দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 13

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 13

মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তির জন্য জীবিতদের করণীয়

মৃত্যুশয্যায় শায়িত ব্যক্তিদের নিকট উচ্চস্বরে কালিমাসমূহের তালকীন দেবে। এরপর যখন তার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে দেখবে তখন তাকে চিৎ করে উত্তর দিকে মাথা রেখে পা দুটি দক্ষিণ দিকে দিয়ে পায়ের মাথা একটু পশ্চিমে কাত করে দেবে এবং মাথা এমনভাবে উঁচু করে দেবে যেন মুখমণ্ডল একটু কিবলামুখী হয়ে থাকে। এরপর উচ্চস্বরে কালিমা ও দোয়া-দরূদ পড়তে থাকবে। মৃতদের জন্য জীবিতদের করণীয়।

হয়ত কালিমার শব্দ শুনার সাথে সাথে সেও পড়তে চেষ্টা করবে, কিন্তু এ ব্যাপরে তাকে জোর করে বলবে না যে, তুমি পড়। কারণ এ সময় মৃত্যু যন্ত্রণার ফলে যদি সে ব্যক্তি এসব বলতে অস্বীকার করে, তবে হয়ত সে বেঈমান হয়ে মারা যেতে পারে। তাই উচ্চৈঃস্বরে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করতে থাকবে, এতেও মৃত্যু যন্ত্রণা কম হয় ।

রূহ বের হয়ে গেলে সাথে সাথে (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন) অর্থ ঃ নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহ্র নিকট হতে এসেছি এবং নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহ্র দিকে প্রত্যাবর্তন করব এ দোয়াটি পাঠ করবে এবং চতুর্দিকে সংবাদ পৌছাবার ব্যবস্থা করবে। যারা সংবাদ শুনবে তারাও উক্ত রূপ দু'আ পাঠ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানাযায় উপস্থিত হওয়ার জন্য চেষ্টা করবে। হাত-পা সোজা করে দেবে এবং চক্ষুসমূহ বন্ধ করে দেবে। 

মুখ-চোখ খোলা থাকলে বন্ধ করে দেবে, আর বন্ধ না হলে মাথা এবং চিবুকের সাথে একটি কাপড় দিয়ে বেঁধে দেবে। দু'পা ফাঁক থাকলে সোজাভাবে একত্রিত করে দু'পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি মিলিয়ে কিছু দিয়ে বেঁধে রেখে সমস্ত শরীর একখানা পবিত্র কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখবে এবং তাড়াতাড়ি তাকে গোসল দিয়ে কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করবে। কেউ মারা গেলে কিভাবে সান্তনা দিতে হয়।

মুর্দাকে গোসল দেয়ার পূর্বে তার নিকট বসে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা জায়েয আছে, তবে কোন হায়েয-নিফাসওয়ালী মহিলা কিংবা অপবিত্র অবস্থার কোন লোক যেন মুর্দারের নিকট থাকতে বা আসতে না পারে। এছাড়া মুর্দার নিকট বা সে ঘরে আগর-লোবান ইত্যাদি জ্বালিয়ে রাখবে।

শহীদের বিবরণ

কোন মুসলমান যদি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কিংবা কোন খোদাদ্রোহী কাফির, ডাকাত বা রাষ্ট্রদ্রোহীর হাতে কিংবা কোন অত্যাচারী মুসলমানের হাতে শরীয়ত সম্মত কোন কারণ ছাড়াই বিনা অপরাধে নির্যাতিত অবস্থায় নিহত হয় তবে তাকে আরবি পরিভাষায় শহীদ বলে ।

শরীয়ত মতে শহীদের হুকুম প্রযোজ্য হওয়ার জন্য ৫টি শর্ত রয়েছে। যা নিম্নে প্রদত্ত হল, (১) মুসলমান হতে হবে। (২) আকেল, বালেগ হতে হবে। (৩) গোসলের প্রয়োজন হতে মুক্ত থাকতে হবে। আর যদি কেউ অপবিত্র অবস্থায় বা কোন স্ত্রীলোক হায়েজ-নিফাস অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে তার উপর শহীদের হুকুম প্রযোজ্য হবে না। শহীদ কারা।

(৪) বিনা অপরাধে নিহত হতে হবে। তবে একথাও উল্লেখ্য, যদি কেউ কোন অপরাধের জন্য শাস্তির কারণে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে তার জন্য শহীদের হুকুম প্রযোজ্য হবে না। (৫) আহত হওয়ার পর জীবন-যাপনের কোন উপকরণ ভোগ করলে কিংবা আহত হওয়ার পর নামাযের এক ওয়াক্ত পরিমাণ সময় অতিবাহিত হলে শরীয়ত মতে তার উপর শহীদের হুকুম প্রযোজ্য হবে না ।

উপরে বর্ণিত শর্তগুলো যে শহীদের মধ্যে পাওয়া যাবে তার জন্য শরীয়ত মতে হুকুম হল শহীদ ব্যক্তিকে গোসল দিবে না। তার শরীর হতে রক্তের চিহ্ন ধুয়ে-মুছে ফেলবে না। বরং তাকে যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায়ই দাফন করবে। শহীদ ব্যক্তিকে দাফন করার সময় তার শরীরের পরিধেয় কাপড়-চোপড় খুলবে না। 

তবে একথা উল্লেখ্য যে, শহীদের দেহে যদি কাফনের সুন্নত পরিমাণ কাপড় না থাকে, তাহলে তা পূর্ণ করে দিবে আর সুন্নত পরিমাণের চাইতে বেশী হলে তা খুলে রাখবে। তার পবিত্র শরীরে যদি কাফনের অনুপযোগী কোন বস্তু যেমন—টুপি, জুতা, অস্ত্র ইত্যাদি থাকে তাহলে তা খুলে রাখতে হবে। আর এ ছাড়া অবশিষ্ট হুকুম আহকাম যেমন—জানাযা, দাফন ইত্যাদি অন্যান্য মৃতদের মত তার বেলায়ও সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। 

পুরুষ ও মহিলাদের কাফন

পবিত্র হাদীস শরীফের বর্ণনায় জানা যায়, মুর্দাকে কাফন পরাবার সময় আকাশ হতে গায়েবী আওয়াজ হবে—“হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আজ দুর্গম পথের পথিক। যদি তুমি পবিত্র আত্মার অধিকারী হও তাহলে তুমি ভাগ্যবান, আর যদি পাপাত্মার অধিকারী হও তাহলে পরিণাম খুবই খারাপ । পথের জন্য কোন সম্বল এনেছ কি? যদি নেক আমল করে আস তাহলে বিপদের কোন আশংকা নেই, আর যদি নেক আমল না করে আস তাহলে বিপদের কোন সীমা নেই।” পুরুষ ও মহিলাকে কয়টি কাপড়ে কাফন দিতে হয় ।

পুরুষের কাফনের জন্য তিনখানা কাপড়। যথা—(১) ইযার (২) জামা
এবং (৩) চাদর । আর মহিলাদের কাফনের জন্য পাঁচখানা কাপড় । যথা— (১) (২) জামা; (৩) চাদর; (৪) ছেরবন্দ (ওড়না); (৫) সিনাবন্ধ ।
ইযার; ইযার মাথা হতে পা পর্যন্ত, জামা গলা হতে পায়ের হাঁটুর নিচে পর্যন্ত, তবে আস্তিন বা কল্লি হবে না । চাদর ইযার হতে হাত খানেক বড়। ছেরবন্দ (ওড়না) বার গিরা অনুমান চওড়া এবং তিন হাত পরিমাণ লম্বা হবে, যা দিয়ে মাথার চুলগুলো ঢাকা থাকবে। 

সিনাবন্দ বগলের নিচ হতে রান পর্যন্ত লম্বা হবে । আর চওড়া এতটুকু পরিমাণ হবে যাতে বুকের উপর বাঁধা যায় ।
পুরুষের তিন কাপড়ের অভাব হলে কেবলমাত্র ইযার এবং চাদর দিলেই হবে। আর মেয়ে লোকের পাঁচ কাপড় দিতে না পারলে শুধু ইযার, চাদর এবং সীনাবন্ধ দিলেও হবে। 

তবে বিনা ওযরে এরচেয়ে কম দেয়া মাকরূহ। (হিদায়াহ)
ফযীলত : পবিত্র হাদীস শরীফে রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন—যে ব্যক্তি মুর্দাকে কাফন পরাবে দয়াময় আল্লাহ্ পাক তাকে বেহেতি পোশাক পরিধান করাবেন।

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন