দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 14

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 14

মুর্দাকে কাফন পরাবার নিয়ম

মুর্দাকে কাফন পরাবার নিয়ম হল, প্রথমে খাটের উপর চাদর বিছাবে, তার ওপর ইযার এবং এর ওপর জামার নিচের অংশ বিছাবে, আর জামার ওপরের অংশ গুছায়ে মাথার দিকে রাখবে, মুর্দাকে কাফনের ওপর শোয়ায়ে মাথার দিক হতে জামার ওপরের অংশ টেনে এনে মাথা ঢুকায়ে পায়ের দিকে নিয়ে যাবে। 

মুর্দা পুরুষ হলে ইযার এবং চাদর মুড়ে দেবে, আর মহিলা হলে তার মাথার চুল দু'দিকে দু'ভাগ করে মাথার দু'দিক দিয়ে জামার ওপর বুকের ওপর রেখে দেবে। এরপর ছেরবন্দ (ওড়ানা) দ্বারা মাথা ঢেকে চুলের দুমাথা দু'দিকে বুকের ওপর রেখে দেবে, কিন্তু এতে কোন গিরা বা পেঁচ দেবে না। 

এরপর বাম পাশের ইযার শরীরের ওপর লেপ্টায়ে দেবে এবং ডান পাশের দিক হতে বাম পার্শ্বের দিকে লেপ্টায়ে দিয়ে সিনাবন্দ দ্বারা সিনা বাঁধবে। এরপর প্রথমে চাদরের বাম পাশ এবং পরে ডান পাশ মুর্দার শরীরের ওপর লেন্টায়ে দেবে। যদি খুলে যাওয়ার ভয় থাকে তাহলে একটি রশি দ্বারা পায়ের দিকে ও মাথার দিকে একটি বাঁধ দেবে।
হবে। প্রকাশ থাকে যে, এসব বাঁধসমূহ কবরে শোয়াবার পর অবশ্যই খুলে দিতে।

কাফন

মৃত্যুর পর যে কাপড় পরায়ে মানুষকে কবরস্থ করা হয় তাকেই কাফন বলা হয়। পুরুষের কাফনে সাত হতে সাড়ে সাত গজ কাপড়ের প্রয়োজন হয়। আর মহিলাদের দশ হতে সাড়ে দশ গজ কাপড়ের জরুরত হয়।

পুরুষের কাফন

পুরুষের কাফনের ৩টি কাপড়ের প্রয়োজন হয় (১) চাদর, এর দৈর্ঘ হবে সাড়ে চার হাত। এর দ্বারা পা হতে মাথা পর্যন্ত ঢেকে দেয়া হবে। (২) ইযার, এর মাথা হতে পা পর্যন্ত হবে। এর দৈর্ঘ্য সাড়ে তিন হাত হবে। (৩) জামা বা কোর্তা ইহা সেলাই বিহীন হওয়া আবশ্যক। এতে আস্তিন বা কল্লি কিছুই থাকবে না। শুধু মাঝখানে মাথা ঢুকানোর জন্য একটু ছিড়া থাকবে। কোর্তা দ্বারা গলা হতে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঢাকতে হবে। এর দৈর্ঘ্য হবে ছয় হাত ।

মেয়েদের কাফন

মেয়েদের কাফনের জন্য পাঁচটি কাপড় হওয়া জরুরী। ১। চাদর। এর দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে চার হাত (২) এর, ইহার দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে তিন হাত । (৩) কোর্তা, এর দৈর্ঘ্য হবে ছয় হাত। মাঝখান দিয়ে মাথা প্রবেশ করানোর জন্য ফাড়া থাকতে হবে। (৪) মাথা বন্দ বা উড়না। এটা দৈর্ঘ্যে তিন হাত হবে এবং প্রস্থে দেড় হাত বা তার চেয়ে সামান্য বেশি। এরদ্বারা মহিলাদের মাথা ও চুল বেঁধে চুলগুলো বুকের উপর দিয়ে দিতে হবে। 

(৫) সিনাবন্দ এটা বগল হতে উরু পর্যন্ত লম্বা হতে হবে এবং প্রস্থে চাদরের মতই হবে। এটা দিয়ে বুক ও স্তন বাঁধতে হবে।
বিঃ দ্রঃ যদি কোন কারণ বশতঃ পুরুষের জন্য তিনটি কাপড় ও মেয়েদের জন্য পাঁচটি কাপড় পাওয়া না যায় তবে যতটুকু পাওয়া যাবে তার দ্বারাই কাফন দিলেই যথেষ্ট হবে।

শিশুর কাফন

যদি কোন বাচ্চা জীবিত জন্ম নিয়ে পরে মারা যায়, তবে তার নাম রাখতে হবে, তাকে কাফন দাফন করতে হবে ও তার জন্য জানাযার নামায পড়তে হবে।

আর যদি শিশু মৃত জন্ম হয় তবে তাকে কাপড় পেঁচিয়ে দাফন করবে তার জানাযা পড়া হবে না, নিয়মানুযায়ী তাকে তিনটি কাপড়ও পড়ান হবে না। তদ্রুপ যদি কার অকাল গর্ভপাত এবং কোন অংগ যথা, মাথা, হাত, পা ইত্যাদি প্রকাশ না পায় তবে তাকে নামকরণ করতে হবে না । নিয়মানুযায়ী কাফন ও জানাযা পড়া হবে না ।

জানাজার নামায

মৃতের প্রতি জীবিতদের শেষ দায়িত্ব হল তার নামাযে জানাজা পড়ে তাকে করবস্থ করা। মৃতের জন্য নামাযে জানাযা ফরজে কেফায়াহ্। যদি কোন একজন তা আদায় করে দেয় তবে সকলের পক্ষ হতে এটা কোন একজন তা আদায় করে দেয় তবে সকলের পক্ষ হতে তা আদায় হয়ে যাবে, আর যদি কেউ না পড়ে তবে সকলেই গোনাহগার হবে। 

জানাযার নামাযের অর্থ হল মৃতের জন্য দোয়া করা। তাই সকলেই উচিত জানাযায় শরীক হওয়া
জানাযার নামাযের শর্ত:
জানাযার নামাযের জন্য শর্ত হল-(১) জায়গা পাক হওয়া (২) কাপড় পাক হওয়া (৩) সত্তর ঢাকা (৪) কেবলামুখি হওয়া (৫) মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা জেনে নিয়ত করা, (৬) ইমাম প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া (৭) মাইয়েত মুসলমান হওয়া (৮) শবদেহ পবিত্র হওয়া (৯) কাফন পবিত্র হওয়া (১০) মৃতের খাট মাটির উপর থাকা, (১১) মৃতের সতর ঢাকা থাকা ।

জানাযার ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নতের বর্ণনা

এর ফরজ মাত্র দুটি-(১) দাঁড়িয়ে জামাজ আদায় করা (২) চার
তাকবীর বলা ।
জানাযার নামাযের ওয়াজিব হল॥মৃতের জন্য দোয়া করা । জানাযার নামাযের সুন্নত হল-(১) ছানা পড়া (২) দরূদ পড়া (৩)
দোয়া পড়া ।

যে সকল লোকের জানাযা অবৈধ

(১) কোন কাফের বা মুশরিক যদি ঈমান না এনে মারা যায় (২) ডাকাত যদি ডাকাতির অবস্থায় মারা যায় (৩) ন্যায় বিচারক মুসলিম বাদশাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকালে মারা গেলে। (৪) যে সন্তান পিতা বা মাতার হত্যার অভিযোগে নিহত হয়েছে (৫) যে আত্মহত্যা করে । এদের জানাযার নামায এজন্য পড়া অবৈধ যেন অন্যান্যরা এটা দেখে এ সকল অসৎ কাজগুলো ছেড়ে দেয় ।

আর যদি একান্তই এদের জানাযা পড়তে হয় তবে সে এলাকার বড় আলেম তার জানাযায় অংশ গ্রহণ করা হতে বিরত থাকবেন। তদ্রুপ যদি কোন ইসলাম বিদ্বেষী ব্যক্তি মৃত্যবরণ করে তবে তারা জানাযায়ও বড় আলেমগণ অংশ গ্রহণ হতে বিরত থাকবেন ।

জানাজার নামাযের নিয়ত

প্রথমে নিয়ত করতে হবে নিয়ত নিন্মরূপ
উচ্চারণ : নাওয়াইতুআন উআদ্দিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবাআ তাকবিরাতি ছালাতিল জানাযাতি ফারজিল কিফায়াতি আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াছ ছালাতু আলা নাবিয়্যি ওয়াদ দোয়াউ লি হাজাল মায়্যিতি ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমাম মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবা’তিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবর। এরপর ১ তাকবীর বলে ছানা পড়তে হবে। ছানা এই-

উচ্চারণ : সুবাহা-নাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়াতাবারা কাসমুকা ওয়াতায়ালা জাদ্দুকা ওয়া জাল্লাছানাউকা ওয়ালাই-লাহা গাইরুকা।
এরপর তাকবীর বলে দরূদ শরীফ পড়তে হবে-

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছাল্লিআলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা ওয়া সাল্লামতা ওয়া বারাকতা ওরাহিমতা ওয়া তারাহামতা আলা ইবরাহিমা ওয়া, আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। এরপর তাকবীর বলে এই দোয়া পড়বে (যদি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা মহিলা হয়)

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগ ফিরলি হায়্যিনা ওয়া মায়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া ছাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া জাকারিনা ওয়া উনচানা আল্লাহুম্মামান আইয়াইতাহু মিন্না ফাআয়িহী আলাল ইসলাম ওয়া মান তাওয়াফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ঈমান ।
এরপর তাকবীর বলে প্রথমে ডান দিকে ওপরে বাম দিকে সালাম
ফিরাবে।
আর যদি মাইয়েত অপ্রাপ্ত ছেলে হয় তবে এ দোয়া পড়তে হবে-

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ আলহুলানা ফারাতান ওয়াজ আলহুলানা আজরান ওয়া জুখরানওয়াজ আল হুলানা শাফিআন ওয়া মুশাফফা আ । আর যদি অপ্রাপ্তবয়স্কা মেয়ে হয়ে তবে এ দোয়া পড়তে হবে-

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ আলহালানা ফারাতান ওয়াজ আলহা লানা আজরান ওয়াজুখরানওয়াজ আলহা-লানা শাফিআতান ওয়া মুশফাফা আহ্ । জানাযা শেষে চারজনে খাটিয়া ধরে কবরস্থানে নিয়ে যাবে এবং মাইয়েত কে কররে না দেয়া পর্যন্ত কেউ বসতে পারবে না। লাশ কবরে রাখার সময় এ দোয়া পড়তে হবে ।

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ্ ।
অর্থ : আল্লাহর নামের উপর ও তাঁর প্রেরিত দূতের ধর্মের উপর রাখছি এবং লাশ কবরে রেখে কবরের উপর বাঁশ ও চাটাই দিয়ে মাটি দেয়া আরম্ভ করবে। উপস্থিত সকলেরই তিন মুষ্ঠি করে মাটি কবরে দেয়া মুস্তাহাব।

প্রথম মুষ্ঠি দেয়ার সময় পড়তে হবে- 

(মিনহা খালাকানা কুম) দ্বিতীয় মুষ্ঠি দেয়ার সময় পড়তে
(ওয়াফিহা নুইদুকুম)-তৃতীয় মুষ্ঠি দেয়ার সময় পড়তে হবে ।
(ওয়ামিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা)
পূর্ণ দোয়াটির অর্থ : এমাটি হতেই আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এবং এ মাটির ভিতরই আমি পুনরায় আনবো এবং এ মাটি থেকেই আমি তোমাদের পুনরায় সৃষ্টি করব।

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন