দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 17

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 17

কবরের শাস্তি

পবিত্র হাদীস শরীফে আছে—“কবরে কাফিরের প্রতি শাস্তি দেয়ার জন্য দুজন অন্ধ ও বধির ফিরিশতা নিযুক্ত হবে। উক্ত ফিরিশ্তাগণের হাতে লোহার মুগুড় থাকবে। এদের মাথা উটের পানপাত্র ডোলের মত হবে। ফিরিশ্তাগণ উক্ত লোহার মুগুড় দ্বারা কিয়ামত পর্যন্ত তাকে প্রহার করতে থাকবে। তাদের চক্ষু নেই যে, তারা এ দুরবস্থা দেখে একটু দয়া করবে। আবার কান নেই যে, তার কান্নার আওয়াজ এবং অনুনয়-বিনয় শুনবে।”

হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন-“কবর প্রতিটি মৃত ব্যক্তিকে চাপা দেয়। কেউ এ চাপ হতে বাঁচলে সা'আদ ইবনে মু'আয (রাঃ) রক্ষা পেয়ে থাকত।” হযরত আনাস (রাঃ) বলেন—হযরত যয়নাব (রাঃ) রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর কন্যা ছিলেন। 

তিনি ইন্তিকাল করলে হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ) তাঁকে কবরে রাখলেন, তখন নবী কারীম (সাঃ)-এর চেহারা মুবারক নিতান্ত পাণ্ডুর বর্ণ ধারণ করল। কিন্তু (কবর হতে) বাইরে আসার সময় তাঁর চেহারা মুবারক আগের মতই নূরানী রূপ ধারণ করল । আমরা আরয করলাম— “ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! আপনার চেহারা মুবারকের পরিবর্তন ঘটেছিল কেন? 

তিনি বললেন— কবরের চাপ এবং তার আযাবের কথা আমার মনে পড়েছিল। তখন আমি জানতে পারলাম, আল্লাহ্ যয়নাবের উপর কবরের চাপ ও শাস্তি সহজ করে দিয়েছেন। কিন্তু তথাপিও কবর তাকে এমন জোরে চাপ দিতেছে যে, সকল প্রাণী তার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। 

রাসূলে কারীম (সাঃ) বলেন—“কবরে কাফিরদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য ১৯টি বিষধর অজগর নিযুক্ত করা হয়। সে অজগরসমূহ কিরূপ তোমরা জান কি? ৯৯টি অজগর প্রত্যেকটির নতুন নতুন মাথা হয়ে থাকে, তারা ঐ কাফিরকে দংশন করে, তাকে জড়িয়ে ধরে এবং ফোঁস ফোঁস করতে থাকে। 

এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত চলবে।” নবী কারীম (সাঃ) বলেন—“কবর আখিরাতের প্রথম ঘাঁটি। এ ঘাঁটি নিরাপদে পার হতে পারলে এরপর যত ঘাঁটি আছে সে সবগুলো অত্যন্ত সহজ হবে। আর কবরেই যার কষ্ট হবে, এর পরবর্তী ঘাঁটিসমূহও তার জন্য এর অপেক্ষাও বহুগুণে কষ্টদায়ক এবং কঠিন হবে।”

জীবিত লোকেরা মৃত লোকদের অবস্থা কাশফ দ্বারা নিদ্রাবস্থায় স্বপ্নে জানতে পারে বটে, কিন্তু পঞ্চইন্দ্রিয়ের সাহায্যে তা জানা যায় না। কারণ মৃত ব্যক্তি যে রাজ্যে গেছে সে রাজ্যের অবস্থা পঞ্চইন্দ্রিয় জানতে পারে না । কান যেমন শব্দ শুনতে পায় না, চোখ দেখতে পায় না, ইন্দ্ৰিয়সমূহও তদ্রূপ পরজগতের অবস্থা জানতে পারে না। 

তবে মানুষের মধ্যে ইন্দ্রিয়ের বাইরে এমন এক শক্তি আছে, যা দ্বারা সে পরজগত সম্পর্কে জানতে পারে। কিন্তু এ শক্তি ইন্দ্রিয়সমূহের ব্যস্ততা ও দুনিয়ার অধিক কাজকর্মের কোলাহলে লুকিয়ে থাকে। ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষ দুনিয়াবী কাজকর্ম হতে একটু নিস্তার পায়, তখন মানুষের সে সুপ্ত শক্তি মৃতদের অবস্থার সামান্য নিকটবর্তী হয় এবং মৃতদের অবস্থা তার নিকট প্রকাশ পেতে থাকে। 

এ কারণেই মৃত ব্যক্তিরাও জীবিতদের খবর পেয়ে থাকে। এমনকি তারা আমাদের সৎ কাজে সন্তুষ্ট এবং পাপ কার্যে দুঃখিত হয়, এ মর্মে বহু হাদীস বর্ণিত রয়েছে। মোটকথা হল, মৃতদের অবস্থা জীবিতদের নিকট এবং জীবিতের অবস্থা মৃতের নিকট কেবল লাওহে মাহফুজের মধ্যস্থতায় প্রকাশ পায়। 

কারণ, আমাদের জীবিতদের এবং মৃতদের সকল অবস্থা লাওহে মাহফুজে অঙ্কিত আছে। ঘুমন্ত অবস্থায় লাওহে মাহফুজের সাথে মনের সম্বন্ধ স্থাপিত হয় বলে স্বপ্নযোগে মৃতদের অবস্থা তার নিকট প্রকাশিত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে মৃতদেরও লাওহে মাহফুজের সাথে সম্পর্ক হয়। সুতরাং তারাও এ হতে
আমাদের অবস্থা জেনে নেয়।

মহিলাদের যিয়ারত সম্পর্কীয় নিয়ম

মহিলাদের কবর যিয়ারতের জন্য কবরস্থানে না যাওয়া উত্তম। তবে যদি একান্তই যাবার ইচ্ছা করে, তাহলে তারা শুধুমাত্র মাতা-পিতা, সহোদর ভাইবোন, ছেলে-মেয়ে ও স্বামী এক কথায় মোহরেম ব্যক্তিদের কবর ছাড়া গায়রে মোহরেনদের কবরে যাওয়া উচিত নয়।

মৃতের পরিবারের জন্য খানা পাঠানো

কোন লোক মারা যাবার পর তার আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের উচিত যে, মুভের পরিবারের সদস্য তথা শোকার্ত পরিবারের লোকদের জন্য খানা-খাদ্য পাঠিয়ে দেয়া, তাদের খোঁজ-খবর নেয়া। এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীস শরীফে গুরুত্ব প্রদান করে উল্লেখ করা হয়েছে—“মৃতব্যক্তির নিকট আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের উচিত, মাইয়্যেতের ইন্তিকালের দিনে তার বাড়িতে খানা পাঠিয়ে দেয়া।” (বুখারী, মুসলিম)

তাজিয়াত বা সান্তনা দান ঃ মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনদের ধৈর্যধারণের উদ্দেশ্যে কিছু সান্ত্বনামূলক বাণী শুনানোকে ইসলামী শরী'আতের পরিভাষায় তাজিয়াত বলে। স্বয়ং রাসূলে কারীম (সাঃ) নিজেও তাজিয়াত করেছেন এবং অন্যদেরকেও এ ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন। 

পবিত্র হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে— “যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্ত লোকের তাজিয়াত করে তার জন্য এরূপ প্রতিদান রয়েছে, যা স্বয়ং বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য রয়েছে।
শোকার্তদের জন্য খানা পাঠানো : কোন লোক মৃত্যুবরণ করলে তার বাড়িতে সে পরিবারের লোকদের জন্য খানা পাঠানোর বিধান দিয়ে রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন—“মৃত ব্যক্তির পরিবারস্থ লোকদের জন্য তার নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীরা খানা পাঠানো উচিত ।

নির্দিষ্ট দিনে চল্লিশা করা

কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর চতুর্থ, সপ্তম বা চল্লিশদিনের দিন-তারিখ নির্ধারণ করে কোন ভোজের আয়োজন করা শরী'আতের বিধান অনুযায়ী বিদ'আতের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কোন দিন-তারিখ বাধ্যকতা হিসেবে নির্ধারণ না করে বরং সময়-সুযোগমত মৃত ব্যক্তির রূহের উপর ছাওয়াব রেছানী করার উদ্দেশ্যে দান-সদকা বা ভোজের আয়োজন করাতে কোন দোষ নেই, বরং এতে অনেক ছাওয়াব হয়ে থাকে।

মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পত্তি বণ্টন

সম্পত্তি বণ্টনের পূর্বে করণীয় কাজসমূহ ঃ কোন মুসলমান মারা যাবার পর তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তিসমূহে চার ধরনের হক জড়িত হয় ।
যথা—১। কাফন-দাফন,
২। ঋণ পরিশোধ ।
৩। অছিয়ত পূরণ,
৪ । ওয়ারিশগণ ।

নিম্নে এসবের আলোচনা করা হল ঃ
১। মৃত ব্যক্তি মারা যাবার পর তার সম্পত্তিসমূহ হতে তার
দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করতে হবে ।
২। দাফন-কাফনের কাজ সমাধা করার পর দেখতে হবে সে ঋণগ্রস্ত আছে কি না? যদি ঋণগ্রস্ত থাকে তাহলে তার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩। ঋণ পরিশোধ করার পর যদি তার কোন অছিয়ত থাকে তাহলে তা পূরণ করবে। তবে অছিয়তের ক্ষেত্রে বিধান হল, উক্ত দু'প্রকারের কাজ সমাধা করার পর অবশিষ্ট সকল সম্পত্তিসমূহের তিন ভাগের এক ভাগ মাত্র অছিয়তের কাজে ব্যয় করবে। মৃত ব্যক্তি যদি তার সকল সম্পত্তি অছিয়ত করে যায় তবুও উক্ত তিনভাগের একভাগই দান করা যাবে। আর যদি ওয়ারীশগণদের মধ্যে কোন আপত্তি না থাকে তাহলে সমূদয় সম্পত্তি অছিয়ত করা যাবে ।

৪ । উল্লিখিত তিন প্রকারের কাজ সমাধা করার পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকবে, তা কোরআন ও হাদীসের বিধান অনুপাতে ওয়ারীশগণের মধ্যে বন্টন করতে হবে ।

ওয়ারীশগণের প্রকারভেদ

মৃত ব্যক্তির অবর্তমানে তিন ধরনের লোক তার সম্পত্তির ওয়ারীশ হয়। যথাঃ ১। যবীউল ফুরুয, ২। আছাবা । ৩ । যবিউল আরহাম । নিম্নে তাদের বিবরণ উল্লেখ করা হল ।
১। যবিউল ফুরুয ঃ অর্থাৎ ঐ সকল ওয়ারীশগণ যাদের অংশ পবিত্র কোরআনে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
২। আছাবা : যবিউল ফুরুষদের অংশ দেয়ার পর অবশিষ্ট অংশ যারা পেয়ে থাকে বা যবিউল ফুরুষদের অবর্তমানে যারা সম্পূর্ণ সম্পত্তি পেয়ে থাকে তাদেরকে আছাবা বলে ।

৩। যবিউল আরহাম : অর্থাৎ ঐ সকল ওয়ারীশগণ যারা যবিউল ফুরুয ও আছাবাদের অবর্তমানে সম্পত্তির অংশ পেয়ে থাকে। অবশ্য স্বামী-স্ত্রী জীবিত থাকলেও তারা সম্পত্তি পেয়ে থাকে। নিম্নে তাদের সংখ্যা ও অংশসমূহের আলোচনা করা হল ।

যবিউল ফুরুযের সংখ্যা ও অংশসমূহ

যবিউল ফুরুযের সংখ্যা পুরুষের মধ্যে চারজন, আর মহিলাদের মধ্যে আটজন, মোট ১২ জন ।
চারজন পুরুষ ঃ ১। বাপ, ২। দাদা, ৩। বৈপিতৃয় ভাই অর্থাৎ-যার মা এবং মৃত ব্যক্তির মা একই কিন্তু বাপ ভিন্ন ।
আটজন মহিলা : ১। স্ত্রী ২ । কন্যা ৩। পৌত্রি বা নাতনি যত নিচে যাবে। ৪। আপন বোন, ৫। বৈমাতৃক বোন। অর্থাৎ যার পিতা এবং মৃত ব্যক্তির পিতা একই কিন্তু মা ভিন্ন । ৬। বৈপিতৃক বোন। ৭। মা ৮। দাদী । নিম্নে প্রত্যেকের প্রাপ্য অংশসমূহ পৃথকভাবে উল্লেখ করা হল ।

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন !