দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 25

দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি - Part 25

ইস্তেখারা নামাযের বিবরণ

কোন ব্যক্তি যখন কোন কাজ করার ইচ্ছা করবে, তখন মহান আল্লাহর দরবারে সে কাজের কল্যাণ ও বরকতের জন্য দোয়া করে নিবে, এরপর সে কাজে অগ্রসর হবে। এরূপ দোয়া ও প্রার্থনা করাকেই ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ইস্তেখারা বলে। হাদীস শরীফে এরূপ ইস্তেখারা করার প্রতি বিশেষ উৎসাহ দেয়া হয়েছে ।

মহানবী (সাঃ) বলেন-আল্লাহর নিকট কল্যাণ ও বরকতের জন্য দু'আ প্রার্থনা না করা দুর্ভাগ্যের নিদর্শন। (অবশ্য ফরয, ওয়াজিব এবং নিষিদ্ধ নাজায়েয কাজের জন্য ইস্তেখারা নেই।) বিবাহ-শাদী, প্রবাসগমন, কোন জিনিস ক্রয়-বিক্রয়, বাড়ি-গাড়ি নির্মাণ ইত্যাদি মুবাহ কাজের জন্য ইস্তেখারা করবে। এতে আল্লাহর মর্জি ভাল ফল লাভ হবে এবং কোনরূপ অনুতাপের কারণ ঘটবে না ।

ইস্তেখারা করার শরয়ী বিধান হল, (এশার নামায আদায় করার পর নতুনভাবে অযূ করে) প্রথমে দু'রাক'আত নামায খুব মনোযোগের সাথে আদায় করবে এবং নিম্নোক্ত দোয়াটি (অর্থ জানা থাকলে অর্থের দিকে মনোযোগ রেখে এবং আল্লাহ্ তা'আলাকে হাজির-নাজির জেনে) কমপক্ষে তিনবার পাঠ করবে ।

ইস্তেখারার দোয়া

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নী আসতাখীরুকা বি‘ইলমিকা ওয়াস- তাকদিরুকা বিকুদরাতিকা ওয়াসআলুকা মিন ফাদ্বলিকাল ‘আযীমি ফাইন্নাকা তাক্বদিরু ওয়ালা আকদিরু ওয়াতা'লামু ওয়ালা আ'লামু ওয়াআস্তা 'আল্লামুল গুয়ূবি। 

আল্লাহুম্মা ইনকুনতা তা'লামু আন্না হাযাল আমরা খাইরুন লী ফী দ্বীনী ওয়া মা‘আশী ওয়া ‘আক্কিবাতি আমরী ফাকাদ্দিরহু লী ওয়া ইয়াচ্ছিরহু লী ছুম্মা বারিক লী ফীহি ওয়াইন কুন্তা তা'লামু আন্না হাযাল আমরা শার্রুন লী ফী দ্বীনী ওয়া মা‘আশী ওয়া‘আক্বিবাতি আমরী ফাছরিফহু ‘আন্নী ওয়াছরিফনী ‘আনহু ওয়াক্বদির লিয়াল খাইরা হাইছু কানা ছুম্মা আরদ্বিনী বিহী ।

অর্থ : হে আল্লাহ্! আমি আপনার মহান অনুগ্রহের আশা করি । আপনি অসীম ক্ষমতাবান, আমি অক্ষম। আপনি সবকিছুই জানেন আমি কিছুই জানি না । আপনি গুপ্ত ও অদৃশ্য বিষয়সমূহও সম্যকরূপে জ্ঞাত। হে আল্লাহ! যদি আমার এ কাজটি দ্বীনের জন্য আমার পার্থিব স্বার্থের অনুকূল এবং আমার পরিণামের জন্য কল্যাণকর মনে করেন তবে আপনি তা আমার জন্য নির্ধারিত করে দিন এবং সহজসাধ্য করে দিন এবং এতে আমার জন্য খায়ের ও বরকত দান করুন। 

আর যদি এ কাজ আমার দ্বীনের জন্য পার্থিব স্বার্থের বিপরীত এবং পরিণামের জন্য অমঙ্গলজনক ও অকল্যাণকর হয়, তবে এ কাজকে আমা হতে দূরে রাখুন, আর যাতে আমার জন্য ভাল ও উপকার আছে তা আমার জন্য নির্ধারিত করে দিন ।
প্রকাশ থাকে যে, “হাযাল আমরা” বাক্যটি মুখে উচ্চারণ করার সময় যে কাজটির জন্য ইস্তেখারা করা হচ্ছে, সে কাজটির কথা মনে মনে খেয়াল করবে। শোয়ার সময় উত্তর শিয়রী হয়ে ডান কাতে পশ্চিম দিকে মুখ করে রাখবে। 

সকালে ঘুম হতে উঠে যেদিকে মনের ঝোঁক অনুভূত হয় সেদিকেই কাজে লেগে যাবে। আল্লাহর মর্জি এতেই শুভ ফলাফল অর্জন হবে। অনেকের ধারণা, ইস্তেখারার মাধ্যমে গায়েবের রহস্য জানা যায় এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশ আসে। আসলে না, এমন কোন বাধ্য-বাধকতা নেই। এরূপ ঘটনা ঘটলে ঘটতে পারে আর নাও ঘটতে পারে। ইস্তেখারার দ্বারা উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহর পক্ষ হতে এরূপ কোন ইঙ্গিত লাভ করা যায়, যা দ্বারা সামান্য চিন্তা-ভাবনা করলেই কর্তব্য
নির্ধারণ করা যায়।

প্রকাশ থাকে যে, একদিনের ইস্তেখারায় কোনরূপ সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারলে পর পর তিনদিন করবে। এতেও ফল না পেলে সাতদিন পর্যন্ত এ 'আমল করলে, ইনশাআল্লাহ্ অবশ্যই ফল লাভ করবে। যে কোন কাজের শুভ ফলের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করাই হল ইস্তেখারার লক্ষ্য। সুতরাং কোনরূপ ইঙ্গিত না পেলেও আল্লাহর নাম নিয়ে এবং তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করে কাজ আরম্ভ করলে আল্লাহ তাকে সুফল দান করবেন। 

ইস্তেখারার নামায পড়তে না পারলেও দোয়াটি অন্ততঃ তিনবার পাঠ করে ইস্তেখারার নিয়্যত করবে। কখনও তা পরিত্যাগ করবে না । ইস্তেখারা নামাযের নিয়্যত, উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাক'আতাই ছালাতিল ইস্তিখারাতি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'অবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : ইস্তেখারার দুরাক'আত সুন্নত নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম, আল্লাহু আকবার ।

ইস্তেস্কা (বৃষ্টি প্রার্থনার) নামায

দেশে যখন অনাবৃষ্টি আরম্ভ হয় তখন বুঝতে হবে, এটি মানুষের কৃতকর্মের ফল। মানুষ আল্লাহর নাফরমানি করার ফলে মহান আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়ে বৃষ্টি বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে মানুষের কষ্ট হতে থাকলে আল্লাহর নিকট বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করা সুন্নত। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় এ নামাযকে “সালাতুল ইস্তিস্কা” বা বৃষ্টি প্রার্থনার দোয়া বলে।

নামাযের নিয়ম

এ নামায আদায়ের নিয়ম হল, দেশের সকল মুসলমান আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলে পায়ে হেঁটে সাধারণ পোশাক পরে ময়দানে গিয়ে অনেক কাকুতি-মিনতি করে মহান আল্লাহ্র নিকট নিজেদের অপরাধের স্বীকৃতি জানাবে এবং সেজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। এছাড়া নিজেদের গুনাহের জন্যও মাফ চাইবে এবং অত্যন্ত করুণভাবে কোমলচিত্তে খাঁটি তাওবাহ্ করে ভবিষ্যতে এরূপ কাজ না করার অঙ্গীকার করবে। কেউ কারও কোন প্রকার হক নষ্ট করে থাকলে তা পূরণ করে দেবে।

এ নামাযের সা যেন কোন বিধর্মী, কাফির, মুশরিক উপস্থিত না থাকে। অতঃপর সর্বাপেক্ষা বেশী খোদাভীরু পরহেজগার 'আলেমকে ইমাম নিযুক্ত করে সকলে তাঁর পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে জামা'আতের সাথে দুরাক'আত নামায পড়বে। এ নামাযে কোনরূপ আযান বা ইকামাত দিতে হবে না। তবে ইমাম সাহেব উচ্চৈঃস্বরে সূরা কিরাআত ও রুকু'-সিজদাহ্ সমূহের তাকবীর বলবেন। নামায শেষ হলে ইমাম সাহেব মিম্বরে দাঁড়িয়ে দু'টি খুতবাহ্ পাঠ করবেন। 

এরপর ইমাম সাহেবসহ সকলে কিবলামুখী হয়ে দু'হাত প্রসারিত করে আল্লাহর রহমতের পানির জন্য দোয়া-মুনাজাত করবে। এরপর বৃষ্টি না হলে পর পর তিনদিন পর্যন্ত করতে থাকবে। তিনদিনের বেশী করার কোন প্রমাণ নেই। উল্লেখ্য, ঐ তিনদিন রোযা রাখাও মুস্তাহাব । তিনদিন পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই বৃষ্টিপাত হলেও তিনদিন পূর্ণ মুস্তাহাব। করা ভাল। নামাযে যাবার আগে সাধ্যমত কিছু দান-খয়রাত করা। 

ইস্তেস্কা (বৃষ্টি প্রার্থনার) নামাযের নিয়্যত, উচ্চারণ ঃ নাওয়াইতু আন উছারিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাক'আতাই ছালাতিল ইসতিস্কায়ি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : ইস্তেস্কার দু'রাক'আত সুন্নত নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়াত করলাম, আল্লাহু আকবার ।

কুসুফ (সূর্যগ্রহণের) নামায

সূর্যগ্রহণের সময় যে নামায পড়া হয়, ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় তাকে কুসুফ বা সূর্যগ্রহণের নামায বলে। এ সময়ে দু'রাক'আত নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।

নামায আদায়ের নিয়ম

সূর্যগ্রহণের নামায জামা'আতের সাথে আদায় করবে এবং মুসলিম শাসক বা তার নির্বাচিত প্রতিনিধি এ নামাযের ইমামতি করবেন। অন্য বর্ণনায় আছে—প্রত্যেক মসজিদের ইমাম নিজ নিজ মসজিদে জামা'আতের সাথে এ নামায পড়াবেন। ইমাম না পাওয়া গেলে পুরুষরা একা একা মসজিদে এবং মহিলারা একা একা ঘরের মধ্যে পড়বে। এ নামাযের জন্য কোনরূপ আযান ইকামাত দিতে হবে না। তবে লোকজনকে একত্রিত করার জন্য "আচ্ছালাতু জামা'আতুন" এ বাক্যটি উচ্চৈঃস্বরে বলে ঘোষণা দেয়ার বৈধতা আছে ।

এ নামাযে সূরা বাকারার মত লম্বা সূরা পাঠ করা এবং রুকু-সিজদাহতে লম্বা সময় থাকা সুন্নত। এ নামাযের সূরা কিরাআত নীরবে পাঠ করবে। আর জামা'আতের ক্ষেত্রে তাকবীরসমূহ শুধু উচ্চস্বরে বলবে। নামায শেষ হলে ইমাম সাহেব কিবলার দিকে মুখ করে কিংবা লোকদের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে যতক্ষণ সূর্যগ্রহণ থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দু'হাত উঠিয়ে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করতে থাকবে এবং মুক্তাদীগণ (বসে বসে হাত উঠিয়ে) আমিন! আমিন! বলতে থাকবে।

প্রকাশ থাকে যে, দোয়া করার সময় যদি কোন ওয়াক্রিয়া নামাযের সময় এসে যায়, তাহলে মুনাজাত সমাপ্ত করে ওয়াজিয়া নামায আদায় করবে।

খুসুফ (চন্দ্রগ্রহণের) নামায

চন্দ্রগ্রহণের সময় যে নামায পড়া হয় ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় তাকে খুসুফ বা চন্দ্রগ্রহণের নামায বলে। এ সময় দু'রাক'আত নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। এ নামাযের জন্য কোনরূপ জামা'আত বা মসজিদে যাওয়া সুন্নত নয় বরং এ নামায সকলে ঘরে বসে পৃথক পৃথক ভাবে আদায় করবে। এসব নামাযসমূহ অন্যান্য সুন্নত নামাযের মত নিয়্যত করে পড়বে; তবে “ছালাতিল কুসুফ” অথবা “সালাতিল খুসুফ” উল্লেখ করতে হবে। 

ঈদুল ফিতরের নামায

দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানবমনের সকল মোহকে ত্যাগ করে, স্বীয় স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে রোযাদার ব্যক্তি, যে ত্যাগ ও সংযমের পরিচয় দিয়েছে, এ জন্য পরাক্রমশালী আল্লাহ পবিত্র শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখটিকে খুশির দিন হিসেবে ধার্য করেছেন। আর সেদিন সকল শ্রেণীর মুসলমানগণই ঈদের মাঠে একত্রিত হয়ে যে আনন্দ উপভোগ করে, ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় তাকেই ঈদুল ফিতর বলে।

এদিনে খুব সকালে ঘুম হতে জাগ্রত হয়ে স্বীয় মালামালের হিসাব-নিকাশ করে যথারীতি যাকাত ও ফিত্রার টাকা-পয়সা গরীব লোকদের মধ্যে বিতরণ করে দেবে, যাতে গরীব বেচারারাও টাকা-পয়সা পেয়ে ঈদের খুশিতে আনন্দ উপভোগ করতে পারে।

এরপর সুন্দরভাবে গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করে আতর-গুলাব ইত্যাদি সুগন্ধি দ্রব্য লাগিয়ে মৃদুস্বরে তাকবীর পাঠ করতে করতে ইদগাহের দিকে জামা'আতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে এবং সেখানে গিয়ে ইমাম সাহেবের সাথে দু'রাক'আত নামায আদায় করে যে রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া হয়েছে সম্ভব হলে অন্য রাস্তা দিয়ে বাড়িতে ফিরবে। ঈদের নামায
খোলামেলা স্থানে ঈদের মাঠে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ । তবে কোন ওযরবশত মসজিদ বা অন্যস্থানে পড়া যেতে পারে। 

যেমন—মদীনার মসজিদে নবুবীতে এক রাক'আত নামায আদায় করলে পঞ্চাশ হাজার রাক'আত হতেও বেশী ছাওয়াব হয়। কিন্তু তা সত্বেও রাসূলে কারীম (সাঃ) ঈদের দিন (বৃষ্টির কারণে) জীবনে মাত্র একবারই ঈদের মাঠ ছাড়া মসজিদে নবুবীতে ঈদের নামায আদায় করেছিলেন। এ ঘটনা হতেই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, ঈদের জামা'আত ঈদের মাঠে অত্যন্ত শানশওকতের সাথে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ । 

সুতরাং খণ্ড খণ্ড ভাবে পাড়ায় পাড়ায় জামা'আত না করে বরং কয়েক গ্রামের লোকজন একত্রে মিলিত হয়ে ঈদের মাঠে গিয়ে; অনেক বড় জামা'আত সহকারে ঈদের নামায আদায়ের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।
তাক্বীরে তাশ্রীক উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হাম্দ্ ।

অর্থ : আল্লাহ মহান, আল্লাহ্ মহান, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান এবং তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা । ঈদুল ফিতরের নামাযের নিয়্যত,
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাক'আতাই ছালাতিল ঈদিল ফিরি মা'আ সিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তা'আলা ইক্তাদাইতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থ : ঈদুল ফিত্র দু'রাক'আত ওয়াজিব নামায ছয় তাকবীরের সাথে কিবলামুখী হয়ে এ ইমামের পেছনে নিয়্যত করলাম, আল্লাহু আকবার ।

নামায পড়ার নিয়ম

নিয়্যত করে তাকবীর বলে হাত উঠিয়ে তাহরীমা বাঁধবে। এরপর “ছানা” পড়বে (তা‘আউয়্যুয, তাসমিয়্যাহ্ পড়বে না)। এরপর এক এক করে তিনবার (ইমামের অনুকরণে) অতিরিক্ত তিনটি তাক্বীর বলবে এবং প্রথম দু'বারে হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দেবে। কিন্তু তৃতীয় বার হাত উঠিয়ে তাহরীমা বাঁধবে এবং তা আউয়্যুয ও তাসমিয়্যাহ পাঠ করে মুক্তাদীগণ চুপ থাকবে। 

আর ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহার সাথে অন্য যে কোন সূরা-কিরাআত পড়ে অন্যান্য নামাযের মত যথারীতি রুকু-সিজদাহ্ আদায় করবে। এরপর দ্বিতীয় রাক'আতে দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে রুকু করার পূর্বে আল্লাহু আকবার বলে হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দেবে। এভাবে অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলে যথারীতি রুকু-সিজদাহ্, বৈঠক ইত্যাদির পর সালাম ফিরিয়ে ইমাম সাহেব মিম্বরে দাঁড়িয়ে দু'টি খুতবাহ্ পাঠ করবেন। 

প্রথম খুতবার পর কিছুক্ষণ বসে পুনরায় দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় খুতবাহ্ পাঠ করবেন। ঈদুল ফিতরের নামাযের খুতবার মধ্যে ছদকায়ে ফিতরের আকাম বৰ্ণনা করবেন। উভয় খুতবাহ্ প্রথমে তাকবীর বলে শুরু করবেন। প্রথম খুতবায় ৯ বার এবং দ্বিতীয় খুতবায় ৭ বার তাকবীর বলবেন ।

ঈদুল আযহার নামায

এ দিনটি এমন একটি খুশির দিন, যেদিন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) মহান আল্লাহর কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এদিন তিনি স্বীয় পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-কে আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী করতে সম্মত হওয়ায় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও বন্ধুত্বের স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। ফলে ইসমাঈলের স্থলে বেহেশতের দুম্বা কুরবানী করার গৌরব অর্জন করেন। ইব্রাহীম (আঃ)-এর সম্মানার্থে মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মদীর উপর এ কাজটি আবশ্যক করে দিয়েছেন এবং এ কাজটি করে আমরা অত্যন্ত আনন্দ উপভোগ করে থাকি ।

এজন্য মহান আল্লাহর নির্দেশে প্রত্যেক মুসলমান সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর কুরবানী দেয়া ওয়াজিব। যারা এ নির্দেশ অমান্য করবে তাদের প্রতি মহানবী (সাঃ) কঠোর বাণী উচ্চারণ করেছেন। এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীসে উল্লেখ আছে। হুযুর (সাঃ) ইরশাদ করেন—“যে ব্যক্তির কুরবানী দেয়ার মত শক্তি-সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করল না, সে যেন ঈদগাহ্ে নিকটবর্তী না হয় ।

ঈদুল আযহার নামাযের নিয়ম

ঈদুল আযহার নামাযের নিয়মও ঈদুল ফিতরের নামাযের অনুরূপ এবং সেদিনকার সুন্নত কাজসমূহ এদিনেও করা সুন্নত। পার্থক্য কেবল (ক) এ নামাযের নিয়্যতে ঈদুল ফিরের স্থানে ঈদুল আযহা বলবে। (খ) ঈদুল ফিরের দিন মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য খেয়ে নামায পড়তে মাঠে যাবে। আর ঈদুল আযহার দিন কিছু না খেয়ে নামায পড়তে যাবে। (গ) ঈদুল আযহার দিন ঈদুল ফিত্র অপেক্ষা উচ্চৈস্বরে তাকবীর পাঠ করবে। 

(ঘ) ঈদুল ফিত্র অপেক্ষা ঈদুল আযহার নামায একটু আগে পড়া সুন্নত। (ঙ) ঈদুল ফিরের নামাযের পূর্বে ছদকায়ে ফিত্র আদায় করার নির্দেশ রয়েছে । আর ঈদুল আযহার নামাযের পর সক্ষম ব্যক্তিদের কুরবানী করার নির্দেশ রয়েছে। (চ) উভয় ঈদের নামাযের জন্য আযান ও ইকামাতের কোন বিধান নেই ।
০ ঈদুল ফিরের খুতবায় ছদকায়ে ফিত্র, আর ঈদুল আযহার খুতবায় কুরবানী ও তাকবীরে তাশ্বীক সম্পর্কে বর্ণনা করতে হবে।

তাক্বীরে তাশরীক

উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হাম্দ ।
অর্থ : আল্লাহ্ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান এবং মহান আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা।

ঈদুল আযহার নামাযের নিয়ত

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাক'আতাই ছালাতিল ঈদিল আজহা মাআ সিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তা'আলা শারীফাতি আল্লাহু আকবার । ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ:
অর্থ : ঈদুল আযহার দুরাক'আত ওয়াজিব নামায ছয় তাকবীরের সাথে কিবলামুখী হয়ে এ ইমামের পেছনে নিয়্যত করলাম, আল্লাহু আকবার ।

৯ই জিলহজ্জ তারিখের ফজরের নামাযের পর হতে ১৩ই জিলহজ্জ তারিখের আছরের নামায পর্যন্ত প্রতি ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর তাকবীরে _তাশ্রীক (ধনী-গরীবসহ সকল মুসলমানের জন্য) পাঠ করা ওয়াজিব। এ তাকবীর ফরয নামাযের সালাম ফেরানোর পর উচ্চশব্দে পাঠ করতে হয়।

অবশ্য মহিলারা নীরবে পড়বে। ইমাম সাহেব যদি ভুলক্রমে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে ভুলে যান মুক্তাদীগণ পেছন হতে উচ্চশব্দে পড়তে শুরু করবে।

• যদি একজন লোক ঈদের নামায না পেয়ে থাকে বা কোন কারণে ফাসেদ হয়ে যায়, তবে একাকীভাবে এ নামায আদায় করবে না। কারণ ঈদের নামায আদায় করার জন্য জামা'আত হওয়া শর্ত। তাই একাকী নামায পড়া ওয়াজিব হবে না। অবশ্য একদল লোক জামা'আত না পেয়ে থাকলে বা তাদের নামায ফাসেদ হয়ে গেলে যারা জামা'আত পায়নি এমন একজন লোককে ইমাম নিযুক্ত করে পৃথকভাবে জামা'আত করবে।

• ঈদের নামাযে কোন লোক দ্বিতীয় রাক'আতে যোগ দিলে ইমাম সাহেব সালাম ফিরালে সে লোক দাঁড়িয়ে, প্রথমে ছানা, তা'আউন্যু, তাসমিয়্যাহ, সূরা-কিরা'আত পাঠ করে রুকুতে যাবার আগে তাকবীর বলবে। কিরাআতের আগে তাকবীর বলবে না। 

ইমাম দাঁড়ান অবস্থায় তাকবীর বলা ভুলে গেলেও রুকু অবস্থায় তা স্মরণে আসলে রুকুর মধ্যেই তাকবীর বলবে। রুকু ছেড়ে দিয়ে দাঁড়াবে না। অবশ্য রুকু ছেড়ে তাকবীর বলে পুনরায় রুকু করলেও নামায আদায় হয়ে যাবে এতে নামায নষ্ট হবে না। লোকসংখ্যার আধিক্যের কারণে সাহু সিজদাহ্ করতে হবে না।

Disclaimer:
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন !