দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 10

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 10

ময়দানে হাশর

মহান আল্লাহ্র নির্দেশে ইস্রাফীল (আঃ)-এর সিঙ্গার ফুঁকে মানুষ কবর হতে দলে দলে উঠে হাশরের মাঠে জমা হবে। এ হাশরের মাঠের অবস্থান দুনিয়ার হিসেব অনুযায়ী ৫০ হাজার বছরের সমান হবে এবং এ সময়ের মধ্যে হাশর মাঠের বিভীষিকাময় অবস্থার ইঙ্গিত পূর্বে কিছুটা দেয়া হয়েছিল। এ মাঠের জমিন হবে তামার, সূর্য মানুষের মাথার আধা হাত উপরে থেকে স্বীয় বুক দিয়ে তাপ দেবে। হাশরের ময়দান কোথায় অবস্থিত ?

মানুষ ক্ষুৎপিপাসার তাড়নায় অস্থির হয়ে পড়বে। সেদিন মানুষের মাথার মগজ রোদের তাপে গরম হয়ে টগবগ করতে থাকবে। এসব ছাড়াও অসংখ্য কষ্ট হবে যা কোন ভাষা, লেখনী বা কল্পনায়ও আনা সম্ভব নয়। এহেন কঠিন হাশরের মাঠে মাত্র সাত শ্রেণীর লোক মহান আল্লাহর আরশের নিচে স্থান পাবে এবং নেককার লোকেরা হাউজে কাউসারের অমীয় সুধা পানে সক্ষম হবে। 

আর খাদ্য হিসেবে এক টুকরা রুটি পাবে, যেটি খাওয়ার ফলে তাদের আর ক্ষুধা-পিপাসা লাগবে না । সুতরাং বুঝা গেল যে, প্রতিটি প্রাণীকেই জীবন-মৃত্যুর পর হাশরের মাঠে একত্রিত হতে হবে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদের অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে—“যেদিন তোমাদেরকে মহান আল্লাহ্ তা'আলা একত্রিত করবেন, অবশ্যই সে দিনটির আগমন সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই।” হাশরের ময়দানে আল্লাহ তাআলার আগমন?

কারও অন্তরে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, মৃত্যুর পর এ জড়দেহ কোন পশু-পাখি খেয়ে ফেলেছে, সাগরের পানিতে মাছের পেটে চলে গেছে। আগুনে পুড়ে গেছে বা পোড়ানো হয়ে ছাই-ভস্ম করা হয়েছে। কবরের মাটির সাথে মিশে গেছে, এসব ক্ষতবিক্ষত বা নিশ্চিহ্ন দেহ আবার কিরূপে একত্রীভূত করা হবে ? 

এ প্রশ্নের একটি উত্তরই যথেষ্ট যে, যখন কিছুই ছিল না মহান আল্লাহ্ অস্তিত্বহীনতা হতে অস্তিত্ব দান করলেন সে অস্তিত্ব যতই বিনষ্ট হউক না কেন তাকে পুনরুত্থান করা মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর পক্ষে অবশ্যই সম্ভব।

মুক্তিপ্রাপ্ত সাত শ্রেণীর লোকদের বিবরণ

হাশরের মাঠে যে সকল লোক মুক্তিলাভ করবে তাদের মধ্যে সাত শ্রেণীর লোকের কথা উল্লেখ রয়েছে। নিম্নে এদের পরিচয় দেয়া হল ।
১। ন্যায়পরায়ণ রাজা বাদশাহ : বিচারের সময় যারা কোন প্রকার পক্ষপাতিত্ব না করে সঠিকভাবে বিচার করেছেন এবং জনসাধারণকে এক সমান নজরে দেখেছেন।

২। 'ইবাদাতকারী যুবক ঃ অর্থাৎ যে যুবক নিজের কু-প্রবৃত্তির তাড়নায় পরিচালিত না হয়ে বরং আল্লাহ্র প্রেমে পড়ে তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী জীবনকে পরিচালিত করে 'ইবাদাত-বন্দেগী করেছে এবং মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ্ শাস্তির ভয়ে যার চক্ষু হতে পানি বের হয়েছে।

৩। সৃষ্ট জীবের সাথে ভালোবাসাকারী : দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্য লাভের লোভ না করে যদি আল্লাহ্ কোন নেক বান্দাকে ভালোবেসে থাকে ঐ সব লোক ৷
৪। সৎ-চরিত্রবান লোক : সুন্দর রূপসী ষোড়শী ত্বন্নী তরুণীর অসৎ এবং খারাপ উদ্দেশ্যে আহ্বান শুনেও আল্লাহ্র ভয়ে যে ব্যক্তি আত্মসংযম করেছে সেসব লোক ।

