দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 19

বিবিধ সম্পর্কে হাদীসের অমূল্য বাণী

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 19

মৃত্যুকষ্ট সম্পর্কে

হযরত আয়শা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলে পাক (স)-কে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখেছি। তাঁর নিকট একটি পানি ভর্তি পেয়ালা রাখা ছিল । তিনি সেই পেয়ালায় তাঁর হাত মলছিলেন আর বলছিলেন : হে আল্লাহ্! মৃত্যুকষ্ট ও মৃত্যুযন্ত্রণা লাঘবে আমার সাহায্য করুন। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি গরীব।

হযরত আয়শা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলে পাক (স)-এর মৃত্যুকষ্ট দেখার পর থেকে কারো সহজ মৃত্যু হলে আমাকে আর কোন ঈর্ষা হয় না ।

মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর সময় কপাল ঘামে

হযরত আবুদল্লাহ্ ইবনে বুরাইদা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী পাক (স) ইরশাদ করেন : কপালের ঘামসহ মুমিন ব্যক্তির মৃত্যু হয়। হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী পাক (স) এক যুবকের কাছে গেলেন। সে তখন মুমূর্ষু অবস্থায় ছিল। তিনি বললেন : তোমার কেমন লাগছে? 

যুবকটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আল্লাহ্র শপথ, আল্লাহ্র রহমতের আশা করছি, কিন্তু আমার পাপসমূহের কারণে ভয়ও পাচ্ছি। রাসূলে পাক (স) বললেন : এরূপ অবস্থায় যে বান্দার অন্তরে এরূপ দুই বিপরীত জিনিস একত্র হয়, অবশ্যই আল্লাহ্ তাকে তার কাংক্ষিত জিনিস দান করেন এবং তার বিপদাশংকা থেকে তাকে নিরাপদ রাখেন।

ফলাও করে মৃত্যুসংবাদ প্রচার করা অপছন্দনীয়

হযরত হুযায়ফা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মৃত্যু হলে তোমরা এই বিষয়ে কোন ঘোষণা দিবে না। আমার ভয় হয় যে, এটা মৃত্যুর খবর প্রচার বলে হণ্য হবে । আমি রাসূলে পাক (স)-কে মৃত্যু খবর
প্রচার নিষেদ ? করতে শুনেছি।

হযরত আবদুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী পাক (স) ইরশাদ করেন : সাবধান! তোমরা মৃত্যুসংবাদ প্রচার থেকে বিরত থাক। কেননা এটা জাহিলী যুগের কাজ। হযরত আবদুল্লাহ্ (রা) বলেন, 'নাঈ' শব্দের অর্থ মৃত্যুর খবর ফলাও করে ঘোষণা করা।

প্রথম আঘাতেই ধৈর্যধারণ করা

হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে পাক (স) ইরশাদ করেন : বিপদের প্রথম ধাক্কাতেই ধৈর্যধারণ করা হচ্ছে প্রকৃত ধৈর্য। হযরত আববাস ইবনে মালেক (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলে পাক (স) ইরশাদ করেন : বিপদের প্রথম আঘাতেই ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

মৃত লোককে চুমা দেয়া

হযরত আয়শা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী পাক (স) উসমান ইবনে মাযউন (র)-কে মৃতাবস্থায় চুম্বন করেছিলেন আর কাঁদছিলেন। অথবা রাবী বলেন, তাঁর দুই চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল।

লাশের গোসল দেয়া

হযরত উম্মু আতিয়্যা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী পাক (স)-এর এক কন্যা (হয় নব) মৃত্যুবরণ করলে তিনি বলেন : তোমরা তাকে বেজোড় সংখ্যায় তিন বা পাঁচ বা প্রয়োজনবোধে ততোধিক বার গোসল দিতে পার। বরই পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দাও। আর শেষবার পানিতে কর্পূর বা সামান্য পরিমাণ কর্পূর ঢেলে দাও। তোমাদের গোসল দেয়া শেষ হলে আামাকে জানাও। 

অতএব আমরা তার গোসল শেষ করে হুযূরে পাক (স)-কে জানালাম । তিনি আমাদের দিকে তাঁর লুঙ্গি ছুড়ে দিলেন এবং বললেন : এটি তার গায়ে লেপটে দাও। হুশায়েম বলেন, এদের (খালিদ, মানুসর) ছাড়া অন্যদের, হয়ত হুশামও তাদের অন্যতম, বর্ণনায় আছে যে, উম্মু আতিয়্যা (রা) বলেন, তার চুল আমরা তিন ভাগে বিন্যস্ত করলাম। 

হুশায়েম বলেন, আমার ধারণায় তিনি এও বলেছেন : আমরা তার চুল তার পিছনে দিকে ছেড়ে দিলাম। হুশায়েম বলেন, এদের মধ্যে খালিদ আমাকে হাফসা ও মুহাম্মাদ -উম্মু আতিয়্যা (রা)- সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন : রাসূলে পাক (স) ইরশাদ করেন : তার ডান পাশ দিয়ে তার উযূর স্থানসমূহ থেকে গোসল শুরু কর।

মৃতের জন্য কস্তুরি ব্যবহার করা

হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে পাক (স) ইরশাদ করেছেন : কস্তুরি হল সর্বোত্মম সুগন্ধি ।
হযরত আবু সাঈদ আল -খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, নবী পাক (স)-কে কস্তুরি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল । তিনি বলেন : তোমাদের সুগন্ধিগুলোর মধ্যে এটা হলো সর্বোত্তম সুগন্ধি ।

মৃতকে গোসল দেয়ার পর গোসল করা

হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী পাক (স) বলেন : মৃতকে গোসল করানোর পর গোসল করতে হবে এবং লাশ বহনের পর উযূ করতে হবে।

কাফনের জন্য যেরূপ কাপড় উত্তম

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলে পাক (সঃ) ইরশাদ করেছেন : তোমরা সাদা রঙ্গের পোশাক পর। কেননা তা তোমাদের জন্য সর্বোত্তম পোশাক। এটা দিয়েই তোমাদের মৃত
কাফন দাও।
ব্যক্তিদের
হযরত আবু কাতাদা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে পাক (স) ইরশাদ করেছেন : তোমাদের কেউ যদি তার কোন ভাইয়ের ওলী হয় তবে সে যেন তার জন্য উত্তম কাফনের ব্যবস্থা করে।

কতখানা কাপড় দিয়ে নবী পাক (স)-কে কাফন দেয়া হয়েছিল?

হযরত আয়শা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী পাক (স)-কে তিনটি সাদা ইয়ামানী কাপড় দিয়ে কাফন দেওয়া হয়েছিল। এর সাথে জামা ও পাগড়ী ছিল না। রাবী (উরওয়া) বলেন, লোকেরা আয়শা (রা)-কে বলল, কেউ কেউ বলেন তাঁকে দু'টি কাপড় ও একটি লম্বা রেখাযুক্ত চাদর দিয়ে কাফন দেওয়া হয়েছে। আয়শা কাফন দেখেননি ।

হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রাসূলে পাক (স) হামযা (রাঃ) ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা)-কে কেবল পশমী চাদরে কাফন দিয়েছিলেন ।

মৃতের পরিবার-পরিজনের জন্য খাবার তৈরী করে পাঠানো

হযরত আবদুল্লঅহ্ ইবনে জাফর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত জাফর (রা)-র শহীদ হওয়ার খবর এলে নবী পাক (স) বলেন : জাফরের পরিবারের জন্য তোমরা খাবার তৈরী কর। কেননা তাদের নিকট এখন খবর এসেছে যা তাদেরকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে।

বিপদের সময় গালে হাত চাপড়ানো-ও জামার বুক ছেড়া নিষেধ

হযরত আবদুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী পাক (স) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি (মৃত্যুশোকে জামার বুক ছিড়ে, গাল চাপড়ায় ও অন্ধকার যুগের ন্যায় হা-হতাশ করে যেস আমাদের দলভুক্ত নয়।

মৃতের জন্য বিলাপ করে কাঁদা যাবেনা

হযরত আলী ইবনে রবীআ আল-আসাদী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কারাযা ইবনে কাব নামক এক আনসারী ব্যক্তি মারা গেলে তার জন্য বিলাপ করে কান্নাকাটি শুরু হয়। হযরত মুগীরা ইবনে শোবা (রা) এসে মিম্বারে উঠলেন এবং আল্লাহ্র প্রশংসা ও গুণগাণ করার পর বললেন, ইসলামে বিলাপ করে কাদার অবকাশ কোথায়? সাবধান! 

আমি রাসুলে পাককে (স) বলতে শুনেছি ঃ যার জন্য বিলাপ করে কাদা হয় তাকে বিলাপ অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হয় । হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে পাক (স) ইরশাদ করেছেন ঃ আমার উম্মাতের মাঝে জাহিলী যুগের চারটি (খারাপ) বিষয় আছে। 

এগুলো তারা কখনও (পুরাপুরি) ত্যাগ করবে না: মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কাঁদা, বংশ তুলে গালি দেওয়া, রোগ সংক্রমিত হওয়ার ধারণা, একটি উট সংক্রমিত হলে ইট উটে তা সংক্রমিত হওয়া। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রথমটি কিভাবে সংক্রমিত হল? আর নক্ষত্রের প্রভাব মাণ্য করা অর্থাৎ অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টি হলো ।

মৃত ব্যক্তির জন্য কান্নাকাটি করা মাকরূহ

হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে পাক (স) ইরশাদ করেছেন : মৃত ব্যক্তির জন্য তার পরিবারের লোকদের কান্নাকাটির কারণে তাকে শাস্তি দেয়া হয় । হযরত আবু মূসা আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত। 

রাসুলে পাক (স) ইরশাদ করেন : কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার জন্য ক্রন্দনকারীরা যখন কাঁদে আর বলে, হায় আমাদের পাহাড়! হে আমাদের নেতা বা এরকমকোন কথা, তখন এ মৃত ব্যক্তির জন্য দুইজন ফেরেশতা নিয়োগ করা হয়। তারা তার বুকে ঘুষি মারে আর বলতে থাকে, তুমি কি এরকম ছিলে।

মৃতের জন্য কান্নাকাটি করার অনুমতি

হযরত আমরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়শা (রা)-র নিকট শুনেছেন যে, তার কাছে উল্লেখ করা হল যে, হযরত ইবনে উমার (রা) বলেন, জীবিতদের কান্নাকাটির কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হয়। (এ কথা শুনে) আইশা (রা) বলেন, আল্লাহ্ তা'আলা আবদুর রহমানের পিতাকে ক্ষমা করুন। 

তিনি মিথ্যা বলেননি। তবে হয়ত তিনি ভুলে গেছেন বা সঠিকভাবে বুঝতে পারেননি। (প্রকৃত বিষয় এই যে,) একদা রাসুলে পাক (স) জনৈকা ইহুদী নারীর লাশের বা কবরের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার জন্য কান্নাকাটি করা হচ্ছিল। 

তখন নবী (স) বলেন ঃ এরা তো তার জন্য কান্নাকাটি করছে, অথচ গোরস্থানে তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
হযরত ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী পাক (স) ইরশাদ করেন : মৃতের জন্য তার পরিবারের লোকদের কান্নাকটির কারণে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। আয়শা (রা) বলেন, আল্লাহ্ তাঁকে (ইবনে উমারকে) অনুগ্রহ করুন। তিনি মিথ্যা বলেননি, বরং ভুল [ঝেছেন । 

রাসূলে পাক (স) এক ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছিলেন যে ইহুদী ও বস্থায় মারা গিয়েছিল : মৃতকে (তার গুনাহের কারণে) শাস্তি দেওয়া হবে, তার পরিবারের লোকেরা তার জন্য কাঁদছে।
হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, নবী পাক (স) আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা)-র হাত ধরে তাকে নিয়ে নিজ পুত্র ইবরাহীম (রা)-র নিকট গেলেন। 

তিনি তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখলেন। নবী পাক (স) তাকে তুলে কোলে নিলেন এবং কাঁদলেন । আবদুর রহমান (রা) তাঁকে বললেন, আপনিও কাঁদছেন? আপনি কি কাঁদতে নিষেধ করেননি? তিনি বললেন : না, বরং আমি দুইটি নির্বোধ সুলভ ও পাপাচারমূলক চিৎকার নিষেধ করেছি বিপদের সময় চিৎকার করা, মুখমণ্ডলে করাঘাত করা এবং জামার সম্মুখভাগ ছিড়ে ফেলা আর শয়তানের মত (সুর করে) কান্নাকাটি করা। হাদীসটিতে আরো অনেক বেশী বক্তব্য রয়েছে।

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন !