বিশ্বনবী (দ) জুলাইবাব নামক এক সাহাবীর জন্যে এক আনসারী কন্যার বিয়ের প্রস্তাব কন্যার পিতার নিকট পেশ করেন। কন্যার পিতা তার স্ত্রী অর্থাৎ কন্যার মা'র মতামত জেনে এর জবাব দেবেন বলে ওয়াদা করেন। লোকটি তার স্ত্রীর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে এ বিয়েতে স্পষ্ট অমত জানিয়ে দেয় ।
কন্যাটি আড়াল থেকে পিতামাতার কথোপকথন শুনতে পায়। তার পিতা যখন রাসূলের নিকট এ বিয়েতে মত নেই বলে জানাতে রওয়ানা হয়ে যাচ্ছিলেন তখন মেয়েটি পিতামাতাকে লক্ষ্য করে বললঃ “তোমরা কি রাসূলে করীম (স) এর প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করতে চাও? তিনি যদি বরকে তোমাদের জন্য পছন্দ করে থাকেন তবে তোমরা এ বিয়ে সম্পন্ন কর।”
এ ঘটনা থেকে জানা গেল যে, মেয়ে নিজে তার বিয়ের প্রস্তাবে সম্পূর্ণ সম্মত ছিল এবং পিতামাতার নিকট তার মতামত যা গোপন ও অজ্ঞাত ছিল, যথাসময়ে সে তা জানিয়ে দিতে এবং নিজের পিতামাতার সামনে প্রস্তাবকে গ্রহণ করার জন্যে স্পষ্ট ভাষায় অনুমতি দিতে কোন দ্বিধাবোধ করেনি ।
আর এতে বস্তুতই কোন লজ্জা শরমের অবকাশ নেই। হযরত উমরের কন্যা হাফসা (রা) বিধবা হলে পরে তাঁর পূনর্বিবাহের জন্যে তিনি [হযরত উমর (রা)] প্রথমে হযরত উসমানের সাথে সাক্ষাত করেন এবং হাফসাকে বিয়ে করার জন্যে তাঁর নিকট সরাসরি প্রস্তাব পেশ করেন ।
তখন হযরত উসমান (রা) বললেনঃ এ সম্পর্কে আমার মতামত শীগগীরই জানিয়ে দেব। কয়েকদিন পর তিনি বললেনঃ আমি বর্তমানে বিয়ে করা সম্পর্কে চিন্তা করছি না। অতঃপর হযরত উমর (রা) হযরত আবূ বকরের নিকট এই প্রস্তাব পেশ করেন। islamic history,
কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে মতামত জানানো থেকে বিরত থাকলেন। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর হযরত নবী করীম (স) নিজেই নিজের জন্যে বিয়ের প্রস্তাব হযরত উমরের নিকট প্রেরণ করেন। এ ঘটনা থেকে জানা গেল, মেয়ে পক্ষও প্রথমেই বিয়ের প্রস্তাব পেশ করতে পারে। এতে কোন দোষ নেই। আর ছেলে পক্ষও৷ কিংবা ছেলে নিজেও বিয়ের প্রস্তাব প্রথমত কন্যা পক্ষের নিকট পেশ করতে পারে ।
শরীয়াতে এতে কোন আপত্তি নেই কিংবা কারো পক্ষেই কোন লজ্জা-শরমেরও কারণ নেই। হযরত আনাস (রা) বলেনঃ একদা একটি মেয়েলোক।সম্ভবত তার নাম লায়লা বিনতে কয়স ইবনুল খাতীম৷৷ রাসূলে করীম (স) এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে তাঁর সাথে নিজেকে বিয়ের প্রস্তাব সরাসরিভাবে পেশ করেন। সে বললঃ “হে রাসূল! আপনি আমাকে বিয়ে করার কোন প্রয়োজন মনে করেন?” হযরত আনাস যখন এ কথাটি বর্ণনা করছিলেন, তখন সেখানে তাঁর কন্যা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি পিতাকে সম্বোধন করে বললেনঃ “মেয়েলোকটি কতইনা নির্লজ্জ ছিল!” অর্থাৎ একটি মেয়েলোক নিজে নিজেকে রাসূলের নিকট বিয়ে দেয়ার জন্যে পেশ করেছে শুনে আনাস তনয়া উমাউনার বিশেষ বিস্ময় বোধ হয়েছে এবং এ কাজকে তিনি নির্লজ্জতার চরম বলে মনে করেছেন। তখন হযরত আনাস (রা) কন্যাকে লক্ষ্য করে বললেন, সে তোমার তুলনায় অনেক ভাল ছিল। সে রাসূলের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল এবং সে নিজেই নিজেকে রাসূলের নিকট বিয়ের জন্যে পেশ করেছিল।
হযরত সহল ইবনে সায়াদ সায়েদী বলেনঃ একটি মেয়েলোক রাসূলের নিকট এসে বললঃ আমি আপনার খেদমতে এসেছি এজন্যে যে, আমি নিজে আপনার নিকট সোপর্দ করব। তখন নবী করীম (স) তার প্রতি উদার দৃষ্টিতে তাকালেন, পা থেকে মাথার দিকে দেখলেন। অনেক সময় ধরে তিনি নির্বাক হয়ে থাকলেন৷ কোন জবাব দিলেন না। তখন উপস্থিত একজন সাহাবী বুঝতে পারলেন যে, নবী করীম (স) স্ত্রীলোকটিকে বিয়ে করতে রাযী নহেন। তাই তিনি দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে রাসূল!
এ মেয়েলোকটিতে আপনার যদি কোন প্রয়োজন না থাকে তবে আমাকে অনুমতি দিন তাকে বিয়ে করার। এ থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, কোন মেয়ে যদি বিশেষ কোন পুরুষের প্রতি মনে আকর্ষণ বোধ করে তবে সে নিজেই ছেলের নিকট বিয়ের প্রস্তাব পেশ করতে পারে। এতে না আছে কোন দোষ, না লজ্জা-শরমের কোন অবকাশ। তবে এ ব্যাপারে একটি বিশেষ স্পষ্ট নিষেধবাণী উচ্চারিত হয়েছে।
আর তা হচ্ছে, বিয়ের প্রস্তাবের উপর আর একটি নতুন প্রস্তাব দেয়া। কোন মেয়ে বা ছেলে সম্পর্কে যদি জানা যায় যে, কোথাও তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে বা কেউ বিয়ের প্রস্তাব পেশ করেছে, তাহলে সে প্রস্তাব সম্পূর্ণ ভেঙ্গে না যাওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় কোন প্রস্তাবই এক্ষেত্রে উত্থাপন করা যেতে পারে না। কেননা এতে করে সমাজে অবাঞ্ছনীয় প্রতিযোগিতার মনোভাব এবং পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতার ভাব সহজেই জেগে উঠতে পারে। আর তা সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলার দৃষ্টিতে খুবই মারাত্মক ।
এমনকি এতে করে ছেলে বা মেয়ের এমন ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে, যার ফলে তার বিয়েই চিরদিনের তরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এজন্যে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে। রাসূলে করীম (স) এ সম্পর্কে বলেছেনঃ “তোমাদের কেউ যেন অপর ভাইয়ের দেয়া বিয়ের প্রস্তাবের উপর নতুন প্রস্তাব পেশ না করে, যতক্ষণ না সে নিজেই সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে কিংবা তাকে নতুন প্রস্তাব পেশ করার অনুমতি দেবে।”
হাদীসটির উপরোদ্ধৃত ভাষা মুসলিম শরীফের
আর বুখারী শরীফে এ হাদীসের ভাষা নিম্নরূপঃ “কেউই তার ভাইয়ের দেয়া বিয়ের প্রস্তাবের উপর নতুন প্রস্তাব দেবে না॥যতক্ষণ না সে বিয়ে করে ফেলে অথবা সম্পূর্ণ প্রত্যাখান করে।” হযরত উকবা ইবনে আমের (রা) হতে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছেঃ “মু’মিন মু'মিনের ভাই। অতএব এক মু'মিনের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর অপর মু'মিনের ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ করা হালাল হতে পারে দেয়াও সঙ্গত নয় । না ।
অনুরূপভাবে এক ভাইয়ের দেয়া বিয়ের প্রস্তাব চূড়ান্ত না হতেই অপর প্রস্তাব
বিয়ের এক প্রস্তাবের উপর নতুন অপর একট প্রস্তাব দেয়া-এক প্রস্তাব সম্পর্কে চূড়ান্ত ফয়সালা হয়ে যাওয়ার পূর্বেই আর একটি প্রস্তাব পেশ করা যে ইসলামে জায়েয নয় বরং হারাম, এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের ইজ্জ্মা পরিপূর্ণ ঐকমত্য স্থাপিত হয়েছে। অবশ্য ইমাম খাত্তাবী বলেছেনঃ এ নিষেধ শুধু নৈতিকশিক্ষা, শালীনতা ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে মাত্র। অন্যথায় এ এমন হারাম কাজ নয়, যাতে করে বিয়েই বাতিল হয়ে যেতে পারে। islamic history,
কিন্তু দাউদ জাহেরী বলেছেনঃ এরূপ করে দ্বিতীয় ব্যক্তি যদি বিয়ে করে ফেলে তবে সে বিয়েই বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু এ উক্তিতে যে বাড়াবাড়ি রয়েছে তা সহজেই বোঝা যায়। শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী বিয়ের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব দেয়ার অপকারিতা এবং তা নিষেধ হওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ এর কারণ এই যে, এক ব্যক্তি যখন কোন মেয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়, তখন সেই মেয়ের মনেও তার প্রতি ঝোঁক ও আকর্ষণ স্বাভাবিকভাবেই জাগ্রত হয় এবং এর ফলে এই উভয়ের ঘর-সংসার গড়ে উঠার উপক্রম দেখা দেয় ।
এ সময় যদি সে মেয়ের জন্যে অপর কোন ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব পেশ করে, তাহলে প্রথম প্রস্তাবকে তার মনের বাসনায় ব্যর্থ মনোরথ করে দেয়া হয়, তার বাঞ্ছিত থেকে তাকে করে দেয়া হয় বঞ্চিত। আর এতে করে তার প্রতি বড়ই অবিচার ও জুলুম করা হয়,তার জীবনকে করে দেয়া হয় সংকীর্ণ।” শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ আরো লিখেছেনঃ “ বিয়ের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব করা” সম্পর্কিত উপরিউক্ত হাদীসের ভিত্তিতেই আমাদের মত হচ্ছে যে, এ কাজ হারাম।
ইমাম আবূ হানীফা ও হানাফী মাযহাবের সব ফিকাহবিদেরই এ মত। 'আল-মিন্হাজ’ কিতাবে বলা হয়েছেঃ “বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর তা যদি কবুল হয়ে গিয়ে থাকে, তবে তার উপর অপর কারো প্রস্তাব দেয়া সম্পূর্ণ হারাম।
তবে উভয় পক্ষের অনুমতি নিয়ে নতুন প্রস্তাব দেয়া যেতে পারে। কিংবা সে প্রস্তাব যদি প্রত্যাহার করে, তাহলেও দেয়া যায়। আর যদি প্রথম প্রস্তাবের কোন জবাব না দেয়া হয়ে থাকে, না প্রত্যাখ্যান করা হয়, তখন নতুন প্রস্তাব দেয়া বাহ্যত হারাম হবে না।”
ইসলামী শরীয়ত এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা দিয়েছে, কোন ঈমানদার ব্যক্তি জেনে বুঝে কোন বিয়ের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব দিতে পারে না । প্রথম প্রস্তাব বাতিল হলেই দ্বিতীয় প্রস্তাব দিতে পারে। এক সাথে যদি দু'পক্ষের নিকট হতে প্রস্তাব আসে। আর ঐ দু'পক্ষের মধ্যে শেষের জন যদি ঈমানদার হয় এবং প্রথম জন যদি ফাসেক হয় তাহলে শেষের র প্রস্তাব শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে। কেননা ফাসিক যারা। তারা যদি বিয়ের প্রথম প্রস্তাবকারী হয় তাহলে তার প্রস্তাবের উপর ঈমানদার ব্যক্তি প্রস্তাব দিতে পারে। কিন্তু দু'জন ঈমানদার ব্যক্তি এক সাথে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারে না ।
Disclaimer: যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন ! |