৫। একাগ্রচিত্তে আল্লার ইবাদাতকারীগণ : নির্জনে আল্লাহকে ডেকেছে এবং আযাবের ভয়ে কান্নাকাটি করেছে ঐ সব লোক ।
৬। গোপনে দানকারী : যে ব্যক্তি গোপনে দান-খয়রাত করেছে এতে কোনরূপ লোক দেখানো উদ্দেশ্য ছিল না। এমনকি ডান হাতে দান করার সময় বাম হাতও জানে না যে, কি দান করেছে।

৭। মসজিদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনকারী : ঐ সকল লোক যারা সদাসর্বদা মসজিদে গিয়ে জামা'আতে নামায আদায়ে তৎপর থাকত এবং • মসজিদের সাথে সবসময় সম্পর্ক রাখত।
এছাড়াও সে কঠিন হাশরের মাঠে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর হাতে থাকবে সত্যবাদীতার ঝাণ্ডা। দুনিয়ার সকল সত্যবাদীগণ তাঁর ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন আর মুজাহিদ এবং সাধুগণও সে পতাকার নিচে সমবেত হবেন ।

হযরত ওমর (রাঃ)

হযরত ওমর (রাঃ)-এর হাতে থাকবে ন্যায়পরায়ণতার ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল ন্যায়পরায়ণ লোকগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন।
হযরত ওসমান (রাঃ)-এর হাতে থাকবে দানের ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল দানশীল ব্যক্তিগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন।

হযরত আবু দারদাহ (রাঃ)-এর হাতে থাকবে দারিদ্র্যতার ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল দরিদ্র লোকজন তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন। হযরত উবাই ইবন কা'আব (রাঃ)-এর হাতে থাকবে কিরাআতের ঝাণ্ডা । পৃথিবীর সকল ক্বারীগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন।

হযরত মা'আয (রাঃ)-এর হাতে থাকবে বিজ্ঞতা বা জ্ঞানের ঝাণ্ডা । পৃথিবীর সকল ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারী বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে
সমবেত হবেন ।

হযরত বেলাল (রাঃ)-এর হাতে থাকবে আযানের ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল মুয়ানগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন ।
হযরত হুসাইন (রাঃ)-এর হাতে থাকবে শাহাদাতের ঝাণ্ডা। পৃথিবীর সকল শহীদ এবং নির্দোষভাবে হত্যা হওয়া ব্যক্তিগণ তাঁর সে ঝাণ্ডার নিচে সমবেত হবেন ।

সেদিন মহান আল্লাহ্ পাক ঘোষণা দিয়ে বলবেন—“কোথায় যালেম সম্প্রদায়েরা! আস দেখি আজ তোমাদের দম্ভ কোথায় এবং কিরূপ ছিল এর হিসাব দাও। সেদিন কারও উপর কোনরূপ যুলুম করা হবে না, যার যার কৃতকর্মের ফলাফল যথাযথভাবে তাদেরকে দেয়া হবে।”
উল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে দেখা যাবে যে, আমরা আরশের নিচে স্থান পাব কি না? 

আর আমরা কোন ঝাণ্ডার নিচে স্থান পাবার উপযুক্ততা অর্জন করেছি! সে ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে আমাদেরকে বাকি জীবনের সম্মুখ পথে অগ্রসর হওয়া উচিত, নতুবা এসব কারণে কর্মফল ভোগ করতে হবে। মহান আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে সঠিক সোজা পথে পরিচালিত করে তার করুণা এবং কৃপা দান করুন।

মীযান বা পাল্লা : হাশরের মাঠে মানুষের 'আমপের অর্থাৎ কর্মফলের পরিমাপের জন্য মীযান বা দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে। এ দাঁড়িপাল্লাতে মানুষের 'আমলের নেকী-বদীসমূহ ওজন করা হবে। এতে কারও প্রতি কোনরূপ পক্ষপাতিত্ব করা হবে না। এ মীযান বা পাল্লা সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআন কারীমে ঘোষণা করেন “অতঃপর যার নেকীর ওজন ভারী হবে সে ব্যক্তি পরম রমনীয় স্থানে অবস্থান করবে এবং যার নেকীর ওজন হাল্কা হবে সে ব্যক্তির অবস্থান হবে হাবিয়াহ নামক দোযখে।”

মহাপবিত্র কোরআন মজীদের এ আলোচনা হতে এ কথাই বুয়া যায় যে, যার নেকী বেশি তার নেকীর পাল্লা ভারী হবে, আর যার বদীর পাল্লা ভারী হবে তার জন্য রয়েছে ভীষণ কষ্টকর স্থান দোযখ। আর যাদের নেকী ও বদীর পাল্লা উভয়ই সমান হবে, তাদেরকে বেহেশত এবং দোযখের মধ্যবর্তী “আরাফ” নামক স্থানে রাখা হবে। মহান আল্লাহ্ তা'আলা ইচ্ছা করলে দোষী ব্যক্তির নেকীর পাল্লা ভারী করে তাকেও ক্ষমা করে দিতে পারেন। এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীস শরীফে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি।

জনৈক ব্যক্তি ছিল খুবই দুষ্ট প্রকৃতির। সে ব্যক্তি ৯৯ জন নিরপরাধ লোককে হত্যা করেছিল। সে পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তখনকার দিনে একজন মাওলানা সাহেবের নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে ফতোয়া চাইল। উত্তরে মাওলানা সাহেব বললেন যে, “তুমি জাহান্নামী।” এ কথা শুনা মাত্র ঐ দুষ্ট লোকটি বলল, তোমাকে হত্যা করেই তাহলে সংখ্যা ১০০ পূর্ণ করে নেই। 

একথা বলে সে মাওলানা সাহেবকেও হত্যা করল। এরপর দুষ্ট লোকটি অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করল এবং পবিত্র হজ্জের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা শরীফ রওয়ানা হল। পথিমধ্যে লোকটির মৃত্যু হল। মৃত্যুর পর দু'দল ফিরিশতার মধ্যে তর্ক বেঁধে গেল। 

তর্কের কোন মীমাংসা করতে না পেরে তারা দু'দলই মহান আল্লাহর নিকট মীমাংসার জন্য প্রার্থী হল। মহান আল্লাহ্, তাদেরকে বললেন, মৃত লোকটির পথকে দু'ভাগ করে মেপে দেখা যাক, অবস্থা কি হয়? 

এরপর তার দু'দিকের পথ মাপ দেয়ার পর দেখা গেল যে, মক্কা শরীফের দিকের রাস্তায় সে আধা হাত পরিমাণ বেশি অগ্রসর হয়েছে। তখন মহান আল্লাহ্ তা'আলা ঘোষণা দিলেন যে, লোকটি বেহেশ্তী । তখন তাকে বেহেশতের ফিরিশ্তারা নিয়ে গেল। দয়াময় আল্লাহ্ তা'আলা এভাবেই নেকীর পাল্লাকে ভারী করে থাকেন ।

পুলসিরাত

কঠিন হাশরের মাঠে হিসাব-নিকাশের পর মহান আল্লাহ্ তা'আলা সকল লোকদেরকে স্বীয় নবীগণের সাথে পুলসিরাত পাড়ি দিতে নির্দেশ দেবেন। পুলসিরাত অর্থাৎ পুল, তবে এটি দুনিয়ার কোন পুলের মত সাধারণ পুল নয়। এটি হবে চুলের চেয়েও চিকন আর তলোয়ারের চেয়েও ধারাল। 

এ পুলটির নমুনা হল দশ হাজার বছর নিচের দিকে যেতে হবে দশ হাজার বছর সোজা যেতে হবে, আবার দশ হাজার বছর উপরের দিকে উঠতে হবে। এর দৈর্ঘ্য মোট ত্রিশ হাজার বছরের রাস্তা হবে। 

এ পুল হাশরের মাঠ হতে আরম্ভ হয়ে বেহেশতের মাঠ পর্যন্ত হবে। এ পুলের নিম্নভাগে দোযখসমূহ অবস্থিত। পুলসিরাত পার হবার সময় নেক্কার লোকদের জন্য আগে-পিছে আলো থাকবে আর ঐ পুলটি তাদের নিকট অত্যন্ত প্রশস্ত বলে মনে হবে। নির্বিঘ্নে নেক্কার লোকগণ এ পুল পার হবেন। তাদের কেউ বিজলীর ন্যায়, কেউ বাতাসের ন্যায়, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ায় আরোহণকারীর ন্যায়, কেউ দৌড়ে, কেউ পায়ে হেঁটে, আবার কেউ হামাগুড়ি দিয়ে পার হবে। 

অপরদিকে গুনাগার লোকেরা এ পুল পার হবার সময় ঘোর অমাবশ্যার ন্যায় মনে করবে এবং কোন মতেই তারা এ পুল পার হতে পারবে না। এ পুল পার হতে গিয়ে তারা হাত-পা কেটে দোযখে পতিত হবে ।

হাশরের মাঠে হিসাব-নিকাশের পর সকল মানব-দানবকেই এ পুলসিরাত পাড়ি দিতে হবে। সুতরাং সকলকেই এ দুনিয়ার জীবনেই পরকালের জীবনের এসব অলোচনা শুনে সতর্ক হয়ে নেক্কাজ করে নিজের জীবনকে ইসলামী বিধান অনুযায়ী গঠন করে উল্লিখিত ঘাঁটিসমূহে নির্বিঘ্নে পাড়ি দেয়ার সম্বল তৈরি করা প্রয়োজন। মহান আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে নেক আমল করার তৌফিক দান করুন ।

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন