দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 28

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 28

যাকাতের বিবরণ'

যাকাত ইসলামী শরীয়তের স্তম্ভসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি শুভ। যাকাত আদায় না করার অর্থ হল ইসলামের একটি স্তম্ভকে ভেঙ্গে ফেলা। এ
ব্যাপারে অসংখ্য হাদীস উল্লেখ আছে। যেমন— 
• এক হাদীসে রাসূলে কারীম (সাঃ) বর্ণনা করেছেন—“মহান আল্লাহ্ তা'আলা যাকে ধন-সম্পদ দান করেছেন অথচ সে তার যাকাত আদায়।

করেনি, কিয়ামাতের দিন সে সকল মন-সম্পদ গুলোকে বিষাক্ত অজগর বানানো হবে। উক্ত অজগর ঐ ব্যক্তির গলা জড়িয়ে ধরে তার গালে দংশন করতে থাকবে এবং বলবে, আমি তোমার ধন-মাল এবং সঞ্চিত ধন-সম্পদ। (বুখারী)
• অন্য এক হাদীসে আছে—"যে ব্যক্তির নিকট স্বর্ণ-রৌপ্য মজুদ থাকা সত্ত্বেও সে ব্যক্তি তার যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামাতের দিন ঐ সব স্বর্ণ-রৌপ্যের দ্বারা পাত বানিয়ে তা দোযখের আগুনে দগ্ধ করে তার বুকে, পিঠে, পাঁজরে এবং কপালে দাগ দেয়া হবে। উক্ত পাতসমূহ একটু ঠাণ্ডা হয়ে গেলে তা আবার গরম করে নেয়া হবে।

যাদের ওপর যাকাত দেয়া ফরয 

যেসব মালদারগণের ওপর যাকাত দেয়া ফরয তাদের বিবরণ নিম্নে উল্লেখ করা হল ঃ
• যদি কারও নিকট সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা কিংবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বছরের ৪/৫ মাস থাকে এরপর ২/৩ মাস তা হতে কম থাকে, আবার বছরের শেষ দিকে মালেকে নিসাব পূর্ণ হয়, তবে তার যাকাত দিতে হবে। মোটকথা বছরের প্রথম ও শেষ দেখতে হবে। islamic history.

বছরের প্রথমদিকে ও শেষ দিকে নিসাব থাকলে মাঝখানে কিছুদিন কমে গেলেও বছরের শেষ যে পরিমাণ সম্পদ থাকবে তার যাকাত দান করতে হবে। অবশ্য বছরের মাঝখানে যদি সম্পূর্ণ মালই নষ্ট হয়ে যায়, তবে পূর্বের হিসাব বাদ দিয়ে আবার প্রথম হতে নিসাব পূর্ণ হওয়ার সময় হিসেবে ধরতে হবে, তথা পুনঃপ্রাপ্তির তারিখ হতে বছর গণনা শুরু করতে হবে।

কারও এরূপ ঋণ আছে যে, সে ঋণ পরিশোধ করার পরও তার নিকট নিসাব পরিমাণ মাল কিংবা তার সমমূল্য; যেমন-সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্য মওজুদ থাকে, তবে এ পরিমাণ মূল্যের যাকাত ওয়াজিব হবে। 
• কারও নিকট কিছু স্বর্ণ এবং কিছু পরিমাণ রৌপ্য আছে কিন্তু কোনটাই নিসাব পরিমাণ নেই, তবে উভয়ের মূল্য মিলিয়ে যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য অথবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের মূল্যের সমান হয়, তবে যাকাত দেয়া ফরয হবে, নতুবা যাকাত দিতে হবে না।

আর যদি উভয়টি নিসাব পূর্ণ থাকে, তবে আর মূল্য মিলানোর আবশ্যকতা নেই (বরং পৃথক পৃথকভাবেই যাকাত আদায় করতে হবে) ।

o স্বর্ণ-রৌপ্য ব্যতীত অন্য সকল ধাতু। যেমন—লোহা, তামা, কাঁশা, পিতল, রাং ইত্যাদি কিংবা কাপড়-চোপড়, জুতা, চীনা বরতন, কাঁচের বরতন এসব আসবাবপত্রের হুকুম হল, যদি এগুলো ব্যবসায়ের পণ্য হয় তবে নিসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছরকাল স্থায়ী থাকলে সেগুলোর যাকাত দিতে হবে। আর ব্যবসায়ের পণ্য না হয়ে ব্যবহার্য হিসেবে ফেলে রাখলে তা যত মূল্যবানই হউক না কেন, এর যাকাত ফরয হবে না ।

যাকাতের পরিমাণ

মালের কি পরিমাণ যাকাত দিতে হবে তা নিম্নে আলোচনা করা হল ঃ ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা, স্বর্ণ-রৌপ্য ইত্যাদির চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসেবে দান করতে হবে। যেমন—চল্লিশ টাকায় এক টাকা, আশি টাকায় দুটাকা এবং একশত টাকায় আড়াই টাকা, এক হাজার টাকায় পঁচিশ টাকা এ নিয়মে দিতে হবে। 

আর যাকাত দান করার সময় নিয়্যত রাখতে হবে, আমি এ সব টাকা-পয়সা বা মালপত্র যাকাত হিসেবে দান করছি। নিয়্যত না করলে যাকাত আদায় হবে না, বরং নিয়্যত ছাড়া যা দান করা হয়েছে সেজন্য পৃথক ছাওয়াব পাওয়া যাবে।

স্বর্ণ-রৌপ্য ও টাকার যাকাতের বিবরণ 

যদি কেবলমাত্র সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ হয় তবে সাড়ে সাত ভরির জন্য চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। আর রৌপ্যের জন্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা হলে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে । যদি স্বর্ণ-রৌপ্য এ পরিমাণের চেয়ে বেশি হয় তাহলে চল্লিশভাগের এক ভাগ হিসেবে যাকাত দিতে হবে। আর টাকা হলেও ঐ হিসেব অনুপাতে যাকাত দিতে হবে।

যদি কারও নিকট এ পরিমাণ স্বর্ণ-রৌপ্য ও টাকা থাকে যে, পৃথক পৃথকভাবে কোনটিই যাকাতের নিসাব পরিমাণ হয় না, কিন্তু সবগুলো একত্রে হিসেব করলে দেখা যায়, যাকাতের নিসাব পূর্ণ হয়; তখন উক্ত বস্তুসমূহের মূল্য একত্রে হিসেব করে যাকাত দিতে হবে। এভাবে কোন দুটি বস্তু যদি পৃথকভাবে যাকাতের নিসাব না হয় কিন্তু উহাদের দু'টির মূল্য একত্র করলে নিসাব পূর্ণ হয়, এমতাবস্থায় ঐ দু'বস্তুর যাকাত দিতে হবে।

যাকাত পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি 

পবিত্র কোরআন শরীফে সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে বর্ণিত নিম্নলিখিত ৮ শ্রেণীর লোক যাকাত পাওয়ার যোগ্য বলে উল্লেখ আছে। <br>
১। ফকীর-যার সামান্য কিছু সম্পদ আছে।
২। মিসকীন—যার কোন কিছুই নেই।
৩। যাকাত আদায়কারীগণ যারা বায়তুলমালে জমা দেয়ার জন্য যাকাতদাতাগণের নিকট হতে যাকাত আদায় করে থাকে। 
৪। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি—ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি তার ঋণ পরিশোধ করার মত কোন ব্যবস্থা না থাকে কিংবা যে সম্পদ আছে তা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করলে তার অভাব বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

৫। মুসাফির—কোন লোক ভ্রমণে গিয়ে ঘটনাক্রমে তার পথ চলার মত সম্বল নেই, সে ব্যক্তি যাকাত পাওয়ার যোগ্য। 
৬। গোলাম আযাদ করার জন্য—কোন লোক গোলামীর বাঁধন হতে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে ইসলামী জীবন যাপন করার জন্য। 
৭। নও মুসলিমদেরকে তাদের মন জয় করার জন্য, যাতে করে পবিত্র ইসলামের প্রতি তাদের মনের আগ্রহ আরও বৃদ্ধি হয়। 
৮। জিহাদ কী সাবীলিল্লাহ—অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার জন্য।
এছাড়া মাদ্রাসাতে লেখাপড়ায় রত ছেলেমেয়েদের কিতাবপত্র খরিদ করার জন্য তারা যাকাত গ্রহণ করতে পারবে। (শঃ বেকারাহ্)

যে সব খাতে যাকাত দেয়া যাবে না 

যে সকল স্থানে যাকাত দেয়া যাবে না নিম্নে তা উল্লেখ করা হল : (ক) মসজিদ, মক্তব, মাদ্রাসা এসব প্রতিষ্ঠানসমূহ নির্মাণের কাজে। (খ) উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের বিছানা-পত্র খরিদ করার জন্য। (গ) রাস্তা-ঘাট ও পুল ইত্যাদি নির্মাণের জন্য। (গ) মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফনের খরচের জন্য। ৫। মাদ্রাসার কোন কাজে ব্যয় করার জন্য। (কোন মাদ্রাসার যদি গোরাবা ফাও থাকে তাহলে সে কাণ্ডে দেয়া জায়েয আছে)। (শরহে বেকায়া)

সুধী পাঠকগণ। মানুষের ধন-সম্পদ ও টাকা-পয়সা চিরদিনের জন্য নয়, এ কথা বুঝার মত পৃথিবীতে ক'জনই বা আছে? কারণ টাকা-পয়সার প্রাচুর্যে দেখা যায় অনেকের স্বভাব পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন—অনেক ধনী লোককে দেখা যায়, সম্পদের মোহে তাদের অহংকার, জ্ঞান-গরীমা, কৃপণতা আপনা হতেই চলে আসে। যেহেতু এসবগুলো কারুন নামক এক পাপিষ্ঠ নরাধমের স্বভাব। কারুনের পরিণতি, পড়লে সহজেই বুঝা যাবে তার আসল রূপ ও কারণ।

যাকাত না দেয়ার ভয়াবহতা 

কারুনের পরিণতি-তাফসীরে হুসাইনিতে উল্লেখ আছে, উল্লিখিত কারুন নামক লোকটি হযরত মূসা (আঃ)-এর চাচাত ভাই ছিল। মূসা (আঃ)-এর চাচা অর্থাৎ কারুনের বাবা ছিল অত্যন্ত গরিব লোক । ছোটবেলা হতেই কারুন খুবই নম্র-স্বভাবের এবং অত্যন্ত সুন্দর দেহাকৃতি বিশিষ্ট ছিল। তার স্বভাব-চরিত্র ও নম্র স্বভাব দেখে সকল লোক সন্তুষ্ট হত। 

পরিণত বয়সে মূসা (আঃ)-এর বোনের সাথে কারুনের বিবাহ হয়, তখন মূসা (আঃ)-এর বোন স্বীয় ভাই মূসা (আঃ) হতে স্বর্ণ-রৌপ্য তৈরির কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করে স্বীয় স্বামী কারুনকে শিক্ষা দিলেন। কারুন এসব নিয়ম-কানুন শিক্ষা করে নিজেই স্বর্ণ-রৌপ্য তৈরি করে এত বেশি সম্পদের অধিকারী হয়েছিল, তার হিসেব করা এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। 

তবে বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত টাকা-পয়সাসমূহ রেখে যে তালা আটকান হত সে তালাসমূহেরও হিসেব ছিল না। সে তালাসমূহের চাবি ছিল চামড়ার তৈরি এবং কনিষ্ঠা, আঙ্গুল হতে চিকন এবং ছোট। এরূপ চিকন ও ছোট হওয়া সত্ত্বেও সে চাবিসমূহের ওজন ছিল ৭০টি উটের বোঝার সমান। 

এতসব ধন-রত্নের অধিকারী হওয়ার ফলে তার পূর্বেকার নম্র ব্যবহার ও বিনয়ী ভাব যে কোথায় চলে গিয়েছিল তা অন্য লোক তো দূরের কথা, কারুন নিজেও বলতে পারেনি। আস্তে আস্তে সে অহংকার, উগ্র স্বভাব, কৃপণতা ইত্যাদি খারাপ আচরণ দেখাতে আরম্ভ করল। গরিবদেরকে দান করা তো দূরের কথা, তাদেরকে গলা ধাক্কা, লাঠিপেটা করে মাথা ফাটিয়ে কিংবা পা দ্বারা আঘাত করে দৌড়ায়ে দিতেও বিন্দুমাত্র চিন্তা করত না ।

কারুনের এসব আচরণ দেখে মহান আল্লাহ্ তা'আলা মূসা (আঃ)-কে নির্দেশ দিলেন, হে মূসা! তুমি কারুনের নিকট গিয়ে বল, মহান আল্লাহ্ তা'আলা নির্দেশ দিয়েছেন তোমার এসব ধন-সম্পদের হিসেব করে প্রতি হাজারে এক টাকা করে যাকাত আদায় করতে হবে। 

তখন কারুন হিসেব করে দেখল, যাকাত দান করতে হলে তার অসংখ্য টাকা হাতছাড়া হয়ে যায়, সুতরাং সে টাকা হাতছাড়া করতে রাজী না হয়ে যাকাত দিতে অস্বীকার করল। তখন মূসা (আঃ) মহান আল্লাহ্র আদেশে জমিনকে নির্দেশ দিলেন, “হে জমিন! কারুনকে এবং তার সকল ধন-সম্পদ সমূহকে গ্রাস করে ফেল।” নির্দেশ প্রাপ্ত হয়ে জমিন কারুন ও তার সমস্ত ধন-সম্পদসহ গ্রাস করে নিচের দিকে দাবাতে আরম্ভ করল।

উল্লিখিত ঘটনাটি পাঠ করে সহজেই অনুমান করা যায়, ধন-সম্পদ হলে মানুষের স্বভাব-চরিত্রের সৌন্দর্যতা ও মাধূর্যতা নষ্ট হয়ে যায় । বর্তমান যুগে অনেক ধনী লোকজন আছেন যারা কারুনী স্বভাবসম্পন্ন। তাদের নিকট যাকাত, ভিক্ষা কিংবা মসজিদ, মাদ্রাসা ইত্যাদি জনহিতকর কাজের জন্য সাহায্য চাইলে তারা তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে এবং কটুক্তি করে থাকে, অথচ পরিণাম ফলের দিকে আদৌ খেয়াল করে না। 

সুতরাং সকল ধনীগণের উচিত তারা কারুনী স্বভাব তথা বখিলী ছেড়ে মহান আল্লাহ্র দেয়া মালামাল তাঁর রাস্তায় বিধানসম্মতভাবে ব্যয় করতে কুণ্ঠিত না হওয়া ।
আরও কত ধনী লোক আছেন তারা টাকা-পয়সার যাকাত দেয়া তো দূরের কথা, ঘরের মধ্যে মহিলাদেরকে সোনা-রুপার অলংকার দিয়ে জড়ায়ে রেখেছেন সে সবেরও হিসেব-নিকেশ করে যাকাত আদায় করেন না। স্ত্রী জ্ঞানবর্তী বা ধার্মিকা হয়ে যদি স্বামীকে বলে থাকেন, স্বামী ধন!

আমার অলংকারের মূল্য হিসেব করে যাকাত দিন। প্রতিউত্তরে টাকা খরচ করার ভয়ে স্বামী বলে ফেলেন, আমি কেন তোমার অলংকারের যাকাত দান করব? আমি তোমার অলংকার এবং যাকাত সম্পর্কে কিছুই জানি না। কিন্তু স্ত্রীর জানা আছে, হাদীসে বর্ণিত আছে-যদি স্ত্রীর হাতে যাকাত দেয়ার মত টাকা-পয়সা না থাকে তাহলে বছর শেষে হিসেব করে প্রয়োজনে অলংকার বিক্রি করে হলেও যাকাত আদায় করতে হবে।

নতুবা কিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত অলংকারসমূহ অজগরে পরিণত হয়ে শরীরের যেসব স্থানে অলংকারসমূহ গাঁথা ছিল, সেসব স্থানে দংশন করতে থাকবে। স্ত্রী সাহেবা কিয়ামতের শাস্তির ভয়ে যদি নিজের কিছু অলংকার বিক্রয় করে যাকাত দান করেন, তাহলে স্বামী তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও মারপিট করতে থাকেন। 

এরূপ অবস্থা হলে ঘটনাটি জালেম বাদশাহ ফিরাউন ও তার স্ত্রী বিবি আছিয়ার ন্যায় হল কি না সুধী পাঠকগণই এর বিচার
করবেন। এতক্ষণ স্বর্ণ-রৌপ্যের যাকাত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া মানুষের আরও কিছু সম্পদ আছে সেগুলোরও যাকাতের মাছআলা জানা জরুরি বিধায় নিম্নে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

ভূমিতে উৎপন্ন দ্রব্যের যাকাত

কোন দেশ কাফিরদের অধীনে ছিল এবং কাফির সম্প্রদায়গণই সেখানে বসবাস করত । কোন কারণবশত ঐ দেশের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা মুসলিম শাসকের হাতে এল এবং তিনি ঐ সমস্ত ভূমিসমূহ মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। উল্লিখিত সূত্রে প্রাপ্ত জমি, যা ঐভাবে বণ্টন করা হল তাকে ওশরী জমি বলে। সমগ্র আরব দেশের জমিই ওশরী। এছাড়া মুসলমান শাসক কর্তৃক যেসব জমির মালিক কাফিরদের বলে সাব্যস্ত হয়েছে সেসব জমি খেরাজী। খেরাজী জমির খেরাজ বা
খাজনা দিতে হয়, আর ওশরী জমির ওশর দিতে হয়।

যদি কারও পূর্বপুরুষ হতে বংশানুক্রমে ওশরী জমির মালিকানা চলে এসে থাকে, অথবা কোন মুসলমানের নিকট হতে ওশরী জমি খরিদ করে থাকে, তবে সে জমির ওশর দিতে হয়। (জমির উৎপন্ন ফসলের যাকাত দেয়াকে আরবিতে ওশর বলে।) ওশর দেয়ার নিয়ম হল, যেসব জমিতে পরিশ্রম করে পানি দিতে হয় না, বরং স্বাভাবিক বৃষ্টির পানিতে বা বর্ষার স্রোতের পানিতে ফসল জন্মে, সেসব জমির উৎপন্ন ফসলের এক-দশমাংশ মহান আল্লাহ্র রাস্তায় দান করা ওয়াজিব। অর্থাৎ ফসল দশ মণ হলে এক মণ, পঞ্চাশ মণ হলে পাঁচ মণ। 

আর যেসব জমিতে পরিশ্রম করে পানি দিয়ে ফসল ফলাতে হয়, সেসব জমির উৎপন্ন ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ আল্লাহ্র রাস্তায় দান করতে হয়। অর্থাৎ বিশ মণ হলে এক মণ, আর চল্লিশ মণ হলে দু'মণ। ইমামে আ'অজম হযরত আবু হানিফা (রহঃ) বলেন, জমির ফসলের কোন নিসাব নির্ধারিত নেই। কম বা বেশী যা হোক না কেন, তার দশ ভাগের এক ভাগ দিতে হবে। ধান, পাট, গম, যব, সরিষা, কলাই, বুট, কাওন, ফল-ফলাদি, তরি-তরকারি, শাক-সব্জি, নারিকেল, সুপারী, ইক্ষু, বেরন, কলা গাছ, খেজুর গাছ ইত্যাদি ক্ষেতে যা জন্মিবে তার ওশর দিতে হবে এবং এটাই জমিনের যাকাত ।

গরু ও ছাগলের যাকাত

কৃষি কাজে ব্যবহৃত গরুর জন্য কোন যাকাত দিতে হবে না। এছাড়া “ছায়িমাহ” অর্থাৎ ছাড়া গরুর যাকাতের পরিমাণ হল প্রতি ত্রিশটি গরুর জন্য “আরবি তাবী আহ্” অর্থাৎ দু'বছরের একটি বাছুর। আর প্রতি চল্লিশটি গরুর জন্য “আরবি মুসান্নাহ্” অর্থাৎ তিন বছরের একটি বাছুর। এভাবে যাকাত আদায় করতে হবে।

মহিষের ক্ষেত্রেও গরুর যাকাত দানের নিয়মে যাকাত দিতে হয়।
ছাগলের জন্য ৪০টি হতে ১২০টি পর্যন্ত ১টি, ১২১টি হতে ২০০টি
পর্যন্ত ২টি, ২০১টি হতে ৩০০টি পর্যন্ত ৩টি, ৩০১টি হতে উপরে যত যাবে সে হিসেবে প্রতি শতের জন্য অতিরিক্ত একটি করে যাকাত আদায় করে দিতে হবে।

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন !