দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 11

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 11


মৃত্যু, কাফন-দাফন

মৃত্যু বা তিরোধান
জীব বলতেই বুঝা যায় যে, তা মরণশীল, চাই সে আশ্রাফুল মাকাত মানুষ হোক বা গরু বাছুর বা অন্য কোন প্রাণীই হোক না কেন তাকে অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তাই তো আল্লাহ্ পাক বলেন-
(কুল্লু নাফসিন্ জায়িকাতুল মাউত) অর্থ প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে । অন্যত্র আল্লাহ ঘোষণা করেন ।

উচ্চারণ : আইনামা তাকূনূ ইয়ূদরিক কুমুল মাউতু, ওয়া লাউ কুতুম ফী বুরুজীম মুশাইয়াদাহ্ । অর্থ : তোমরা যেখানেই অবস্থান কর না কেন মৃত্যু তোমাদেরকে গ্রাস করবেই যদিও তোমরা সুরক্ষিত দূর্গে অবস্থান কর। হযরত আদম (আ) হতে অদ্যবধি যত লোক দুনিয়াতে আগমন করেছে তাদের প্রত্যেকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেছে। যারা বর্তমান বিদ্যমান আছে তারাও একদিন মৃত্যুমুখে পতিত হবে। মৃত ব্যক্তির জানাযা ও কাফন-দাফনের ক্ষেত্রে রসূলের সুন্নাত ।

যারা ভবিষ্যতে আসবে তারাও হযরত আযরাইল (আ)-এর হাত থেকে মুক্তি পাবে না। ধনী হোক গরীব হোক সকলকেই মৃত্যুর তিক্ত স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে অনেক কিছুই আবিষ্কার হয়েছে কিন্তু মৃত্যু হতে বাঁচার কোন পদ্ধতি কেউ বের করতে পারেনি আর পারবেও না। 

কথায় বলে “শেষ ভাল যার সব ভাল তার” তাই যে ব্যক্তি জীবন সায়াহ্নে ঈমানের সাথে ইহধাম ত্যাগ করতে পারবে, তার জীবন হবে মঙ্গলময় ও কল্যাণকর খোদাভীরু ব্যক্তিদের সাধারণত মৃত্যু কালে ঈমান নসীব হয়ে থাকে । আর বদকারদের সাধারণত ঈমান নসীব হয় না । 

তবে মৃত্যুর পূর্বে যদি তার ওতবা করেন তবে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও দয়ালু। কেউ বলতে পারবে না তার মৃত্যু কখন এসে যাবে। তাই সর্বদাই মৃত্যুকে স্মরণ রাখা উচিত। আর মৃত্যুর কথা সর্বদা মনে থাকলে মানুষ কখন অশ্লীলতায় লিপ্ত হতে পারে না। এ কারণেই তো প্রিয় নবী (স) ইরশাদ করেছেন-

আকছিরু জিরকা হা-জিমিল লাজ্জাত আল-মাউতু ।
অর্থ : সকল স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুকে অধিক স্মরণ কর। আর যে ব্যক্তি সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করে তাকে তিনটি জিনিস প্রদান করা হয় (১) মৃত্যুর পূর্বে তার তওবা নসীব হয় । (২) সে ব্যক্তি অল্প সম্পদেই তুষ্ট থাকে (৩) তাকে ইবাদত বন্দেগীতে আকৃষ্ট করে বা তার ইবাদত বন্দেগীতে সময় কাটাতে ভাল লাগে ।

আল্লাহভীরু লোকের মৃত্যু

যখন কোন নেককার বান্দার পৃথিবীর আয়ূকাল শেষ হয়ে যায় তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সে ব্যক্তির নাম মালাকুল মউত বা মৃত্যু ঘটানোর দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাদের সর্দারের কাছে গিয়ে বলেন আমার অমুক আমার কাছে নিয়ে এস । বান্দা আমার পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে তাকে দুনিয়ার কষ্ট ক্লেশ হতে আদেশ শ্রবণ মাত্র মালাকুল মউত পাঁচশত ফেরেশতার এক বহর সহ জান্নাতী কফিন ও সুগন্ধি যুক্ত ফুলের তোড়া নিয়ে সে ব্যক্তি শিয়রে উপস্থিত হন। মৃত্যু নিয়ে ইসলামিক উক্তি ।

তার চোখের সম্মুখে বেহেশতের শান্তি তুলে ধরেন। বেহেশ্ত দেখা মাত্র ঐ ব্যক্তির জান তথায় যাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে। আর মালাকুল মউত অত্যন্ত আসানীর সাথে তার দেহ হতে জান কে আলাদা করে ফেলেন। মনে হয় যেন সে মায়ের বুকের দুগ্ধ পান করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। 

ফেরেশতাগণ তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে আকাশে নিয়ে যান। তার ওফাতে পৃথিবীর ঐসকল স্থান কাঁদতে থাকে যেখানে সে ইবাদত করেছিল । রুহ আল্লাহর দরবারে গিয়ে সিজদাবনত হয় এবং সাথে সাথেই আল্লাহ্ তার ঠিকানা জান্নাত নির্ধারণ করে তাঁকে জান্নাতে পাঠিয়ে দেন । 

আল্লাহদ্রোহী লোকের মৃত্যু

যখন কোন খোদাদ্রোহী লোকের দুনিয়ার আয়ূকাল শেষ হয়ে আসে তখন আল্লাহ্ তায়ালা মালাকুল মউতকে ডেকে বলেন, আমার ঐ দুশমনকে জিঞ্জিরা বন্ধ করে নিয়ে আস। নির্দেশ পাওয়া মাত্রই হুকুম তামীলের জন্য মালাকুল মউত ভয়ংকর রূপ ধারণ কারী পাঁচশত ফেরেশতাসহ ঐ বদকারের সম্মুখের এসে উপস্থিত হবেন । যাদের রূপ দেখলে এমনিতেই মানুষের হৃদয় শুকিয়ে যায়। 

আর তাদের হাতে থাকে জাহান্নামের অগ্নি দ্বারা নির্মিত বিরাট কন্টক যুক্ত লৌহ দণ্ড তারা তা দ্বারা ঐ বদকারকে সজোরে আঘাত করবে। আর এ আঘাতের কারণে সে বারবার জ্ঞান হারা হয়ে পড়বেন । এমনিভাবে রুহকে একবার পায়ের গোড়ালীতে আটক করে ভয়ানক শাস্তি দেয়া হবে। 

আর এ রুহ কবজের সময় তার এত কষ্ট হবে যেমনটি হয় জবেহ্ না করে ছাগল হতে চামড়া ছাড়ান হলে-আমরা আল্লাহর কাছে এ ভয়ানক শাস্তি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে তোমার নিরাপদ আশ্রয় দান কর । আমীন!

একটি কথা
মৃত্যুর সময় নেককার বান্দাদের শান্তি আর বদকারদের ভয়ানক শাস্তি জাগ্রত মানুষেরা অনুভব করতে পারবে না। যেমনিভাবে ঘুমন্ত ব্যক্তির স্বপ্ন জাগ্রত ব্যক্তিগণ আঁচ করতে পারে না ।

মৃত্যু শয্যায় যা করণীয়

যদি কোন ব্যক্তি মৃত্যু শয্যায় শায়িত হয় তখন তার কাছের ব্যক্তিদের উচিত তার পাশে বসে সূরায়ে ইয়াসীন তেলাওয়াত করা এবং উচ্চস্বরে 'কালেমা পড়া যাতে করে সে তা শুনে নিজে নিজে কালেমা পড়ে নেয় তবে পড়ার জন্য তলকীন যাবে না। কেননা যদি সে না বুঝে অস্বীকার করে ফেললে তবে তো বেঈমান হয়ে ইহধাম ত্যাগ করতে হবে। 

কাজেই পড়ার জন্য তলকীন না দিয়ে তার পাশে বসে উচ্চস্বরে কালেমা পাঠ করতে হবে। আর সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করলে যদি তার শাস্তি হতে থাকে তবে উহাতে সূরায়ে ইয়াসিনের তোলাওয়াতের কারণে শাস্তি কিছুটা হ্রাস করা হয়। প্রাণ বের হয়ে গেলে সর্ব প্রথম তার চোখগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। 

মুখ যেন হা করে না থাকে সে জন্য মাথা হতে চিবুকের সাথে একটি কাপড় পেঁচিয়ে বেঁধে দিতে হবে। হাত ও পা সোজা করে দিতে হবে। পায়ের পাতাদ্বয়ের মাঝে যেন ফাঁকা না থাকে সেজন্য উভয় পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিকে একসাথে কিছু দ্বারা বেঁধে দিতে হবে। সমস্ত শরীর একটি চাদর দ্বারা আবৃত করে দিবে।

মৃত ব্যক্তির গোসল

মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া জীবিতদের উপর ফরজে কেফায়া এবং পুরুষের গোসল পুরুষে আর মেয়েদের গোসল মেয়েরা দিবে এবং গোসল দেয়ার ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির কাছের আত্মীয়রাই উত্তম। যদি তাদের মধ্যে গোসল দেয়ার মত কেউ না থাকে তবে যে কোন একজন দ্বীনদার ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির গোসল দিবে।

গোসল দেয়ার পদ্ধতি

প্রথমত মৃত ব্যক্তিকে একটি কাঠের খাটি বা অন্য কোন উঁচু বস্তুর উপর রাখবে। এরপর তার চতুর্দিকে কাপড় বা অন্য কিছু দ্বারা ঘিরে ফেলবে, যাতে করে ভিতরে কি হচ্ছে তা অন্য কেউ বুঝতে না পারে। যদি গোসলখানায় গোসল দেয়া হয় তবে অতিরিক্ত পর্দা দেয়ার প্রয়োজন নেই। আর ঐ পর্দার অন্তরালে গোসলদাতা ও সাহায্যকারী এ দু'জন ব্যতীত আর কেউ থাকবে না খাটের চারিদিকে আগর বাতি জালিয়ে দেয়া ভাল ।

এরপর মৃত ব্যক্তির সকল কাপড়-চোপড় তার শরীর থেকে খুলে ফেলতে হবে। নাভী হতে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত অন্য একটি কাগড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। অতঃপর হাতে কাপড় পেঁচিয়ে ঢিলা ও পানি দিয়ে মৃত্যের ইস্তেঞ্জা করিয়ে দিতে হবে। এ সময় ভুল ক্রমেও সতরের দিকে তাকান যাবে না। বস্ত্রহীন হাতে লজ্জাস্থান স্পর্শও করা যাবে না। 

এরপর মৃত ব্যক্তিকে অজু করিয়ে দিবে তবে নাকে ও মুখে পানি প্রবেশ করাবে না, ভিজা কাপড় দ্বারা মুখের ভিতর ও নাক মুছে পরিষ্কার করে দিবে, ওজু করানোর সময় প্রথমে মুখমণ্ডল এরপর ডান হাত ও পরে বাম হাতের কনুই পর্যন্ত ধৌত করতে হবে। অতঃপর মাথা মাছেহ্ করাতে হবে। এরপর আগে ডান পা ও পরে বাম পা ধোয়াতে হবে।

এরপর বড়ই পাতা দিয়ে গরম করা পানি নিয়ে গোসল করাতে হবে । বড়ই পাতা না থাকলে অন্য কোন ঔষধ বা শুধু গরম পানি দিয়েই গোসল করাবে। গোসলের পূর্বে নাকে ও কানে কিছু তুলা দিয়ে আটকে দিতে হবে যাতে করে পানি ঢুকতে না পারে। (যদি কার ঋতুবর্তী বা নিফাস বা ফরজ গোসল থাকাকালীন মৃত্যু হয় তবে তার নাকে ও মুখে পানি পৌছাতে হবে) এরপর মাথার চুল ও দাড়ি সাবান দ্বারা ভালভাবে ধৌত করাতে হবে। 

এরপর মৃত ব্যক্তিকে বাম কাতে শুইয়ে দিয়ে ডান পার্শ্বে তিনবার বা পাঁচবার পানি ঢেলে ভালভাবে ধৌত করতে হবে। এরপর ডান কাতে শুইয়ে দিয়ে পূর্বের ন্যায় বাম পার্শ্বে পানি ঢেলে ভালভাবে ধৌত করতে হবে। এরপর মৃত ব্যক্তিকে নিজের সাথে বা অন্য কোন কিছুর সাথে সামান্য হেলান দিয়ে বসিয়ে আস্তে আস্তে পেটে চাপ দিবে, যাতে করে পেটের ভিতর কোন কিছু থাকলে তা যেন বের হয়ে যায়। 

যদি কিছু বের হয় তবে তা ধুয়ে ফেলবে। এতে করে নতুন অজু করানোর প্রয়োজন হবে না। এভাবেই গোসলের কাজ সমাধা হয়ে যাবে।
গোসলের পর শুকন কাপড়ের মাধ্যমে সমস্ত শরীর ভালভাবে মুছে ফেলতে হবে। এরপর মৃত ব্যক্তির মাথা, কপাল, দাড়ি, নাক উভয় হাতের তালু, উভয় হাঁটু ও পায়ের তালুতে আতর বা কর্পূর লাগিয়ে দিতে হবে।

একটি জ্ঞাতব্য
যদি কোন অঙ্গ যথা হাত, পা, মাথা, ইত্যাদি পাওয়া যায় তবে গোসল ছাড়াই তা দাফন করে দিবে। তদ্রুপ যদি মাথা বিহীন শরীরের অর্ধেক বা তার চেয়ে কম পাওয়া যায় তবে তাও বিনা গোসলে দাফন করতে হবে। আর যদি মাথাসহ অর্ধেক বা মাথা ছাড়া অর্ধেকের কম পাওয়া যায় তবে তাকে গোসল ও কাফন দাফন করতে হবে এবং তার জানাজার নামাযও পড়া হবে। 

যদি কোন মৃত্যের পরিচয় পাওয়া না যায় যে, সে মুসলমান না কাফের এবং তার শরীরে যদি এর কোন চিহ্নও না পাওয়া যায় তখন তাকে যদি দারুল ইসলাম বা ইসলামী এলাকায় পাওয়া যায় তবে তাকে গোসল ও কাফন দাফন করে তার জানাজার নামাযও আদায় করতে হবে। 

আর যদি তাকে দারুল কুফুর বা কাফেরদের এলাকায় পাওয়া যায় এবং সে মুসলমান না কাফের তা যদি সনাক্ত করা না যায় তবে তাকে গোসল ও কাফন দাফন করতে হবে না এবং তার জানাজার নামাযও পড়া হবে না।

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন