পিতা-মাতার ইন্তেকালের পরে সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
হযরত আবু উসাউদ (রাঃ) বলেন, “আমরা নবী (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! মাতা-পিতার মৃত্যুর পরও কি এমন কোন পদ্ধতি সম্ভব যে, আমি তদের সাথে সুন্দর আচরণ অব্যাহত রাখতে পারি ।
” নবীজি (সাঃ) ফরমালেন, জ্বী হ্যাঁ। চারটি সুরত রয়েছে (১) মাতা-পিতার জন্য দোয়া এবং ইসতিগফার, (২) তাদের কৃত ওয়াদাসমূহ এবং বৈধ ওসয়িত পুরণ, (৩) পিতার বন্ধু-বান্ধব এবং মাতার বান্ধবীদের ইজ্জত, খাতিরদারি ও (৪) তাঁদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় ও সুন্দর আচরণ মাফরুজ) করা, যারা মাতা-পিতার দিক থেকে তোমাদের আত্মীয় হন।” (আ-আদুবুল}
হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, মৃত্যুর পর যখন মাইয়েতের মর্যাদা বুলন্দ হয় তখন সে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে এটা কেমন করে হলো? তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে বলা হয় যে তোমার সন্তানরা তোমার জন্য দোয়া ও মাগফিরাত কামনা অব্যাহত রেখেছে এবং আল্লাহ তা কবুল করে নিয়েছে। হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি মারা যান তখন তার আমলের সুযোগ শেষ হয়ে যায়।
শুধু তিনটি বস্তু এমন যা তার মৃত্যুর পরও উপকার করতে থাকে। প্রথম ছাদকায়ে জারিয়া। দ্বিতীয় তার বিস্তৃত সেই ইলম বা জ্ঞান যা থেকে মানুষ উপকৃত হয় এবং তৃতীয় সেই নেক সন্তান যারা তার জন্য কমা প্রার্থনা করে। হযরত ইবনে শিরীন (রঃ) একজন মশহর বুজর্গ তাবেয়ী ছিলেন। তিনি একটি কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, এক রাতে আমরা হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত ছিলাম।
তিনি দোয়ার জন্য হাত তুললেন এবং বিনয়ের সাথে বললেন, হে পরওয়ারদিগার! আবুহুরায়রাহ'কে ক্ষমা কর এবং হে পরওয়ারদিগার! আবু হুরায়রাহ'র মাতাকে ক্ষমা কর এবং হে পরওয়ারদিগার! তাদের সবাইকে ক্ষমা কর, যারা আবু হুরায়রাহ এবং তার মাতার ক্ষমার জন্য দোয়া করে। হযরত ইবনে শিরীন (রাঃ) বলেন, আমরা আবু হুরায়রাহ (রাঃ) এবং মাতার পক্ষে ক্ষমার দোয়া করতে থাকি যাতে আমরা আৰু হুরায়রাহ (রাঃ)-এর দোয়ায় সামিল থাকি ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতা ইন্তেকাল করেছেন এবং তিনি কোন ওসিয়াত করে যাননি। আমি যদি তাঁর তরফ থেকে কিছু সাদকাহ করি তাহলে কি তাঁর কোন উপকারে আসবো প্রিয় নবী (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ। কেন নয়। islamic history,
হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, হযরত আসয়াদ ইবনে উবাদাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতা মানত মেনেছিলেন। কিন্তু এ মানত আদায়ের পূর্বেই তিনি ওফাত পেয়েছেন। আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে এ মানত পুরো করতে পারি? হুযুর (সাঃ) ইরশাদ করলেন, কেন নয়। তুমি তাঁর পক্ষ থেকে মানত পুরো করে দাও ৷ ইসলামিক কাহিনী ৷
একবার নবী করীম (সা) বললেন, পিতার বন্ধুদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা সবচয়ে সুন্দর আচরণ। একবার হযরত আবূ দারদা (রাঃ) অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং অসুস্থতা বৃদ্ধি পেতে থাকলো এমনকি জীবিত থাকার আর আশা রইলো না। সে সময় হযরত ইউসুফ ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) দূর-দূরান্ত থেকে সফর করে তাঁর সেবার জন্য উপস্থিত হলেন। হযরত আবু দারদা (রাঃ) তাঁকে দেখে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এখানে কি করে এলে? ইউসুফ ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, হযরত! শুধু আপনার সেবার জন্যই আমি এখানে হাজির হয়েছি। কেননা শ্রদ্ধেয় পিতা এবং আপনার মধ্যে গভীর সম্পর্ক ছিল।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) একবার সফরে ছিলেন। এ সময় মক্কার এক বুদ্দুর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হলো। বুদ্দু হযরত ইবনে ওমর (রাঃ)-কে খুব ভালোভাবে দেখলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি হযরত ওমরের পুত্র? হযরত ইবনে ওমর জবাব দিলেন জ্বী হ্যাঁ। আমি তাঁরই পুত্র। এ সময় তিনি নিজের মাথা থেকে পাগড়ী খুলে তাঁকে দিলেন এবং নিজের গাধার উপর সম্মানের সাথে বসালেন।
হযরত ইবনে দিনার বললেন, “আমরা সবাই বিস্ময়ের সাথে এসব দেখতে লাগলাম এবং পরে বললাম, হে হযরত! সে তো একজন বুদ্দু অথবা গ্রামবাসী। আপনি যদি দু' দেরহাম দিয়ে দিতেন তাই তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য যথেষ্ট হতো। হযরত আবদুল্লাহ (রা) বললেন, ভাই তাঁর পিতা হযরত ওমম (রাঃ)-এর বন্ধু ছিলেন এবং আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন, পিতার বন্ধুদেরকে সম্মান করো ও এ সম্পর্ক নিঃশেষ হতে দিও না। নচেত আল্লাহ তায়ালা তোমাদের আলো নির্বাপিত করে দেবেন।
হযরত আবু বুরদাহ (রাঃ) বলেছেন, আমি যখন মদিনায় এলাম তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) আমার নিকট উপস্থিত হয়ে বলতে লাগলেন, আবু বুরদাহ। তোমার নিকট কেন এসেছি তা কি তুমি জান? আবু বুরদাহ (রা) বললেন, হযরত আমি তো তা জানি না।ইসলামিক কাহিনী ৷
হযরত আবদুল্লাহ (রা) বললেন, আমি আল্লাহর রাসূল (রা) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কবরে অবস্থিত নিজের পিতার সাথে সুন্দর আচরণ করতে চায় তার উচিত পিতার মৃত্যুর পর তার বন্ধু বান্দবদের সাথে সুন্দর আচরণ করা। এরপর তিনি বললেন, তাই! আমার পিতা হযরত ওমর (রা) এবং আপনার পিতার মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। আমি সেই বন্ধুত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনপূর্বক তাঁর হক আদায় করতে চাই।islamic history,
“হযরত আনাছ (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) এরশাদ করেছেন, যদি কোন ব্যক্তি আজীবন মাতাপিতার নাফরমানী করে এবং তার মাতাপিতা অথবা তাঁদের উভয়ের কেউ ইন্তিকাল করেন তাহলে তার উচিত অব্যাহতভাবে মাতাপিতার জন্য দোয়া ও ক্ষমা চাওয়া। ফলে আল্লাহ নিজের রহমতে তাকে নেক লোকদের মধ্যে লিখে দেন।”
Disclaimer: যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন ! |