দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 51

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 51

যৌন কামনা স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য

যৌন কামনা চরিতার্থ ও বংশ বৃদ্ধি, মানসিক প্রশান্তি ইত্যাদি বহুবিধ কারণেই মানুষকে দাম্পত্য জীবনে আবদ্ধ হতে হয়। পৃথিবীর কোন প্রাণীই এই কামনা হতে মুক্ত নয়। মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। নির্দিষ্ট একটা বয়সে পৌঁছে সকল নর-নারীর মধ্যে কামনা প্রবল হয়ে ওঠে। নর কামনা করে নারীকে নিবিড়ভাবে। নারীও কামনা করে নরকে একান্ত আপন করে পরস্পর তারা মিলিত হতে চায়। ইসলামে এ যৌন মিলনকে কলুষতা মুক্ত ও অবাধ করার লক্ষ্যেই বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

বিবাহিত জীবনে মানুষ যেন নিঃশংক চিত্তে পূর্ণ তৃপ্তির সাথে যৌন কামনা চরিতার্থ করতে পারে। বিয়ে ব্যতীত যে কোন প্রকারেই হোক না কেন৷ যৌন কামনা চরিতার্থ করার অনুমতি ইসলাম দেয়নি ।
দাম্পত্য জীবনে যৌন মিলনের ক্ষেত্রে ইসলাম মানুষকে পশু স্তরে নেমে যাওয়ারও অনুমতি দেয়নি। মিলন করতে হবে অবশ্যই একান্ত গোপনে। শিশু অবুঝ মনে করে তার সামনে মিলিত হওয়া যাবে না। পরস্পরে সম্পূর্ণ বস্ত্রহীন হওয়া যাবে না । 

পর্দার মধ্যে মিলিত হতে হবে। মিলিত হবার পূর্বে অজু করতে হবে। মিলন শেষে অতিদ্রুত পাক-পবিত্র হতে হবে। স্বামীকে অবশ্যই স্ত্রীর কামনা পূর্ণ করতে হবে। স্ত্রী অসুস্থ বা অপারগ হলে স্বামীকে অবশ্যই সে দিকে দৃষ্টি দান করতে হবে ।
যৌনমিলনকে আল্লাহর নেয়ামত মনে করতে হবে। সুস্থ নারীকে লক্ষ্য করে যৌন মিলন সংক্রান্ত কতিপয় হাদীস উল্লেখ করা গেল। রাসূলে করীম (স) বলেছেনঃ “স্বামী যখন নিজের যৌন প্রয়োজন পূরণের জন্যে স্ত্রীকে আহ্বান জানাবে,তখন সে চুলার কাছে রান্না-বান্নার কাজে ব্যস্ত থাকলেও সে কাজে অমনি তার প্রস্তুত হওয়া উচিত।”

অপর হাদীসে এর চেয়েও কড়া কথা উল্লেখিত হয়েছে। বলা হয়েছেঃ “স্বামী যখন তার স্ত্রীকে নিজের শয্যায় আহ্বান করে (যৌন মিলনের উদ্দেশ্যে), তখন যদি সে সাড়া না দেয়॥ অস্বীকার করে, তাহলে ফেরেশতাগণ সকাল হওয়া পর্যন্ত তার উপর অভিশাপ বর্ষণ করতে থাকে।” এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী লিখেছেনঃ “হাদীসটি থেকে বাহ্যত মনে হয় যে এ ঘটনা যখন রাত্রি বেলা হয়, তখনই ফেরেশতারা অস্বীকারকারী স্ত্রীর উপর অভিশাপ বর্ষণ করে; কিন্তু আসলে কেবল রাতের বেলার কথাই নয়, দিনের বেলাও এরূপ হলে ফেরেশতাদের অভিশাপ বর্ষিত হবে। 

কিন্তু তা সত্ত্বেও যেহেতু যৌন মিলনের কাজ সাধারণত রাতের বেলাই সম্পন্ন হয়ে থাকে, এ জন্যে রাসূলে করীম (স) রাতের বেলার কথা বলেছেন। মূলত এ কথা রাত ও দিন উভয় সময়ের জন্যেই প্রযোজ্য।” অপর এক হাদীসে এ কথাটি অধিকতর তীব্র ভাষায় উদ্ধৃত হয়েছে । তা এই॥ “যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ করে বলছি, যে ব্যক্তিই তার স্ত্রীকে যৌন মিলনের উদ্দেশ্যে তার শয্যায় ডাকবে, তখন যদি স্ত্রী তা অমান্য করে। ইসলামিক কাহিনী।

যৌন মিলনে রাযী হয়ে তার কাছে না যায়, তবে আল্লাহ্ তার প্রতি অসন্তুষ্ট-ক্রুদ্ধ হয়ে থাকবেন যতক্ষণ না স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হবে।” অনুরূপ আর একটি হাদীসে বলা হয়েছেঃ “স্ত্রী যদি তার স্বামীর শয্যা ত্যাগ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে, তবে যতক্ষণে সে তার স্বামীর কাছে ফিরে না আসবে, ফেরেশতাগণ তার উপর অভিশাপ বর্ষণ করতে থাকে।”

আর একটি হাদীস হচ্ছেঃ “ তিন ব্যক্তির নামায কবুল হয় না আকাশের দিকে উত্থিত হয় না তাদের কোন নেক কাজও। তারা হচ্ছেঃ পলাতক ক্রীতদাস॥ যতক্ষণ না মনিবের নিকট ফিরে আসবে, নেশাখোর, মাতাল । যতক্ষণ না সে সমস্ত ও প্রকৃতিস্থ হবে এবং সেই স্ত্রী, যার স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট। যতক্ষণ না স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হবে।” ইবনে জাওজীর 'কিতাবুন্ নিসা'য় উদ্ধৃত অপর এক হাদীসে আরো বিস্তৃত কথা বলেছেন। 

হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেনঃ রাসূলে করীম (স) মুবিফা' ও 'মুগলিসা'র উপর অভিশাপ বর্ষণ করেছেন। 'মুবিফা বলতে বোঝায় সেই নারী, যাকে তার স্বামী যৌন মিলনে আহ্বান জানালে সে বলেঃ “ এই শীগিরই আসছি।' আর ‘মুগলিসা' হচ্ছে সেই স্ত্রী, যাকে তার স্বামী যৌন মিলনে আহ্বান জানালে সে বলে 'আমার হয়েছে’, অথচ প্রকৃতপক্ষে সে ঋতু অবস্থায় নয়।”

অবশ্য এ ব্যাপারে স্ত্রীর স্বাস্থ্য, মানসিক অবস্থা ও ভাবধারার প্রতি পুরোপুরি লক্ষ্য রাখতে হবে। স্বামী যদি নিতান্ত পশু হয়ে না থাকে, তার মধ্যে থেকে থাকে মানুষত্বসূলভ কোমল গুণাবলী, তাহলে সে কিছুতেই স্ত্রীর মর্জী-মনোভাবের বিরুদ্ধে জোর-জবরদস্তি করে যৌন মিলনের পাশবিক ইচ্ছাকে চরিতার্থ করতে যাবে না ।

সে অবশ্যই স্ত্রীর স্বাস্থ্যগত মানবিক সুবিধা-অসুবিধার, আনুকূল্য-প্রতিকূলতা সম্পর্কে খেয়াল রাখবে এবং রেখেই অগ্রসর হবে। উপরে উদ্ধৃত হাদীসসমূহ সম্পর্কে ইমাম নববী লিখেছেনঃ “এ সব হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোন প্রকার শরীয়াতসম্মত ওযর বা কারণ ছাড়া স্বামীর শয্যায় স্থান গ্রহণ থেকে বিরত থাকা স্ত্রীর পক্ষে হারাম।” স্ত্রীর কোন শরীয়াতসম্মত ওযর থাকলে স্বামীকে অবশ্যই এ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। 

ফিকাহবিদগণ এজন্যে বলেছেন, অধিক মাত্রায় যৌন সঙ্গম যদি স্ত্রীর পক্ষে ক্ষতিকর হয় তাহলে তার সামর্থ্যের বেশি যৌন সঙ্গম করা জায়েয নয়।” ইসলামিক কাহিনী।

দাম্পত্য জীবনে তাক্কাওয়াদারী-পরহেজগারী

স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনকে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বলা যেতে পারে। কেননা দাম্পত্য জীবনের মাধ্যমেই পৃথিবীতে মহান আল্লাহ মানব বংশ বৃদ্ধি ঘটান, এ মানব শিশু মাতা-পিতার কোল হতেই শিক্ষা পেতে শুরু করে। শিশুর জীবনে পরবর্তীতে এ শিক্ষা অমর হয়ে থাকে। এ কারণে স্বামী স্ত্রীকে হতে হবে পরহেজগার। স্বামী লক্ষ্য রাখবে এবং উৎসাহ প্রদান করতে স্ত্রীকে ইবাদাত বন্দেগী করার জন্যে। 

অনুরূপ স্ত্রীও উৎসাহ দেবে স্বামীকে। আর এই ধরনের স্বামী-স্ত্রীর কোলে যে সন্তান বড় হয়ে উঠবে, সে সন্তান নিঃসন্দেহে আল্লাহকে ভয় করতে শিখবে। মহানবী (দঃ) বলেন, “আল্লাহ্ যে পুরুষকে রহমত দান করবেন, সে রাতের বেলা জেগে উঠে নামায পড়বে এবং তার স্ত্রীকেও সেজন্য সজাগ করবে। স্ত্রী ঘুম ছেড়ে উঠতে অস্বীকার করলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেবে।” 

অনুরূপভাবে আল্লাহ্ রহমত দান করবেন সেই স্ত্রীকে যে, রাতের বেলা জেগে উঠে নিজে নামায পড়বে এবং সে তা স্বামীকেও সেজন্যে জাগাবে; স্বামী উঠতে না চাইলে মুখে পানি ছিটিয়ে দেবে। অপর এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ পুরুষ যখন তার স্ত্রীকে রাতের বেলা জাগাবে এবং দুজনেই নামায পড়বে৷ আলাদা আলাদাভাবে এবং দুরাকাত নামায একত্রে পড়বে, আল্লাহ্ এ স্বামী-স্ত্রীকে আল্লাহ্ ফিক্রকারী পুরুষ-নারীদের মধ্যে গণ্য করবেন।"

একের অধিক বিয়ে ও স্বামীর কর্তব্য

পবিত্র কোরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে মুসলিম পারিবারিক জীবনের মূল লক্ষ্যই হলো নারী-পুরুষের চরিত্রের হেফাজত করা। বিশেষত যে সব পুরুষ একজন স্ত্রী দ্বারা নিজের চরিত্রকে পবিত্র ও নিষ্কলুষ রাখতে পারে না, যৌন শক্তির প্রাবল্যে পরস্ত্রীর প্রতি আসক্ত হতে ও অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করতে যাদের বাধ্য করে,তার পক্ষে একাধিক স্ত্রী-দুজন থেকে প্রয়োজনানুপাতে চারজন পর্যন্ত গ্রহণ করা যে কর্তব্য তাতে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না ।

এ ধরনের ব্যক্তিদের পক্ষে এ কেবল অনুমতিই নয়, এ হচ্ছে তাদের প্রতি সুস্পষ্ট আদেশ। কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে চরিত্রের পবিত্রতা হচ্ছে সর্বাধিক গুরত্বপূর্ণ বিষয়। চরিত্রই যদি রক্ষা না পেল, তাহলে দুনিয়ায় মানুষের স্থান একান্তভাবে পশুদের স্তরে। আর চরিত্রকে রক্ষা করার জন্যেই এ কাজ যদি রক্ষা না পেল, তাহলে দুনিয়ায় মানুষের স্থান একান্তভাবে পশুদের স্তরে।  islamic history,

আর চরিত্রকে রক্ষা করার জন্যেই এ কাজ যদি অপরিহার্যই হয়, তাহলে তা অবশ্যই করতে হবে । ইসলামে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ মানবিক ও নৈতিক ব্যবস্থা মাত্র। ইসলাম ঠিক যে কারণে বিয়ে করার অনুমতি বা নির্দেশ দিয়েছে ঠিক সেই একই কারণে একাধিক (চারজন পর্যন্ত) স্ত্রী গ্রহণেরও অনুমতি দিয়েছে। এ অনুমতি যদি ইসলামে না থাকত, তাহলে বিয়ে করার অনুমতি বা আদেশ দেয়া একেবারেই অর্থহীন-উদ্দেশ্যহীন হয়ে যেত।

অবশ্য কুরআনের যে আয়াতে একাধিক বিয়ের এ অনুমতির উল্লেখ হয়েছে তাতেই এ পর্যায়ে একটি গুরুতর শর্তেরও উল্লেখ করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে সুবিচার, সমান মানে ও সমান প্রয়োজনে সকলের অধিকার আদায় করা।
কুরআন মজীদে এ সম্পর্কে যে আয়াতটি রয়েছে তা হচ্ছে এইঃ “তবে তোমরা বিয়ে কর যা-ই তোমাদের জন্যে ভাল হয়। 

দুইজন, তিনজন, চারজন।” ইমাম শাওকানী লিখেছেনঃ “এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, চারজনের অধিক স্ত্রী এক সময়ে ও এক সঙ্গে গ্রহণ করা হারাম। তাঁরা বলেছেন যে, এ আয়াতে সমগ্র মুসলিম উম্মাকে সম্বোধন করে কথা বলা হয়েছে। অতএব প্রত্যেক বিবাহকারী এ সংখ্যাগুলোর মধ্যে যে কোন সংখ্যক স্ত্রী ইচ্ছা করবে গ্রহণ করতে পারবে।” একাধিক স্ত্রী একসঙ্গে যদি কেউ গ্রহণ করে, তাহলে তাদের সকলের প্রতি সুবিচার ও ইনসাফ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

যদি কেউ সুবিচার ও ইনসাফ রক্ষা করতে পারবে না বলে ভয় করে, তবে তাকে একজন মাত্র স্ত্রী গ্রহণ করবার অনুমতি বা নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লামা রাগেব ইসফাহানী লিখেছেনঃ 'আদল'। সুবিচার-ইনসাফ। মানে সমতা, সাম্য, রক্ষা ও 'আদল' মানে সমানভাবে ও হারে বা পরিমাণে অংশ ভাগ করে দেয়া। “আর তোমরা যদি ভয় পাও যে, স্ত্রীদের মধ্যে 'আদল' করতে পারবে না” এর মানে।সেই আদল ও ইনসাফ যা স্ত্রীদের মধ্যে রাত বন্টন ও যাবতীয় ব্যয়ভার বহনের ব্যাপারে স্বামীকে করতে হয়।

” আল্লামা ইবনুল আরাবী লিখেছেনঃ “ এর অর্থ হচ্ছে স্ত্রীদের মাঝে রাত ভাগ করে দেয়া এবং বিয়েজনিত অধিকারসমূহ আদায় করার ব্যাপারে পূর্ণ সমতা রক্ষা করা, সমভাবে প্রত্যেকের প্রাপ্য তাকেই আদায় করা। আর এ হচ্ছে ফরয।” বস্তুত একাধিক স্ত্রীর স্বামীর পক্ষে রাত বন্টন ও যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র স্ত্রীদের মধ্যে পূর্ণ ইনসাফ ও সমতাসহকারে পরিবেশন একান্তই কর্তব্য। আর যদি সে তা রক্ষা করতে পারবে না বলে আশংকা বোধ করে তাহলে একজন স্ত্রীই গ্রহণ করা তার কর্তব্য।

সুবিচার পূর্ণ বন্টনের পর্যায়ে একথা মনে রাখা আবশ্যক যে, সংখ্যা ও পরিমাণ ইত্যাদির দিক দিয়ে ইনসাফ ও সমতা রক্ষা করার কথা এখানে বলা হয়নি । বরং বলা হয়েছে প্রত্যেক স্ত্রীর অধিকার সাম্য ও প্রয়োজনানুপাতে দরকারী জিনিস পরিবেশনের কথা। কেননা একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের সকলের প্রয়োজন রুচি ও পছন্দ যে একই ধরনের ও একই মানের হবে এমন কোন কথা নেই। 

কেউ হয়ত রুটিখোর, তার প্রয়োজন আটা বা রুটির। আর কেউ ভাতখোর, তার প্রয়োজন চাল বা ভাতের। কেউ হয়ত বেশ মোটা-সোটা, তার জামা ব্লাউজ ও পরিধেয় বস্ত্রের জন্যে বেশি কাপড় দরকার, আর কেউ হালকাপাতলা, শীর্ণ, তার জন্যে প্রয়োজনীয় কাপড়ের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম । কেউ বেশি বয়সে মেয়েলোক, স্বামীসঙ্গ লাভের পরিমাণ খুব বেশি নয়, খুব ঘন ঘনও প্রয়োজন দেখা দেয় না; আর কেউ হয়ত যুবতী, স্বাস্থ্যবতী, তার পক্ষে অধিক মাত্রায় স্বামীসঙ্গ লাভের দরকার। 

আবার কেউ যুবতী হয়েও রুগ্ন, তার যৌন মিলন অপেক্ষা সেবা শুশ্রুষা ও পরিচর্যার প্রয়োজন বেশি। কাজেই 'আদল' সুবিচার ও সমতার অর্থ পরিমাণ বা মাত্রা- সাম্য নয়, বরং তার মানে হচ্ছে সকলের প্রতি সমান খেয়াল রাখা, যত্ন নেয়া এবং প্রত্যেকের দাবী যথাযথভাবে পূরণ করা। প্রশ্ন হতে পারে, স্ত্রী কি কেবল এ সব বৈষয়িক জিনিস পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে পারে? এ ছাড়া প্রেম-ভালবাসাও তো প্রয়োজন রয়েছে এবং তাও তাদের পেতে হবে স্বামীর কাছ থেকেই। 

কাজেই সে দিক দিয়েও সমতা রক্ষা করা কি একাধিক স্ত্রীর বেলায় স্বামীর কর্তব্য নয়? এর জবাব হচ্ছে এই যে, হ্যাঁ, এসব জৈবিক প্রয়োজন ছাড়াও প্রেম-ভালবাসা প্রভৃতি আধ্যাত্মিক ও মানবিক প্রয়োজনও স্ত্রীদের রয়েছে এবং তাও স্বামীর কাছ থেকেই তাদের পেতে হবে, তাতে সন্দেহ নেই। আর এ ব্যাপারে যতদূর সম্ভব সমতা রক্ষা করা স্বামীর কর্তব্য ।

অন্তত সে জন্যেই তাকে প্রাণ-পণ চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, প্রেম-ভালবাসা, মনের ঝোঁক, টান, অধিক পছন্দ ইত্যাদি মনের গভীর সূক্ষ্ম আধ্যাত্মিক ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে মানুষের নিজের ইচ্ছে ও চেষ্টা-যত্নের অবকাশ খুবই সামান্য। মানুষ হাজার চেষ্টা করেও অনেক সময় সফল হতে পারে না । একেবারে সূক্ষ্ম তুলাদণ্ডে ওজন করে সমান মাত্রায় ভালবাসা সকল স্ত্রীর প্রতি পোষণ করা মানুষের সাধ্যাতীত। ঠিক এ সমস্যাই বাস্তবভাবে দেখা দিয়েছিল যখন একাধিক স্ত্রী গ্রহণের এ অনুমতি প্রথম নাযিল হয়েছিল।

সাহাবায়ে কিরাম একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করে তাঁদের মধ্যে প্রথম প্রকারের প্রয়োজন পূরণের দিক দিয়ে পূর্ণ সমতা রক্ষা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। এ চেষ্টায় তাঁরা সফলতাও লাভ করেছিলেন। কিন্তু প্রেম ভালবাসা, ভাল লাগা, পছন্দ হওয়া, মন-মেজাজের মিল ইত্যাদি দিক দিয়ে পূর্ণ সমতা রক্ষা করতে তাঁরা অসমর্থ হলেন। হাজারো চেষ্টা করেও তাঁরা সব স্ত্রীকে সমান মাত্রায় ভালবাসতে সমর্থ হলেন না। islamic story.

তখন তাঁরা মনের দিক দিয়ে খুব বেশি কাতর হয়ে পড়লেন, আল্লাহর কাছে এজন্যে কি জবাব দেবেন, এ চিন্তায় তাঁরা অস্থির হয়ে পড়লেন। তখন আল্লাহর তরফ থেকে এ বাস্তব সমস্যার সমাধান হিসেবে নাযিল হল এ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় আয়াতঃ “এবং তোমরা একাধিক স্ত্রীর মাঝে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না।যত কামনা ও ইচ্ছাই তোমরা পোষণ কর না কেন। 

এমতাবস্থায় (এতটুকুই যথেষ্ট) তোমরা স্ত্রীদের মধ্যে কোন একজনের প্রতি এমনভাবে পূর্ণমাত্রায় ঝুঁকে পড়বে না যে, অপর স্ত্রীকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে দেবে। তোমরা যদি কল্যাণপূর্ণ নীতি অবলম্বন কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক, তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অতীব ক্ষমাশীল সীমাহীন দয়াবান।' প্রেমভালবাসা ও যৌন সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে যে আদল ও সমতা রক্ষা করা আদৌ সম্ভব নয়, তার বাস্তব কারণ রয়েছে। একজনের কয়েকজন স্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে কেউ অধিক সুন্দরী হবে, কেউ হবে কুশ্রী।

কেউ যুবতী, কেউ অধিক বয়স্কা প্রায় বৃদ্ধা। কেউ স্বাস্থ্যবতী, কেউ রুগ্না, কেউ মিষ্টভাষী খোশ মেজাজী, স্বামীগতা প্রাণ; কেউ ঝগড়াটে, খিটখিটে মেজাজে ও কটুভাষী। এভাবে আরো অনেক রকমের পার্থক্য হতে পারে স্ত্রীদের পরস্পরের মধ্যে, যার দরুন এক স্ত্রীর প্রতি স্বামীর স্বাভাবিকভাবেই অধিক আকর্ষণ হয়ে যেতে পারে, আর কারোর প্রতি আগ্রহের মাত্রা কম হতে পারে। কারোর জন্যে হয়ত দরদে ভালবাসায় প্রাণ ছিড়ে যাবে আর কারোর দিকে তেমন টান অনুভূত হবে না । এ অতি স্বাভাবিক ব্যাপারে।

এজন্যে কোন স্বামীকে বাস্তবিকই দোষ দেয়া যায় না। কেননা প্রকৃতপক্ষে এর উপর কারোরই হাত নেই। মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক ও ইচ্ছে ক্ষমতা কোন কিছুই এখানে পুরোপুরি কাজ করতে পারে না। এজন্যে সব ব্যাপারে পূর্ণ সততা রক্ষা করা যে মানুষের সাধ্যাতীত, সাধ্যায়ত্ত নয়, তা-ই বলা হয়েছে আল্লাহ্ তা'আলার উপরোক্ত ঘোষণায় । আর আল্লাহর এ ঘোষণা যে কতখানি সত্য, তা রাসূলে করীমের অবস্থা দেখলেই বুঝতে পারা যায়। তিনি আর যা-ই হোন, একজন মানুষ ছিলেন। 

আর মানুষের মানবিক ও স্বভাবগত দুর্বলতা থেকেও তিনি মুক্ত ছিলেন। এ কারণে তিনি তাঁর সব কয়জন স্ত্রীর মধ্যে হযরত আয়েশা (রা) কে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন অথচ তিনি আল্লাহ্র নির্দেশ মুতাবিক জৈবিক যাবতীয় বিষয়ে পূর্ণ সমতা রক্ষা করে চলতেন। আর মনের টান, অধিক আকর্ষণ ও প্রেম-ভালবাসা তাঁর নিজ ইখতিয়ারের জিনিস ছিল না বলে সেক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করা তাঁর পক্ষেও সম্ভব হয়নি। এ কারণে তিনি আল্লাহ্র নিকট দোয়া করেছিলেন নিম্নরূপঃ “ হে আল্লাহ্! 

আমার সাধ্যানুযায়ী স্ত্রীদের মধ্যে অধিকার বন্টন করেছিলাম; কিন্তু যা আমার সাধ্যায়ত্ত নয়, বরং যা তোমার কর্তৃত্বাধীন; সে বিষয়ে অমান্য হয়ে গেলে তুমি নিশ্চয়ই সেজন্যে আমাকে পাকড়াও করবে না।” একাধিক স্ত্রীর মধ্যে জৈবিক বিষয়ে পূর্ণ সমতা রক্ষা করার নির্দেশ দেয়ার পর প্রেম-ভালবাসার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা মানুষের সাধ্যাতীত বলে সেক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা বান্দার উপর আরোপ করা হয়নি। এ জন্যে ইসলামী শরীয়াত তা কারোর নিকট দাবীও করে না। 

ইসলামী শরীয়াতের দাবী হচ্ছে এই যে, এরূপ অবস্থা সত্ত্বেও যখন তুমি একজনকে তালাক দিচ্ছ না বরং যে কারণেই হোক তাকে স্ত্রী হিসেবেই রেখে দিচ্ছ, তখন তার সাথে ঠিক স্ত্রীর মতই ব্যবহার করতে হবে, তাকে বিধবা বা স্বামীহীনা করে রেখে দিও না। আয়াতের শেষাংশে তাই বলা হয়েছেঃ “অতএব তোমরা সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড় না, যার দরুণ কোন স্ত্রীকে তোমরা ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে দেবে।”

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন !