বিবিধ খতমের বিবরণ
মহান আল্লাহ্ তা'আলা কোন কোন সময় মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের দুঃখ-কষ্ট, রোগ-শোক, বিপদ-মুছীবত দিয়ে থাকেন। কেননা মানুষ সুখে থাকলে দেখা যায় সে আল্লাহকে ভুলে দুনিয়ার মোহে লিপ্ত হয়ে পরকালকে নষ্ট করে ফেলে। সুতরাং এ ধরনের লোকদের আল্লাহভীতি ও পরকালমুখী করার জন্যই এসব বিপদ-মুছীবত হয়ে থাকে। ফলে মানুষ অনেক বেশি পরিমাণে কান্নাকাটি ও রোনাজারি করে আল্লাহভীরু ও পরকালমুখী হয়ে থাকে।
আবার এমনও কিছু কিছু লোক আছে যে, তাদেরকে দুনিয়ার সর্বোচ্চ আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস করার পরও আল্লাহভীতি ও পরকাল বিমুখী করতে পারে না। আল্লাহ্ তা'আলা ঐসব লোকদেরকেও বিপদ-মুছীবত দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন, বেন তারা সুখের কারণে আল্লাহকে ডাকত এখন বিপদের কারণে ধৈর্যধারণ করে কি না?
আর যারা এ সব পরীক্ষার ধৈর্যের সাথে কৃতকার্য হবে তারাই খোদার প্রিয়পাত্র হবে। তাই মহান দয়াময় আল্লাহ্ তাআলা মানুষকে বিপদ-মুছীবতে ফেলে যেমনি পরীক্ষা করতে চান তেমনি আবার সেসব বিপদ-মুছীবত হতে মুক্তি লাভ করার জন্য বিভিন্ন উপায়ও শিক্ষা দান করেছেন। আর সে শিক্ষাসমূহ হল, বিভিন্ন ধরনের বর্তন ও দোয়াসমূহ। নিম্নে কতিপয় বতনের নিয়ম বর্ণনা করা।
খতমে তাসমিয়্যাহ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
অর্থ : পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করলাম। নিয়ম : একজনে বা কয়েকজনে মিলে পাক-পবিত্র হয়ে একাগ্রচিত্তে এক লক্ষ পঁচিশ হাজার বার এ খতম পাঠ করতে হয়। এ বর্তমাকে খতমে তাসমিয়্যাহ বলে।
ফযীলত : যাবতীয় কঠিন ও কষ্টসাধ্য কাজ সমাধা করার জন্য এ খতম আগুনের মত দ্রুত ফলদায়ক ।
খতমে জালালী
(আল্লাহু) মহানআল্লাহর ইসমে যাত
খতমে জালালী পড়ার নিয়ম : কয়েকজন দ্বীনদার পরহেযগার নামাযী লোক একত্রিত হয়ে অত্যন্ত পাক-পবিত্রতার সাথে ছোট ছোট কাগজের টুকরা করে উক্ত কাগজের টুকরাসমূহের প্রত্যেকটিতে । (আল্লাহু) লিখবে এরপর আটার খামির বানিয়ে ছোট ছোট করে এক লক্ষ পঁচিশ হাজার গুলি তৈরি করবে এবং প্রত্যেকটি গুলির ভেতর ঐ আল্লাহ্ লেখা কাগজগুলো ঢুকিয়ে বড় বড় মাছওয়ালা পুকুর বা নদীতে ফেলতে থাকবে।
কাগজে লিখতে, গুলি বানাতে ও নদীতে ফেলার সময় সকলেই মুখে । (আল্লাহ্) নাম উচ্চারণ করতে থাকবে। এ খতম কিন্তু খুব পাক-পবিত্রতার সাথে আদায় করতে হবে এবং আদব রক্ষা করে চলতে হবে নতুবা হিতে বিপরীত হতে পারে ।
ফযীলত : এ খতমে এত দ্রুত ফলাফল লাভ করা যায়, যাকে বলতে গেলে হাতেনাতে পাওয়ার মত বুঝায় ।
খতমে শিফা বা তাহলীল
(লাইলাহা ইল্লাল্লাহ) ।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই ।
নিয়ম : একজনেই অত্যন্ত পাক-পবিত্র হয়ে রোগীর মাথার পাশে বসে।
পাঠ করবে। যে পর্যন্ত রোগীর রোগের শান্তি না আসে।
ফযীলত : ১। এ খতম পাঠ করার ফযীলতে বিভিন্ন রকম রোগ-ব্যাধি। হতে মুক্তিলাভ করা যায় এবং বিভিন্ন ধরনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয় ও সকল প্রকারের উদ্দেশ্য সফল হয় বলে এ খতমকে খতমে শিফাও বলা হয় ।
২। অন্য বর্ণনায় আছে, কারও যদি কোন দুঃখ-কষ্ট উপস্থিত হয় কিংবা কোন মুর্দার রূহের উপর বখশীশ করতে ইচ্ছা হয়। তবে উক্ত দোয়াসমূহ এক লক্ষ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করে মহান আল্লাহ্র নিকট কান্নাকাটি করে উদ্দেশ্য সফলতার জন্য মুনাজাত করলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা উক্ত দোয়া কবুল করবেন। এ কালিমার আরও একটি আশ্চর্য গুণ হল যদি কোন রোগীর নিকট বসে এমন উচ্চ আওয়াজে পাঠ করবে যেন রোগী শুনতে পায়।
মহান আল্লাহ্র ইচ্ছায় দশ-বিশ হাজার বার এ কালিমা পড়তে না পড়তেই উক্ত অসুস্থ রোগী সুস্থ হয়ে যাবে। এটি বহু পরীক্ষিত ।
৩। হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, নবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন—“যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত কালেমা শরীফ এক লক্ষ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করে কোন মৃত ব্যক্তির রূহে বখশীশ করে দেয়, মহান আল্লাহ্ তা'আলা এ উছিলায় তাকে ক্ষমা করে দিয়ে বেহেশ্ত দান করবেন ।
খতমে খাযেগান
নিয়ম ঃ এ খতম পাঠ করার নিয়ম হল কয়েকজন পরহেযগার-মুত্তাকী লোক অত্যন্ত পাক-পবিত্রতার সাথে বসে ৭ বার সূরায়ে ফাতিহা, ১০০ বার কুলহু আল্লাহ, আবার ৭ বার আলহামদু সূরা, ১০০ বার দরূদ শরীফ এবং ১০০ বার—
উচ্চারণ : ফাসাহিল ইয়া ইলাহী কুল্লা ছা'আমি বেহুরমাতি সাইয়্যিদিল আবরারি সাহিল বি ফালিকা ইয়া ‘আযীযু ।
অর্থ : হে আল্লাহ! নেককারগণের নেতার সম্মানার্থে আমার প্রতিটি কঠিন কাজসমূহকে সহজ করে দাও। হে ক্ষমতাবান! তোমার করুণা ও
দয়া দ্বারা সহজ করে দাও।
তারপর-
১০০ বার ইয়া কাথিয়াল হাজাত)
অর্থ ঃ হে আবশ্যকতা পূরণকারী ।
১০০ বার- (ইয়া কাফিয়াল মুহিম্মাত)
অর্থ : হে বড় কাজসমূহ আঞ্জাম দানকারী!
১০০ বার (ইয়া দাফি 'আল বালিয়্যাত)
অর্থ : হে বিপদসমূহ ধ্বংসকারী।
১০০ বার (ইয়া মুজীবাদ্দা'ওয়াত)
অর্থ : হে প্ৰাৰ্থনা গ্রহণকারী ।
১০০ বার (ইয়া রাফি 'আদ্দারাজাত)
অর্থ ঃ হে মর্যাদা বৃদ্ধিকারী ।
১০০ বার- (ইয়া গাউছু আগিছনী ওয়া আমদিদনী)
অর্থ : হে প্রার্থনা কবুলকারী! আমার প্রার্থনা কবুল কর এবং আমাকে
সাহায্য কর ।
১০০ বার- (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)
অর্থ : নিশ্চয়ই আমরা মহান আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকে ফিরে যাব।
১০০ বার- উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনায় যোয়ালিমীন। অর্থ : হে আল্লাহ্! তুমি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তোমারই
পবিত্রতা ঘোষণা করছি। নিশ্চয়ই আমি অপরাধীদের মধ্যে গণ্য ।
১০০ বার- (রাব্বি আন্নী মাগলূবুন ফানতাছির)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি অত্যাচারিত হয়ে তোমার নিকট সাহায্য
প্রার্থনা করছি, তুমি আমাকে সাহায্য কর।
১০০ বার (রাব্বি আন্নি মাচ্ছানিয়াদ্বদুররু ওয়াআনতা আরহামুর রাহিমীন)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি অত্যধিক ক্ষতিগ্রস্ত ও পীড়িত হয়েছি এবং তুমিই দয়ালু ও মেহেরবান।
১০০ বার (ইয়া আৱহামার্ রাহিমীন)
অর্থ : হে দয়াময় ও দয়ালু প্রভু!
প্রকাশ থাকে যে, এসব দোয়াসমূহ যথারীতি পাঠ করে নিম্নলিখিত
আয়াতে শিফাসমূহ এবং সালামসমূহ পাঠ করবে।
৬টি আয়াতে শিফা
উচ্চারণ : (ওয়া ইয়াশফি ছুদূরা ক্বাওমিম মু'মিনীন)
উচ্চারণ :(ওয়া শিফাউঁল্লিমা ফিচ্ছুদূরি)
উচ্চারণ : ওয়াইয়াখরুজু মিমবুতুনিহা শারাবুম মুখতালিফুন আলওয়ানুহু ফীহি শিফাউন্ লিন্নাছি।
উচ্চারণ : ওয়ানুনাযিলু মিনাল কুরআনি মা হুয়া শিফাউওঁ ওয়া রাহমাতুল্লিল মু'মিনীনা ।
উচ্চারণ :(ওয়াইযা মারিদ্বতু ফাহুয়া ইয়াশফীনা)
উচ্চারণ :(কুলহুয়া লিল্লাযীনা আমানূ হুদাওঁ ওয়া শিফাউন।)
৬টি আয়াতে সালাম
সালামুন ক্বাওলাম্ মির রাব্বিররাহীম)
(সালামুন আলা ইলইয়াসীন)
(সালামুন আলা নূহিন ফিল'আলামীন)
(সালামুন আলাইকুম ত্বিবতুম ফাদখুলূহা খালিদীন)
(সালামুন 'আলা মূসা ওয়া হারুন)
(সালামুন হিয়া হাজ্বা মাতুলা'য়িল ফাজরি)
১০০ বার যে কোন দরূদ শরীফ পাঠ করে নিজের উদ্দেশ্য সফল হবার নিমিত্তে দেয়া-মুনাজাতের জন্য হাত উঠিয়ে প্রথমে সমস্ত নবীগণ, 'আশারায়ে মুবাশশেরাগণ, আউলিয়াগণের রূহ মুবারকে ছাওয়াব রেছানী করে বলবে, হে আল্লাহ্! তাদের রূহানী ফয়েজের বরকতে আমার দোয়া কবুল কর।
ফযীলত : এ খতমের দ্বারা কোন চাকরি, কার্যসিদ্ধি বা উদ্দেশ্য সফল করতে আশাতীতভাবে ফল লাভ করা যায় ।
Disclaimer: যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন ! |