দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 29

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 29

হজ্জের বিবরণ

হজ্জ শব্দের অর্থ ইচ্ছা করা, সংকল্প করা। হজ্জ ইসলামের অন্যতম একটি ভিত্তি। নির্দিষ্ট সময়ে ইসলামী শরীয়তের বিধান সম্মতভাবে পবিত্র বায়তুল্লাহ ও মদীনা শরীফের যিয়ারত করাকে হজ্জ বলে।
• পবিত্র হাদীস শরীফে নবী (সাঃ) ইরশাদ করেন—“তোমরা হজ্জ আদায় কর । কেননা হজ্জ গুনাহ্সমূহকে এমনভাবে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দেয়, পানি যেমনভাবে ময়লাসমূহকে দূর করে দেয়।”

o যখন কারও উপর হজ্জ ফরয হয়, তখন সাথে সাথে ঐ বছরই হজ্জ সম্পাদন করা ওয়াজিব। বিনা ওজরে দেরি করা বা এরূপ ধারণা করা যে, সময় তো আছে, পরে যে কোন এক বছর হজ্জ করলেই তো চলবে, এরূপ ধারণা করা নাজায়েয। অবশ্য দু'চার বছর পর হজ্জ আদায় করলেও আদায় হবে।
o হজ্জ ফরয হওয়া সত্ত্বেও যে সব লোক গড়িমসি করে হজ্জ আদায় করবে না, তাদের জন্য মহানবী (সাঃ) কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে—“হজ্জ ফরয হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি হজ্জ আদায় করল না, সে ইহুদী কিংবা নাছারা হয়ে মারা যাক; আল্লাহ্র সাথে তার কোন সংশ্রব নেই।”

o ফরয হজ্জ ছাড়া যদি কোন লোক কোন কারণে হজ্জের মান্নত করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তির উপর হজ্জ আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায় । একবারের বেশি কয়েকবার হজ্জ করলে প্রথম হজ্জটি ফরয হিসেবে আদায় হয়ে পরবর্তী সবক'টি হজ্জ নফল হজ্জ হিসেবে গণ্য হবে। islamic story bangla,

এছাড়া কোন লোকের উপর হজ্জ আদায় করা ফরয ছিল, কিন্তু বিশেষ কোন অসুবিধার কারণে সে নিজে না গিয়ে কাউকে দিয়ে বদলী হজ্জ করালেও তা আদায় হয়ে যাবে। হজ্জের শর্তসমূহ পাওয়া গেলে সমস্ত জীবনে মাত্র একবারই হজ্জ ফরয হয়ে থাকে। সুতরাং হজ্জ ফরয হওয়ার সাথে সাথেই তা আদায় করা উচিত।

হজ্জের প্রকারভেদ

হজ্জ সাধারণত তিন প্রকার। যথা- ১। হজ্জে কেরান, ২। হজ্জে তোমাত্ত্বো'অ, ৩। হজ্জে ইফরাদ। নিম্নে এগুলোর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।
১। হজ্জে ক্বেরান ঃ ঐ হজ্জকে বলে, যার মধ্যে হজ্জে গমনকারী ব্যক্তি নির্দিষ্ট স্থান হতে একই সাথে হজ্জ এবং ওমরার জন্য ইহরাম বাঁধবে। এরপর ওমরার কাজ সমাপ্ত করে ইহরাম অবস্থায় থেকে যিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখ হতে পুনরায় হজ্জের কাজ আরম্ভ করবে।

২। হজ্জে তামাত্ত্বো'অ ঃ ঐ হজ্জকে বলে, যার মধ্যে হজ্জে গমনকারী ব্যক্তি প্রথমে কেবল ওমরার জন্য ইহরাম বেঁধে ওমরার কাজ আদায় করে এবং এরপর মাথা মুণ্ডন করে হালাল হয়ে যায়।
অতঃপর জিলহজ্জ মাসের ৮ম তারিখে পুনরায় হজ্জের জন্য ইহরাম বেঁধে হজ্জের আহকামসমূহ আদায় করবে।
৩। হজ্জে ইফরাদ : ঐ হজ্জকে বলে যে হজ্জে গমনকারী ব্যক্তি কেবলমাত্র হজ্জের ইহরাম বেঁধে হজ্জের কাজসমূহ আদায় করবে এবং সাথে ওমরার জন্য ইহরাম বাঁধবে না।

স্মরণ রাখা প্রয়োজন, পবিত্র কা'বা শরীফকে সাতবার প্রদক্ষিণ এবং ছাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে সাতবার দৌড়ানোকেই ওমরা বলা হয়। শুধু হজ্জের নিয়্যতে ইহরাম বাঁধলেও এ কাজটি হজ্জের মধ্যে করতে হয়। আর পৃথকভাবে নিয়্যত করে এসব কাজগুলো করলে তাকে ওমরা
বলে।

হজ্জ ফরয হওয়ার শর্তসমূহ

হজ্জ ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত, যা মহান আল্লাহ্ তা'আলার নির্দেশ। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে— “যেসব লোকের টাকা-পয়সার বিনিময়ে অনায়াসে হজ্জে যাওয়ার ক্ষমতা, আছে, মহান আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে তাদের জন্য হজ্জ করা ফরয।” এছাড়া নিম্নলিখিত ছ'টি শর্ত পাওয়া যেতে হবে ।

১। এমন ধনী হতে হবে যারা পবিত্র মক্কা-মদীনা শরীফে গিয়ে সেখানে অবস্থান এবং হজ্জের বিধানসমূহ পালনের পর ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত যাবতীয় খরচসমূহ বহন করার মত ক্ষমতা আছে। ২। হজ্জে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হওয়ার সময় হতে পুনরায় ফিরে আসা পর্যন্ত নিজ পরিবার-পরিজনের সমৃদয় খরচপত্রের মত টাকা-পয়সা থাকতে হবে। ৩।

হচ্ছে যাওয়ার জন্য পথে কোনরূপ বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা যাতায়াতের পথে কোনরূপ মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা না থাকা। ৫। আকেন, বালেগ, সুস্থ-সবল মুসলমান হওয়া। ৬। স্ত্রী লোকের সাথে তার স্বামী বা এমন কোন লোক থাকা যাদের সাথে বিবাহ আবদ্ধ হওয়া হারাম ।

হজ্জের ফরয কাজসমূহ

হজ্জ সম্পাদন করার জন্য তিনটি কাজ করা ফরম। যথা
১। হজ্জ্ব করার আগে ইহরাম বাঁধা। ২। জিলহজ্জের ৯ তারিখে আরাফাতের মাঠে অবস্থান করা। ৩। দশ, এগার অথবা বার তারিখে পবিত্র কা'বা শরীফের তাওয়াফ করা ।

হজ্জের ওয়াজিব কাজসমূহ

হজ্জ সম্পাদনের জন্য নিম্নলিখিত পাঁচটি কাজ করা ওয়াজিব :
১। আরাফাতের মাঠে অবস্থান শেষে ফেরার পথে মুযদালিফা নামক স্থানে রাত যাপন করা। ২। মিনা বাজার গিয়ে (শয়তানকে) পাথর মারা। ৩। সাফা-মারওয়া নামক দু'টি পাহাড়ে সা'য়ী (দৌড়ান) করা। ৪। মাথা মুড়ে ফেলা অথবা চুল ছোট করা। ৫। বিদেশী হাজীগণের জন্য হজ সম্পাদন শেষে বাড়ী ফেরার সময় পবিত্র কা'বা শরীফের তাওয়াফ করা।

হজ্জের সুন্নত কাজসমূহ

হজ্জ সম্পাদন করার জন্য নিম্নলিখিত পাঁচটি কাজ করা সুন্নত ঃ
১। ছতর ঢাকা অবস্থায় পবিত্র কা'বা শরীফ তাওয়াফ করা। । তাওয়াফে কুদুম অর্থাৎ পবিত্র কা'বা শরীফ প্রথম দেখার সাথে সাথে তাওয়াফ করা। ৩। ইমামের সাথে 'আরাফাতের মাঠে অবস্থান করা। ৪। সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাতবার দৌঁড়ান। ৫। মীনাতে রাত যাপন করা
ইত্যাদি।

হজ্জের সময় নিষিদ্ধ কাজসমূহ

হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে গিয়ে যেসব কাজসমূহ করা নিষেধ তা নিম্নে
উল্লেখ করা হল ঃ 
(ক) স্ত্রী সহবাস করা বা সহবাসের আলোচনা করা। (খ) গালিগালাজ করা এবং ঝগড়া-বিবাদ করা। (গ) ইশারা-ইঙ্গিত দিয়ে কোন শিকারী ব্যক্তিকে শিকার দেখিয়ে দেয়া কিংবা শিকারের পলায়নের রাস্তা দেখিয়ে দেয়া অথবা নিজেই শিকার করা। (ঘ) সেলাই করা কোন পোশাক বা পাগড়ী পরিধান করা। (ঙ) দাঁড়ি, মোচ, চুল, নখ ইত্যাদি কাটা । (চ) কোনরূপ সুগন্ধি ব্যবহার করা। (ছ) কোনরূপ রং করা পোশাক পরিধান করা। (জ) যায়তুন বা এ ধরনের কোন সুগন্ধিযুক্ত তেল ব্যবহার করা ইত্যাদি ।

হজ্জ সম্পাদন করার নিয়মাবলী

যখন ইহ্রাম বাঁধার ইচ্ছা করবে, তখন ইহ্রাম বাঁধার নির্ধারিত স্থানে বা অন্য কোন খানে অযূ-গোসল করে দুরাক'আত নামায পড়বে। এরপর যে প্রকারের হজ্জ আদায় করবে সে প্রকারের নিয়্যত করবে। যথা ঃ হজ্জে কেরানের ইচ্ছা করলে বলবে, “হে আল্লাহ্! আমি হজ্জ ও ওমরাহ উভয়ই আদায় করার সংকল্প করছি। অতএব তুমি এ দু'টি কাজকে আমার জন্য সহজ করে দাও এবং আমার পক্ষ হতে এগুলো কবুল কর।”
নিয়্যত করার পর নিম্নলিখিত তালবিয়াটি পাঠ করবে—

উচ্চারণ : লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা লাব্বাইকা লা শারীকালাকা লাব্বাইকা ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি'মাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা শারীকা
লাকা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি হাজির আছি, আমি হাজির আছি! আমি হাজির আছি! তোমার কোন অংশীদার নেই, আমি হাজির আছি! নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও গুণ-গান তোমারই জন্য এবং এ রাজত্ব তোমারই ।
তোমার কোন অংশীদার নেই ।

এরপর হজ্জের সময় যেসব কাজসমূহ করা নিষেধ আছে সেসব কাজসমূহ হতে বিরত থাকবে এবং সর্বদাই তালবিয়াহ্ ও দোয়া-দরূদ পড়তে থাকবে। এরপর পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রবেশ করে সাতবার কা'বা শরীফ প্রদক্ষিণ করবে, অবশ্য প্রথম তিনবার বাহাদুরের মত প্রদক্ষিণ করবে। এরপর সাফা-মারওয়া পাহাড়সমূহে সাতবার করে দৌড়াদৌড়ি করবে। এরপর ৮ জিলহজ্জ পর্যন্ত পবিত্র মক্কা নগরীতে অবস্থান করবে। এ সময়ের মধ্যে হজ্জে তামাত্ত্বো‘অ আদায়কারী ব্যতীত কোন লোক হালাল হতে পারবে না। 

অবশ্য হজ্জ আরম্ভ হবার আগে হজ্জে কেরান আদায়কারী হজ্জের জন্য একটি পৃথক তাওয়াফ করতে হবে এবং সাফা-মারওয়া নামক দু'টি পাহাড়ে দৌড়াতে হবে । জিলহজ্জ মাসের আট তারিখ সকালে ফজরের নামায আদায় করে মীনাতে যাবে এবং নয় তারিখ ফজর পর্যন্ত সেখানে থাকবে। নয় তারিখ সকালে ‘আরাফাতের মাঠে যাবে এবং যুহরের নামাযের সময় যুহর ও আছরের নামায একত্রে আদায় করবে। এর পর সকলেই মুযদালিফা নামক স্থানে গিয়ে সেখানে মাগরিব এবং এশার নামায একসাথে আদায় করবে। 

অবশ্য মাগরিবের নামায এশার সময়েই আদায় করবে। এরপর দশ তারিখের সূর্য উদয় হবার আগেই মীনাতে গিয়ে "জুমরায়ে ‘আকাবা” নামক পাথরকে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে। এরপর কুরবানী দিয়ে মাথা মুড়িয়ে বা চুল কেটে ইহ্রাম মুক্ত অর্থাৎ হালাল হয়ে যাবে। এ সময় হজ্জের নিষিদ্ধ কর্মসমূহ করতে পারলেও স্ত্রী সহবাস করবে না। এরপর ঐ দশ, এগার অথবা বার তারিখে মক্কা শরীফে এসে পুনরায় কা'বা শরীফের তাওয়াফ করবে এবং এ তাওয়াফের পর স্ত্রী সহবাস করতে পারবে।

এরপর ১২ তারিখে পুনরায় মীনাতে এসে “জুমায়ে উলা, জুমরায়ে ‘আকাবা ও জুমরায়ে উস্তা” নামক তিনটি পাথরকে ন'টি করে কংকর নিক্ষেপ করবে, এ কাজটি দ্বিপ্রহরের পরে করবে। এরপর ১৩ তারিখে আবার দুপুরের পরে তিনটি পাথরকে কংকর নিক্ষেপ করবে। এরপর দেশে ফেরার সময় পুনরায় পবিত্র কা'বা ঘরকে সাতবার তাওয়াফ করবে।
উল্লেখ্য, হজ্জের সময়ে সর্বদা তালবিয়া, দোয়া-দরূদ, কালিমাহ ইত্যাদি বেশী বেশী করে পাঠ করবে।

ওমরা আদায়ের নিয়মাবলী

ওমরা পালন করার ইচ্ছা করলে অযূ-গোসল করে হজ্জের অনুরূপ নিয়মে ইহরাম বেঁধে পবিত্র মক্‌কা শরীফ হতে বের হয়ে “মীকাত” নামক স্থানে যাবে, সেখানে গিয়ে ওমরা আদায়ের উদ্দেশ্যে এরূপ নিয়্যত করবে— (আল্লাহুমা লাব্বাইকা বি উমরাতিন) অর্থাৎ—হে আল্লাহ! আমি ওমরা আদায় করার জন্য হাজির হয়েছি।

এরপর উম্মুল মু'মিনীন হযরত ‘আয়েশা সিদ্দীকাহ্ (রাঃ)-এর মসজিদে গিয়ে দু'রাক'আত নফল নামায আদায় করবে। এরপর পবিত্র মক্‌কা শরীফে ফিরে আসবে। মক্কাতে আসার সময় সর্বদা তালবিয়্যাহ পাঠ করতে থাকবে, কিন্তু হেরেমে ঢুকার সাথে সাথে তালবিয়্যাহ্ পাঠ করা হতে বিরত থাকবে এবং যথানিয়মে তাওয়াফ এবং সা'য়ী আদায় করবে (যার বর্ণনা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে)। অতঃপর মাথা মুড়িয়ে হালাল হয়ে যাবে, আর এভাবেই ওমরা পালন করা হয়। বছরের যে কোন সময়ই ওমরা আদায় করা যায়। সুতরাং যার পক্ষে যত বেশী সম্ভব তত বেশী করে ওমরা আদায়ে যত্নবান হওয়া উচিত ।

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন !