দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 16

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 16

মহিলা মুর্দার লাশ দাফন

উল্লেখ্য, উপরে পুরুষদেরকে দাফন করার প্রণালী বর্ণনা করা হল । আর মহিলাদের মৃত্যুর সাথে সাথে সকল কাজ-কর্মসমূহ পর্দার ভেতর রেখে মুহুরেম তথা যাদের সাথে বিবাহ হারাম ছিল ঐসব লোকেরাই গোসল করাবে, খাট বহন করবে। আর খাট বহনের সময় অবশ্যই খাটের উপরিভাগে পাক-পবিত্র একটি কাপড় দিয়ে ঘেরাও করে কবরে নামাবে। এরপর যথারীতি কবর দিয়ে কবরের চিহ্ন করে রাখবে।

কবরের চিহ্ন রাখা

উল্লিখিত নিয়মে মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার পর যথারীতি কবর দিয়ে কবরের উপর মাঝখানে মাথা হতে পা পর্যন্ত লম্বালম্বীভাবে হাত খানেক উঁচু করে দু'দিকে ঢালু রাখবে। কবরের চার কোণে চারকুল পাঠ করবে এবং চারটি ভাল ফুল বা ফলের গাছ লাগিয়ে দেয়া উত্তম। এ ব্যাপারে বর্ণিত আছে, রাসূলে কারীম (সাঃ) একদা কোন এক কবরস্থান দিয়ে যাবার সময় একটি সবুজ ডালকে দুভাগ করে দু'টি কবরে পুঁতে রেখে ইরশাদ করলেন—যতক্ষণ পর্যন্ত এ ডালসমূহ তাজা থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ কবরের মাইয়্যেতগণের শাস্তি কম হবে ।

মৃত ব্যক্তির সাথে কবরের কথাবার্তা

পবিত্র হাদীস শরীফের বর্ণনায় জানা যায়, দাফন শেষে লোকজন চলে গেলে আকাশ হতে গায়েবী আওয়াজ হবে-হে আল্লাহ্র বান্দা! আজ তুমি স্বীয় স্ত্রী-পুত্র, কন্যা, পরিবার-পরিজন, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়গণের নিকট হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গহীন অন্ধকার কবরে নিঃসহায়ভাবে একাকী পড়ে আছ। দেখ তোমাকে একাকী রেখে সকলেই চলে গেছে। 

অথচ দুনিয়াতে তাদের সঙ্গ লাভের আশায় আমার অনেক আদেশ-নিষেধ অমান্য করে পাপাচারে লিপ্ত ছিলে, আজ সেসবের বিনিময়ে শাস্তির জন্য প্রস্তুত হও। হে আল্লাহ্র বান্দাহ্! আমি নির্জন অন্ধকারময় স্থান কবর । আমার মধ্যে বিষাক্ত পোকা-মাকড়, সাপ-বিচ্ছুতে ভরপুর। এখানে নিরাপদে থাকার জন্য কোনরূপ নেককাজ করে এসেছ কি? সঙ্গে কোরআন এনেছ কি? 

গহীন রাতের ‘ইবাদাতের আলো সাথে এনেছ কি? আমিতো কাঁচা মাটির ঘর, আমার মধ্যে নামায আদায়ের জন্য জায়নামায এনেছ কি? দুনিয়াতে আমার খবর শুনে চোখের পানি ফেলেছ কি? যাতে এসব সাপ-বিচ্ছুর আক্রমণ হতে রক্ষা পেতে পার? মুনকার ও নাকীর নামক ফিরিশতাদ্বয়ের পরীক্ষা আমার মাঝে তোমাকে দিতে হবে। এ পরীক্ষায় পাশ করার জন্য কোনরূপ প্রস্তুতি নিয়ে এসেছ কি? 

কালিমা পাঠ করে এসেছ কি? যদি তুমি পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশানুযায়ী চলে এসে থাক, তাহলে তোমাকে স্বাগতম। আর যদি এসব কিছুই না করে এসে থাক, তাহলে আজ তোমার কোনরূপ নিস্তার নেই। কেননা তুমি যত বড় শক্তিশালীই হও না কেন, তুমি শুনে রাখ যে, তোমাকে এমন চাপ দেব যা কোন দিন দেখনি এমনকি অনুভবও করতে পারনি। এ ভীষণ চাপের ফলে এক পাশের হাড্ডি অন্য পাশে নিয়ে যাব, যাতে হাড় ও গোশ্ত এক সাথে মিশে যাবে। 

একথা শুনার পর মৃত ব্যক্তি ভয়ে থর থর করে কাঁপতে শুরু করবে, কিন্তু তখনকার কম্পনে আর কোন লাভ হবে না ।
হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন—“মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার পর কবর বলবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি জন্য আমার কথা ভুলেছিলে? তুমি কি জান না, আমি দুঃখ-কষ্ট, অন্ধকার, নির্জনতা ও কীটপতঙ্গের ঘর? এ কথা তুমি কিভাবে ভুলেছিলে? 

আমার পাশ দিয়ে যাবার সময় কেন এত হতভম্ব হয়ে এক পা আগে আবার এক পা পিছে হাঁটছিলে? মৃত ব্যক্তি যদি নেককার হয়ে থাকে, তাহলে তার পক্ষ হতে একজন উত্তর দেবে-“হে কবর তুমি এসব কি বলছ? এ ব্যক্তি নেককার লোক ছিল। সে ব্যক্তি সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করেছিল। তখন কবর বলবে-“তাহলে আমি তার নিকট বাগানে পরিণত হলাম।” এরপর মৃত ব্যক্তির দেহ খুব জ্যোতির্ময় ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং তার আত্মা আকাশে চলে যাবে।

অপর এক বর্ণনায় নবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন—“মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখামাত্র তার শাস্তি আরম্ভ হয়। পার্শ্ববর্তী কবরস্থ এক মৃত ব্যক্তি উচ্চৈঃস্বরে তাকে বলতে থাকে—হে পরে আগমনকারী! তোমাকে (দুনিয়াতে) জীবিত রেখে তোমার আগেই আমরা চলে এসেছিলাম আমাদেরকে মরতে দেখে তুমি উপদেশ গ্রহণ করনি কেন? তুমি কি দেখনি, আমরা এ কবরে চলে এসেছি এবং আমাদের কাজ করার সুযোগ এবং ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে? 

আমাদের পর তুমি ভাল কাজ করার মত সুযোগ পেয়েছিলে। যে সব ভাল কাজ আমরা করতে পারিনি তুমি সেসব কাজ করনি কেন?” এভাবে মাটির নিচে চারদিক হতে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে- “ হে দুনিয়ার প্রতি আসক্ত ব্যক্তি! যারা তোমার মত দুনিয়ার মোহে আসক্ত ছিল এবং তোমার আগে মারা গিয়ে কবরে এসেছে, তাদেরকে দেখে কেন তুমি উপদেশ গ্রহণ করনি?”

পবিত্র হাদীস শরীফে আছে, নেককার বান্দাদেরকে কবরে রাখামাত্র তার সৎকর্মসমূহ তাকে বেষ্টন করে কবরের শাস্তি হতে বাঁচিয়ে রাখে। শাস্তি দানকারী ফিরিশতা বামদিক হতে আসতে থাকলে নামায এসে দাঁড়িয়ে বলবে—“ক্ষান্ত হও, এ লোক নামাযের জন্য দণ্ডায়মান থাকত।” মাথার দিক হতে শাস্তিদানকারী ফিরিশতা আসতে থাকলে রোযা দাঁড়িয়ে বলবে—“ ক্ষান্ত হও, এ ব্যক্তি দুনিয়াতে আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রচণ্ড ক্ষুধা-তৃষ্ণা সহ্য করে রোযা রেখেছে।” 

শরীরের পাশ দিয়ে শাস্তিদানকারী ফিরিশ্তা আসতে থাকলে হজ্জ ও জিহাদ বলবে—“ক্ষান্ত হও, এ ব্যক্তি আল্লাহর পথে সর্বশরীরে পরিশ্রম ও কষ্ট সহ্য করেছে।” হাতের দিক হতে আসতে থাকলে সাদকা বলবে—“হে ফিরিশ্তাগণ! ক্ষান্ত হও, এ ব্যক্তি হাত দিয়ে আল্লাহ্র পথে অনেক দান-সদকাহ্ করেছে।” এরপর আযাবের ফিরিশতাগণ মৃত ব্যক্তিকে বলতে থাকে--“তুমি সুখে থাক, তোমার মঙ্গল হউক।” 

অবশেষে রহমতের ফিরিশতা এসে তার জন্য কবরে বেহেশতী বিছানা বিছিয়ে দেয়, কবরকে যতদূর পর্যন্ত চোখের দৃষ্টি যায় ততদূর পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয় এবং বেহেশতের এক প্রদীপ এনে লটকিয়ে দিয়ে থাকে, যেন মৃত ব্যক্তি কবরে আলোতে থাকতে পারে। 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উবায়েদ (রাঃ) বলেন, রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন—“মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার জন্য যারা আগমন করেছে মৃত ব্যক্তি তাদের সকলের পায়ের আওয়াজ শুনতে পায়, কিন্তু কবর ব্যতীত কেউ তার সাথে কথা বলে না। কবর তাকে বলে, লোকে কি তোমার নিকট আমার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছ? ভয়াবহতা ও বিপদের কথা বলেনি? তুমি আমার নিকট আসার জন্য কি

রুমাত নামক ফিরিশ্তার আগমন

পবিত্র হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে— “মৃত ব্যক্তির কবরে মুনকার ও নাকীর নামক দুজন ফিরিশতা আগমনের পূর্বে রুমাত নামীর একজন ফিরিস্তা আসেন এবং মুর্দাকে বসিয়ে বলেন, তুমি দুনিয়াতে পাপ-পুণ্য যা কিছু করেছ তা তোমার নিজহাতে লিখে দাও। তখন মুর্দা বলবে, কিভাবে লিখব কারণ আমার নিকট লিখার সামগ্রী তথ্য দোয়াত, কলম, কাগজ, কালি কিছুই নেই।

তখন কমাত নামক ফিরিশতার নির্দেশে হাতের আঙ্গুলকে কলম, মুখের থুথুকে কালি, কাফনের কাপড়কে কাগজরূপে ব্যবহার করে পুণ্যকার্য ও পাপকার্যসমূহ লিখতে বাধ্য হবে। লিখা শেষ হলে ফিরিশ্তার হুকুমে মুর্দার হাতের আঙ্গুলের টিপসই করিয়ে নিয়ে সে লেখা কাপড়টি মুর্দার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে চলে যাবে।

মুনকার-নাকীরের প্রশ্ন

রাসূলে কারীম (সাঃ) পবিত্র হাদীস শরীফে ইরশাদ করেন- “মানুষ মারা গেলে দু'জন ফিরিশতা তার নিকট আগমন করে। তাদের মুখমণ্ডল কৃষ্ণবর্ণ ও চোখসমূহ নীল বর্ণ। এক জনের নাম মুনকার, অপরজনের নাম নাকীর।” মুনকার এবং নাকীর নামক ফিরিশতার মুর্দাকে যে সব প্রশ্ন করবে এবং আাদের তিরূপ অবস্থা হবে তা নিম্নে উল্লেখ করা হল।

কবরের প্রথম প্রশ্ন

(মান রাব্বুকা) তোমার এন্ড্রু কে? কবরবাসী যদি নেক্কার হয়, তখন সে উত্তর দেবে (রাদী আল্লাহু)
আমার প্রভু হলেন মহান আল্লাহ্ তায়ালা।

কবরের দ্বিতীয় প্রশ্ন

(ওয়ানা দ্বীনুকা) তোমার ধর্ম (দ্বীন) কি?
কবরবাসী যদি নেককার হয় তখন সে উত্তর দেবে
(দ্বীনিয়াল ইসলাম) আমার ধর্ম (দ্বীন) হল পবিত্র ইসলাম ।

কবরের তৃতীয় প্রশ্ন

(ওয়ামান হাযার রাসূলু) (ইঙ্গিত দিয়ে দেখিয়ে বলবে) এ লোকটি কে? কবরবাসী যদি নেক্কার হয়, তখন সে (হাযা নাবীয্যুনা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু 'আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ইনি হলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ)।
আর যদি উক্ত কবরবাসী বদকার, বদনসীব হয়, তাহলে সে ব্যক্তি উত্তর দিবে ৬,১। (হাহ্-হাহ্ লা-আদরী) হায় আফসুস! আমি কিছুই জানি না । রাসূলে কারীম (সাঃ) হযরত ওমর (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন—“হে ওমর! 

তুমি যখন মারা যাবে তোমার আপন লোকজন তোমার জন্য চারগজ লম্বা ও সোয়াগজ চওড়া কবর খনন করবে, এরপর তোমাকে গোসল দিয়ে কাফন পরিয়ে উক্ত কবরে রাখবে এবং তোমাকে দাফন করে নিজ নিজ ঘরে ফিরে আসবে, আর কবরে প্রশ্নকারী ফিরিশ্তা মুনকার ও নাকীর এসে উপস্থিত হবে, তাদের শব্দ বজ্রধ্বনির মত ভয়ঙ্কর, চোখগুলো বিদ্যুতের মত ভীষণ, চুলসমূহ পা পর্যন্ত লম্বা এবং তাদের দাঁত দিয়ে কবরের মাটি এলোমেলো করতে থাকবে। তখন তোমার অবস্থা কেমন হবে? হযস্ত ওমর (রাঃ) আরজ করলেন—“হে আল্লাহর রাসূল!

 তখন কি 'আমার বুদ্ধি ঠিক থাকবে?” নবী কারীম (সাঃ) বললেন, “হ্যাঁ ঠিক থাকবে।” হযরত ওমর (রাঃ) পুনরায় আরজ করলেন, তাহলে আমার কোন ভয় নেই, আমি তাদের প্রশ্নের ঠিক ঠিক উত্তর দেব ।

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন