তারাবীর নামাযের দোয়া
দু দুরাক'আত করে চার রাক'আত নামাযের পর সালাম ফিরিয়ে বসে বসে নিম্নের দোয়াটি ১, ৩, ৫ অর্থাৎ যে কোন বেজোড় সংখ্যায় পাঠ করবে।
উচ্চারণ : সুবহানা যিলমুলকি ওয়াল মালাকৃতি সুবহানাযিল ইয্যাতি ওয়াল ‘আযমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারূতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাযী লাইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামূতু আবাদান আবাদান সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়াররূহ্ ।
অর্থ : আমি সর্বময় ক্ষমতাবান ও বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহ্র পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং মহিয়ান-গরিয়ান, ভয় প্রদর্শনকারী, শক্তিশালী, গৌরবান্বিত ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আমি ঐ জীবন্ত স্বত্তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, যিনি তন্দ্রা ও নিদ্রা যাননা এবং চিরকালের জন্য অমর। যিনি অত্যন্ত পবিত্র এবং ফিরিশ্তাগণ ও আত্মাসমূহের প্রতিপালনকারী ।
উল্লিখিত দোয়াটি পড়া শেষ হলে অথবা পুরো বিশ রাক'আত তারাবীর নামায পড়া শেষ হলে নিম্নলিখিত দোয়াটি তিনবার পাঠ করে মুনাজাত করবে।
তারাবীর নামাযের মুনাজাত
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া না'উযুবিকা মিনান্নারি ইয়া খালিকাল জান্নাতি ওয়ান্নারি বিরাহমাতিকা ইয়া 'আযীযু ইয়া গাফ্ফারু ইয়া কারীমু ইয়া সাত্তারু ইয়া রাহীমু ইয়া জাব্বারু ইয়া খালিকু ইয়া বারু। আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান্নারে, ইয়া মুজীরু, ইয়া মুজীরু, ইয়া মুজীরু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।
অর্থ : হে আল্লাহ্! তোমার নিকট বেহেশতের জন্য প্রার্থনা করছি এবং দোযখের আগুন হতে মুক্তি চাইতেছি। হে বেহেশত-দোযখের সৃষ্টিকর্তা! তোমারই অনুগ্রহের মাধ্যমে, হে ক্ষমতাশালী! হে ক্ষমাকারী। হে পরম দয়ালু! হে সৃষ্টিকর্তা! হে উপকারী! হে আল্লাহ্! তুমি আমাদেরকে দোযখের আগুন হতে রক্ষা কর। হে রক্ষাকারী! হে রক্ষাকারী। হে রক্ষাকারী। তোমার অনুগ্রহ দ্বারা আমাদেরকে দয়া কর ।
ফিদইয়ার বিবরণ
কোন লোক এত বেশী বৃদ্ধ হয়েছে যে, সে ব্যক্তির আর রোযা রাখার মত শক্তি নেই কিংবা এত বেশি রোগাক্রান্ত হয়েছে যে, আর সুস্থ হওয়ার আশা নেই। এজন্য শরীয়তের বিধান হল, প্রতিটি রোযার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে দুবেলা পেট পুরে (তৃপ্ত করে) খাওয়াবে কিংবা একটি রোযার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে ছদকায়ে ফিত্র পরিমাণ এক সের সাড়ে বার ছটাক গম বা তার সমপরিমাণ মূল্য পরিমাণ চাউল বা টাকা দেয়াকে শরীয়তের পরিভাষায় “ফিদইয়া” বলে।
বৃদ্ধ ব্যক্তি যদি পুনরায় রোযা রাখার শক্তি পায় অথবা রুগ্ন ব্যক্তি পুনরায় রোগমুক্ত হয় এবং রোযা রাখার শক্তি লাভ করে, তবে যেসব রোযার ফিদইয়া দিয়েছে, সেসব রোযার কাযা আদায় করতে হবে এবং ফিদইয়া দান করার জন্য সে পৃথকভাবে ছাওয়াব পাবে।
ছদকায়ে ফিতরের বিবরণ
ঈদের দিন সুবহে সাদেকের সময় যে মুসলমান জীবিকা নির্বাহের অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ যথা—খাদ্যদ্রব্য, পরিধানের কাপড়-চোপড় এবং শোয়ার ব্যবস্থা ও ঘর ইত্যাদি বাদে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ কিংবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য অথবা এসবের সমমূল্যের অন্য কোন মালপত্রের মালিক থাকে, তার উপর সদকায়ে ফিত্র দেয়া ওয়াজিব হবে।
চাই সে মাল ব্যবসায়ের পণ্য হউক বা না হউক, বা সে মালের বছর অতিবাহিত হউক বা না হউক। আর দু'শত দিরহামের পরিমাণ সম্পত্তির মালিককে বলে ছাহেবে নেছাব । (আমাদের দেশীয় হিসেবে দু'শত দেরহামে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা হয়।) আর জীবিকা নির্বাহের আবশ্যকীয় উপকরণসমূহকে হাওয়ায়েযে আছলিয়া বলে ।
যাদের উপর ফিত্রা দেয়া ওয়াজিব
ফিত্রা কারা দেবে এবং কি পরিমাণ দেবে
এ সম্পর্কে নিম্নে আলোকপাত করা হল ।
১। যাদের উপর যাকাত দেয়া ওয়াজিব তাদের উপর ফিত্রা দেয়াও ওয়াজিব ।
২। যে শিশু ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পূর্বে জন্মগ্রহণ করেছে তারও ফিত্রা দিতে হবে ।
৩। মেয়েলোক মালদার হলে সে নিজের ফিত্রা নিজেই আদায় করবে। ছেলে-মেয়ে বা স্বামীর ফিত্রা তার জন্য আদায় করে দেয়া ওয়াজিব নয় ।
নাবালেগ সন্তানের ফিত্রা তার পিতা আদায় করবে, বালেগ সন্তানের ফিত্রা সে নিজেই আদায় করবে। এক্ষেত্রে পিতার জন্য আদায় করে দেয়া ওয়াজিব নয়। নাবালেগা মালদারের পিতা তার সম্পদ হতে ফিত্রা আদায় করবে।(দুঃ মুখতার)
৪। ঈদের দিনের পূর্বে ফিত্রা আদায় করলেও চলবে। তবে ঈদের দিন সকালে নামাযের পূর্বে ফিত্রা আদায় করা মুস্তাহাব। কারও যদি ভুলবশত আদায় করা না হয়ে থাকে তাহলে পরে আদায় করে দিতে হবে।
৫। একজনের ফিত্রা একজন মিসকিনকে দেয়া উচিত। তবে একজনের ফিত্রা কয়েকজন মিসকিনকে ভাগ করে দেয়ারও বিধান আছে। তদ্রূপ কয়েকজনের ফিত্রাও একজনকে দেয়া দুরস্ত আছে। (বাঃ মোহীত)
৬। গম বা আটা দ্বারা ফিত্রা দিলে ৪০ তোলায় সেরের মাপে একসের সাড়ে বার ছটাক হারে দিতে হবে। এছাড়া এ সমপরিমাণ মূল্যমানের বস্তু দ্বারাও ফিত্রা দেয়া জায়েয আছে ।
ফিত্রা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি
প্রত্যেক গরীব-মিসকীনকেই ফিত্র া দেয়া জায়েয, তবে নিজের আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশী গরীব-মিসকীন থাকলে তারাই প্রথম ফিত্রা পাবার উপযুক্ত। ফিত্রাদানকারী কখনও তার নিজস্ব মা-বাপ, দাদা-দাদী, নানা-নানী বা নিজের ছেলে-মেয়েকে ফিত্রা দিতে পারবে না। এছাড়া মাদ্রাসার গরিব, মিসকীন ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও_তাদের লেখাপড়ার খরচের জন্য ফিত্রা দেয়া জায়েয আছে।
ই‘তেকাফের বিবরণ
রমজানের বিশ তারিখ সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পূর্ব হতে ঊনত্রিশ বা ত্রিশ তারিখ অর্থাৎ যেদিন ঈদের চাঁদ দেখা যাবে সেদিনকার সূর্যাস্ত পর্যন্ত পুরুষদের জন্য মসজিদে এবং মহিলাদের জন্য নিজ ঘরের নির্দিষ্ট নামায পড়ার স্থানে সকল দুনিয়াবী কাজকর্ম ও মোহকে ছেড়ে দিয়ে একাগ্রচিত্তে অবস্থান করাকে ইসলামী শরী‘য়তের পরিভাষায় ই'তেকাফ বলে। রমযানের শেষ দশদিন যথারীতিভাবে ইতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া । যা অবশ্যই করতে হবে, না করলে সকলেই গুনাগার হবে।
অবশ্য মহল্লার দুএকজন সকলের পক্ষ হতে আদায় করলেও তারা দায়মুক্ত হবে। সহীহ্ হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে— আমাদের নবী (সাঃ) সর্বদা রমজানের শেষ দশদিন ই'তেকাফ করতেন।
পবিত্র রমজানের সুন্নত ই'তেকাফ ছাড়া আরও দুধরনের ই'তেকাফ আছে।
যেমন-
১। ওয়াজিব ইতেকাফ : অর্থাৎ কোন লোক মান্নত করল, আমার উমুক কাজটি সমাধা হলে আমি ই'তেকাফ করব। তবে এ ধরনের ইতেকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত। সুতরাং ই'তেকাফ রাতদিন মিলিয়ে করতে হবে।
২। মুস্তাহাব ই'তেকাফ : এটি যে কোন সময়েই করা যায়।
ই'তেকাফের শর্তসমূহ
ইতেকাফ করার জন্য নিম্নলিখিত পাঁচটি শর্ত অবশ্যই থাকতে হবে; ১। পুরুষের জন্য এমন মসজিদ হতে হবে যেখানে ৫ ওয়াক্ত জামা'আতের ব্যবস্থা আছে এবং জুমু'আ আদায় করা হয়। আর মহিলাদের জন্য ঘরের একটি নির্দিষ্ট স্থান হওয়া উচিত। ২। ই'তেকাফের নিয়্যত থাকতে হবে।
৩। জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে। ৪। ই'তেকাফকারী ব্যক্তি পায়খানা- পেশাব, গোসল করার প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোন প্রয়োজনে মসজিদের বাইরে যেতে পারবে না। ৫। খানা-পিনা আনার মত লোক থাকলে নিজে খানার জন্য যেতে পারবে না ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, ই'তেকাফ অবস্থায় চুপচাপ বসে থাকা মাকরুহ। অতএব এ সময়ে পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা, দোয়া-দরূদ পাঠ করা, কিতাব ও মাসআলা-মাসয়ালা সম্পর্কে আলোচনা করা, নফল নামায, কাযা নামায আদায় ইত্যাদি 'ইবাদাত-বন্দেগীতে রত থাকা ভাল। (আলমগীরি)
ই'তেকাফ ভঙ্গের কারণসমূহ
নিম্নলিখিত চারটি কারণে ইতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়!
১। ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলবশত সহবাস করলে। ২। মহিলাদের হায়েয-নিফাস হলে। ৩। বিনা কারণে মসজিদের বাইরে অবস্থান করলে। ৪। চুম্বন, আলিঙ্গন ইত্যাদি কারণে বীর্যপাত হলে।
উল্লিখিত কারণে ই'তেকাফ ভঙ্গ হলে পুনরায় তা কাযা করতে হবে।
ই'তেকাফের ফযীলত
ই'তেকাফের ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে- “যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশদিন ই'তেকাফ করবে, তাকে দু'টি কবুল হজ্জ এবং দু'টি ওমরার সমতুল্য ছাওয়াব দান করা হবে। অর্থাৎ দু'টি কবুল হজ্জ এবং দু'টি ওমরার সমান ছাওয়াব দান করা হবে। (বায়হাকী)
• অন্য এক হাদীসে উল্লেখ আছে— “যে ব্যক্তি খালেছ নিয়্যতে এবং খাঁটি ঈমানের সাথে ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে ই'তেকাফ করবে তার পূর্ববর্তী (সগীরাহ গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে।” (দায়লামী)
ই'তেকাফের সর্বনিম্ন সময়সীমা হলো এক দিন এক রাত।
হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন- “যারা কমপক্ষে এক দিন ও এক রাত ইতেকাফ করবে কিয়ামতের দিন তাদের ও দোযখের মধ্যকার ব্যবধান তিনটি নদী হবে। আর এসব নদীসমূহের প্রত্যেকটির দূরত্ব হবে পাঁচশ বছরের রাস্তা।"
মহান আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে যাবতীয় নেক 'আমলসমূহ করার তৌফিক দান করুন এবং যাবতীয় খারাপ ও অন্যায় কাজসমূহ হতে বিরত রাখুন।
Disclaimer: যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন ! |