কন্যা সন্তান মাতা-পিতার মর্যাদা
প্রিয় নবী (স) সম্পর্কে প্রত্যেক মু'মিন পুরুষ এবং মু'মিন মহিলার আকিদা বা বিশ্বাস হলো, তাঁর থেকে উত্তম বা আফজাল কেউই সৃষ্টি হয়নি এবং হতেও পারে না। তিনি (স) বলেছেন, আসমান ও জমিনে তাঁর থেকে উত্তম কোন মহিলা নেই। তাঁরই মাধ্যমে আল্লাহ পাক, প্রিয় নবী (স) কে এ চার কন্যা দান করেছিলেন এবং হযরত খাদিজা (রা) সে চার কন্যার মাতা ছিলেন। নবী (স) উম্মাহকে হেদায়াত করেছেনঃ “কন্যাদেরকে ঘৃণা করো না, আমি স্বয়ং কন্যাদের পিতা।”
এ ছাড়াও তিনি বলেছেন,কন্যারা অত্যন্ত মুহাব্বাতওয়ালী এবং কল্যাণ ও খায়ের বরকতের হয়। (কানযুল উম্মাল)
হযরত ইবনে শুরায়েত বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (স) কে বলতে শুনেছি যে, যখন কারো গৃহে কন্যা জন্মগ্রহণ করে, তখন আল্লাহ সেখানে ফেরেশতা প্রেরণ করেন। তারা এসে বলেন,হে গৃহের বাসিন্দারা!
তোমাদের উপর সালাম । ফেরেশতারা ভূমিষ্ট কন্যাকে নিজের পাখার ছায়াতলে নিয়ে নেন এবং তার মাথার উপর নিজের হাত রেখে বলতে থাকেন, এটি দুর্বল দেহ। যা একটি দুর্বল জীবন থেকে জন্ম নিয়েছে। যে ব্যক্তি এ দুর্বল জীবনে প্রতিপালনের দায়িত্ব নেবে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্য, তার সাথে থাকবে।” (আল মুয়াজ্জামুস সাগির লিত তিবরাণী)
সন্তানের কারণে দ্বিতীয় বিয়ে না করার মর্যাদা
“নবী করীম (স) ফরমিয়েছেন, কিয়ামতের দিন আমি এবং (দুশ্চিন্তায়) গণ্ড ঝলসিত মহিলা দু' আঙ্গুলের মত এক সাথে থাকবো। (ইয়াযিদ বিন যুরাই নিজের মধ্যমা এবং শাহাদাত আঙ্গুলের দিকে ইশারা করলেন) অর্থাৎ সে মহিলা যার স্বামী মারা গেছেন। তিনি একজন উঁচু বংশের সম্ভ্রান্ত এবং রূপবতী মহিলা। কিন্তু তিনি নিজের ইয়াতিম শিশুদের (ভালো লালন-পালনের জন্য) খাতিরে দ্বিতীয় বিয়ে করা থেকে বিরত থাকেন। এমনকি সে শিশু তার অভিভাবকত্ব থেকে পৃথক হয়ে গেল অথবা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে গেল।”
সন্তানকে দুধ পান না করানোর শাস্তি
মিরাজের রাতের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে নবী করীম (স) ফরমিয়েছেনঃ “অতঃপর আমাকে আরো সামনে নিয়ে যাওয়া হলো। ইত্যবসরে কতিপয় মহিলাকে দেখলাম। যাদের বুকের ছাতি সাপ দংশন করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম এরা কোন মহিলা?,
বলা হলো তারা সে মহিলা যারা নিজের সন্তানকে নিজের দুধ পান করাতো না।” (তারগীব ও তারহিব)
“এবং মুসলিম মহিলা যে নিজের সন্তানকে দুধের প্রথম ঢোক পান করায়, একটি মানুষের জীবনদানকারীর বরাবর সওয়াব পাবে।” (কানযুল উম্মাল)
সংসারে ব্যয় করার সওয়াব
“যখন কোন ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধান এবং পরকালে সওয়াব পাওয়ার জন্যে পরিবার-পরিজনের উপর ব্যয় করে তাহলে তার এ ব্যয় (আল্লাহর দৃষ্টিতে) ছাদকা হিসেবে পরিগণিত হয়।” (বুখারী, মুসলিম)
সন্তানের আকিকা ও খানা
সন্তানের আকীকা করা সুন্নাত। প্রিয় নবী (স) নিজের সন্তানের আকীকা করেছেন এবং আকীকা করার জন্য অন্যদেরকেও উৎসাহিত করেছেন। কিন্তু এটা আবিশ্যিকভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে যে, আকীকা নীরেট একটি মুসতাহার সাদকা। এটা কোন আবশ্যিক ফরয নয়। যদি কেউ আকীকা না করে তাহলে তাতে তার কোন গুণাহ নেই।
পিতা যদি সচ্ছল হয়, তাহলে আকীকা করা উত্তম। আকীকা সন্তানের জীবনের সদকা। আকীকা করায় বালা-মুছিবত দূর হয়ে যায় এবং আপদ-বিপদ থেকে সন্তান রক্ষা পায়। নবী করীম (স) বলেছেনঃ “প্রত্যেক শিশুই আকীকার বিনিময়ে রেহেন পেয়েছে। সপ্তম দিনে তার তরফ থেকে পশু জবেহ করতে হবে। সে দিনই তার নাম রাখতে হবে এবং তার মাথার চুল কাটাতে হবে।” (তিরমিজী)
আকীকা প্রকৃতপক্ষে সে পশুকে বলা হয় যা নবজাতকের জন্মের সপ্তম দিনে সাদকা হিসেবে জবেহ করা হয়। সম্ভব হলে পুত্রের পক্ষ থেকে দু'টি বকরা অথবা বকরী এবং কন্যার পক্ষ থেকে একটি জবেহ্ করতে হবে। কিন্তু পুত্রের আকীকা দু'বকরী জবেহ্ করা আবশ্যিক নয় এক বকরী অথবা এক বকরা জবেহ করা যায়। বস্তুত এটা হলো সন্তানের জীবনের সাদকা এবং সন্তানের জীবন তার বিনিময়ে রেহেন থাকে।
এ জন্য আকীকা করা উত্তম কাজ। কিন্তু শর্ত হলো আর্থিক অবস্থা সচ্ছল হতে হবে।
“আলী (রা) ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেছেন, হাসান (রা) এর তরফ থেকে আকীকায় রাসূলুল্লাহ (স) একটি বকরী জবেহ করেছিলেন এবং বলেছিলেন৷ ফাতিমা! তার চুল কাটাও এবং চুল ওজন করে সমপরিমাণ রৌপ্য দান কর। আমরা তার চুল ওজন করলাম এবং তা এক দিরহাম অথবা তার থেকে কিছু কম হয়েছিল।” (তিরমিজী)
এ হাদীস থেকে জানা গেল যে ছেলের পক্ষ থেকে একটি বকরী অথবা বকরা জবেহ করাও জায়েয । আল্লাহ্ কাউকে সম্পদ দিয়েছেন এবং সে যদি দু'টি পশু জবেহ করতে চায় তাহলে সে আনন্দের সাথে তা করতে পারে। কিন্তু এটা স্মরণ রাখতে হবে যে,ছেলের পক্ষ থেকে দু'টি পশু জবেহ করা আবশ্যিক নয়। একটাও করা যায় । আকীকা জন্মের সপ্তম দিনে করা উচিত। যদি কোন কারণে - সপ্তম দিনে করা না যায় তাহলে চতুর্দশ দিন অথবা একুশতম দিনেও করা যায় এবং তার পরেও করা যায় ।
আকীকা একটি সুন্নাত উৎসব। সুন্নাত অনুসরণের নিয়তে অত্যন্ত সাদাসিধেভাবে এ উৎসব পালন করতে হবে। প্রদর্শনী, গর্ব-অহঙকার এবং রসম ও রেওয়াজের বেষ্টনীতে যাতে এ সুন্নাতের মাটি অপবিত্র না হয় তা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। যারা এ সুন্নাত উৎসবে বিভিন্নমুখী অপচয় করে গান-বাজনার ব্যবস্থা করে তারা নিজেরাও ধোঁকা খায় এবং নিজের রবকেও ধোঁকা দিতে চায়। সুন্নাতের নামে সুন্নাত মিটিয়ে দেয়া জঘন্যতম অপরাধ।
এ ধরনের আকীকায় সওয়াব প্রাপ্তির আশাতো দুরূহ ব্যাপার। বরং এ কাজে রাসূল (স) এর অন্তরে কষ্ট লাগে এবং আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট হন। খাতনা সকল নবী (আঃ) এর সুন্নাত এবং ইসলামী রীতি। হযরত আবূ হুরায়রাহ (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (স) ফরমিয়েছেনঃ “পাঁচটি কাজ সুন্দর স্বভাবের মধ্যে পরিগণিত। খাতনা করা, নাভির নীচের চুল পরিষ্কার করা, বগলের চুল উঠানো, মোচ কাটা এবং নখ কাটা।”
আল-ফিতরাত অর্থ হলো সুন্দর প্রকৃতি বা স্বভাব। অর্থাৎ পাঁচটি বস্তু পবিত্রতার নির্দশন। এ পাঁচটি জিনিস প্রাচীনকাল থেকে নবীদের সুন্নাত হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। সকল নবীই এগুলো পালন করেছেন এবং সকলের শরীয়াতেই ঐকমত্য হিসেবে তা পালিত হয়েছে। শিশু যদি খুব দুর্বল না হয় তাহলে সপ্তম দিনেই খাতনা করা উচিত।
এতে দু'ধরনের ।ল্যাণ রয়েছে। প্রথমতঃ সে সময় শিশুর চামড়া নরম এবং পাতলা থাকে এবং াড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়। দ্বিতীয়তঃ নবী করীম (স) এর হাদীসে সপ্তম দিনে খাতনার যে ইঙ্গিত রয়েছে তা পালিত হয়। হযরত সালমান বিন আমের (রা) বলেন, আমি নবী (স) কে বলতে শুনেছিঃ “শিশু ভূমিষ্ঠ হবার সাথে সাথেই আকীকাহ । অতঃপর তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত কর এবং তার থেকে ময়লা ইত্যাদি দূর করো।”
(বুখারী)
ময়লা ইত্যাদি দূর করার অর্থ হলো চুল কাটানো এবং গোসল করানো ইত্যাদি। কতিপয় আলেমের নিকট খাতনাও এ নির্দেশের মধ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কেননা খাতনাও ময়লা দূর করা এবং পবিত্রতা অর্জনের জন্য।
এ জন্যে সপ্তম দিনে খাতনা করিয়ে নেয়া দরকার। যদি কোন কারণে তা না হয় তাহলে ৪০ দিনের মধ্যে খাতনা করিয়ে নেয়া দরকার। অথবা যে কোন সময় করাতে হবে।
এতে কোন অসুবিধা নেই। অবশ্য দু'টি ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে। প্রথমতঃ খুব বেশি দেরী যেন না হয়ে যায়। সাত বছরের মধ্যে খাতনা করিয়ে নেয়া ভালো । কেননা এরপর চামড়া মোটা হয়ে যায়। ফলে বেশি কষ্ট হয়। দ্বিতীয়ত এ সুন্নাতকে বিরাট জাঁকজমক ব্যতীত অত্যন্ত সাদাসিধেভাবে পালন করতে হবে। অবস্থা অনুকূল হলে এ সুন্নাত আদায়ের খুশীতে নিজের বন্ধু-বান্ধবকে দাওয়াত করে খাওয়ানো যায়।
কিন্তু একে একটা স্থায়ী উৎসবে পরিণত করা এবং প্রদর্শনীর জন্য খরচ করাকে প্রয়োজন মনে করা ইসলামের প্রকৃতির সাথে মিল খায় না। অকারণে নিজের উপর কোন কিছুকে আবশ্যক করে নেয়া, অতঃপর জেরবার হওয়া এবং নিজের জন্য পেরেশানী সৃষ্টি করা শরীয়াতের নাফরমানীর সমতুল্য। হযরত ওসমান বিন আবিল আছ (রা) কে কোন এক ব্যক্তি নিজের বাড়িতে খাতনার উৎসবে যোগদানের জন্য দাওাত করেছিলেন। কিন্তু তিনি তাতে যোগ দেননি।
যখন তাকে সেখানে না যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তখন বললেনঃ “নবী (স) এর যুগে আমরা কোন খাতনার উৎসবে যোগ দিতাম না এবং ডাকাও হত না।”
এ সুন্নাত অত্যন্ত সাদাসিধেভাবে পালন করাই উত্তম। যাতে এটা খামাখাই মানুষের উপর বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়। অবশ্য শিশুর পিতা যদি সচ্ছল হয় এবং আল্লাহ্ তাকে এ সুন্নাত পালনের তাওফিক দিয়েছেন এ ধারণায় কিছু লোককে খানাপিনা করাতে চায় অথবা কিছু মিষ্টি বিতরণ করতে চায় তাহলে তাকে কোন দোষ নেই । কিন্তু এটা যাতে কোন প্রথা হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে সবিশেষ খেয়াল রাখতে হবে ।
সন্তানের জন্যে খরচ না করা শক্ত গোণাহ
“নবী করীম (স) ফরমিয়েছেন, মানুষের গুণাহগার হবার জন্য এ কথাই যথেষ্ট যে, সে তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে যাদেরকে সে খানাপিনা করাচ্ছে। হযরত আবূ হুরায়রাহ (রা) বলেছেন, নবী করীম (স) ফরমিয়েছেনঃ এক আশরাফী যা তুমি আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছ, এক আশরাফী যা তুমি কোন গোলামের গোলামি থেকে মুক্তির জন্যে খরচ করেছ, এক আশরাফী যা তুমি কোন গরীবকে ছাদকা হিসেবে দিয়েছ এবং এক আশরাফী যা তুমি নিজের পরিবার পরিজনের জন্য খরচ করেছ এ সবের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছওয়াব সে আশরাফীর যা তুমি নিজের পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় করেছ।”
এ রাওয়ায়েতের আরো ব্যাখ্যা হযরত ছাওবান (রা) এর হাদীস থেকে করা যায় । তিনি বলেন, নবী করীম (স) ফরমায়েছেনঃ “সবচেয়ে উত্তম আশরাফী সে আশরাফী যা মানুষ নিজের সন্তান-সন্ততির উপর খরচ করে থাকে এবং সে আশরাফী যা মানুষ আল্লাহর পথের সওয়ারীর জন্যে খরচ করে এবং সে আশরাফীর যা মানুষ আল্লাহর পথের সঙ্গীদের জন্য খরচ করে।
আবু কালাবা (একজন মধ্যবর্তী বর্ণনাকারী) বলেন,তিনি সন্তান-সন্ততির উপর খরচ করা থেকে কথা শুরু করেন এবং বলেন,সে ব্যক্তি থেকে বেশি ছওয়াব ও পুরস্কার কে পেতে পারে যে নিজের ছোট ছোট সন্তানের জন্য খরচ করে। যাতে আল্লাহ্ তাদেরকে হাত পাতা থেকে বাঁচায় এবং সচ্ছল অবস্থায় বানিয়ে রাখেন।”islamic history.
“হযরত আবূ হুরায়রাহ (রা) থেকে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হালাল মাধ্যমে দুনিয়া তলব করলো, যাতে নিজেকে অন্যের নিকট হাত পাতা থেকে বাঁচিয়ে রাখলো এবং নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য রুজির ব্যবস্থা করলো এবং নিজের প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণ করলো সে কিয়ামতে আল্লাহর সাথে এ অবস্থায় মিলিত হবে যেন তার চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মত ঝলমল করছে এবং যে ব্যক্তি হালালভাবে এ জন্য দুনিয়ায় অর্জন করেছে যে, অন্যদের চেয়ে ধনসম্পদ বৃদ্ধি পাবে, অন্যের উপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে তাহলে সে আল্লাহর সাথে এ অবস্থায় মিলিত হবে যে আল্লাহ তার উপর ক্রোধান্বিত হবেন ।
“হযরত উম্মে সালমা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, আমি নবী (স) কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি আবূ সালমা (রা) এর পুত্রদের উপর ব্যয় করার জন্য সওয়াব পাবো? আমি তো তাদেরকে এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না যে, তারা এভাবে অভাবগ্রস্তের মতো পথে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে বেড়াবে। তারা তো আমারও পুত্র। তিনি বললেন, হ্যাঁ তুমি তাদের উপর যে ব্যয় করবে তার সওয়াব অবশ্যই পাবে।" (বুখারী, মুসলিম)
কন্যা সন্তান প্রতিপালনের সওয়াব
হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম (স) ইরশাদ করেছেনঃ “যে ব্যক্তি দু' কন্যা প্রতিপালন করলো । এমনকি তারা দু'জন উভয়ে বালেগ এবং জওয়ান হয়ে গেল। কিয়ামতের দিন এমনভাবে আসবে যে সে এবং আমি দু'আঙ্গুলের মত এক সাথে হব এবং তিনি (স) নিজের আঙ্গুলগুলোকে মিলিয়ে দেখালেন।” (রিয়াদুস সালেহীন, সহীহ মুসলিম)
“হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন৷ একজন গরীব মহিলা তার দু'টি কন্যাসহ আমার নিকট এলো। আমি তাকে তিনটি খেজুর দিলাম । সে দুটি খেজুর তার দু মেয়েকে দিল এবং অবশিষ্ট খেজুরটি দু'ভাগে ভাগ করে দু'কন্যাকে দিয়ে দিল। এ কাজ আমার খুব ভালো লাগলো আমি তার এ কাজের কথা নবী করীম (স) এর নিকট বর্ণনা করলাম। নবী করীম (স) বললেন, "আল্লাহ এ দু'কন্যা প্রতিপালনের বদৌলতে তার জন্যে বেহেশত ওয়াজিব করে দিয়েছেন এবং তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত দিয়েছেন।” (মুসলিম)
হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা) বলেছেন, নবী করীম (স) ফরমিয়েছেনঃ যে ব্যক্তির তিনটি মেয়ে। সে তিন মেয়েকেই নিজের অভিভাবকত্বে রেখেছে। তাদের প্রয়োজনাবলী পূরণ করেছে এবং তাদের প্রতি রহম করেছে। তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। কোন গোত্রের এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল (স) যদি দু' কন্যা হয়। রাসূল (আল-আদাবুল মাফরুজ) (স) জবাব দিলেন, যদি দু'কন্যা হয় তাহলেও এ সওয়াব পাওয়া যাবে ।
“নবী করীম (স) ফরমিয়েছেন, আমি তোমাদেরকে উত্তম সাদকার কথা কেন বলব না। তাহলো তোমাদের সে কন্যা যাকে তোমাদের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তোমরা ব্যতীত তাকে কামাই করে খাওয়ানেওয়ালা নেই।ইসলামিক কাহিনী ।
পুত্র সন্তানকে কন্যা সন্তানের উপর প্রাধান্য দেয়া যাবে না
“হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (স) ফরমিয়েছেন, যার ঘরে কন্যা হলো এবং সে তাকে (জাহেলী যুগের মত) জীবিত দাফন করলো না, তাকে অপাংক্তেয় মনে করলো না এবং ছেলেদেরকে তার উপর প্রাধান্য দিল না, তাহলে এ ধরনের লোককে আল্লাহ পাক বেহেশতে প্রবেশ করাবেন।”
সন্তানের জন্যে উত্তম নাম রাখতে হবে
“নবী করীম (স) ফরমিয়েছেন, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে নিজের এবং পিতার নামে ডাকা হবে। অতএব ভালো নাম রাখো।"
“হযরত আবূ ওয়াহাব নবী করীম (স) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, নবীদের নামে নাম রাখো এবং আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় নাম হলো আবদুল্লাহ এবং আবদুর রহমান। প্রিয় নাম হলো হারেছ এবং হাম্মাম এবং অত্যন্ত অপছন্দনীয় নাম হলো হরব ও মুররাহ।”
হযরত আবূ রাফে (রা) বলেন, নবী করীম (স) ফরমিয়েছেন, “যখন তোমরা কারোর নাম মুহাম্মাদ রাখতে তখন তাকে তোমরা মারবে না এবং বঞ্চিত করবে না।” (জাময়ুল ফাওয়ায়েদ)
হযরত আনাস (রা) বলেন যে, নবী করীম (স) ফরমিয়েছেন, “ তোমরা শিশুদের নাম মুহাম্মাদও রাখবে আবার তাকে অভিশাপ ও গালাগালও দেবে।”islamic history.
অর্থাৎ এ নামের সম্মানে শিশুদের সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করবে না । এমনিতেই শিশুদের সাথে খারাপ আচরণ অপছন্দনীয় কাজ। আর যদি শিশুর নাম মুহাম্মাদ হয় তাহলে আরো বেশি খেয়াল রাখতে হবে। কেননা এ নামের সম্মান প্রদর্শনও আবশ্যক ।
হযরত আবদুর রহমান বলেন-আমি নবী (স) এর খিদমতে হাজির হলাম ।
তিনি আমাকে, জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? আমি বললাম, আমার নাম 'আবদুল উজ্জা” তিনি বললেন, না তোমার নাম “আবদুর রহমান।” অন্য এক রাওয়ায়েতে আছে, আমি বললাম, “আমার নাম আজীজ।” এতে তিনি বললেন, “ আজিজ তো আল্লাহ।” (আল-আদাবুল মাফরুজ)।
হযরত ইবনে ওমর (রা) বর্ণনা করেছেন, নবী (স) আছিয়া নাম পরিবর্তন করে বললেন, তোমার নাম জামিলাহ। (আল-আদাবুল মাফরুজ)
সহীহ মুসলিমের রাওয়ায়েতে আছে, হযরত ওমর (রা) এর কন্যার নাম ছিল আছিয়াহ এবং নবী করীম (স) পবির্তন করে তার নাম রেখেছিলেন জামিলাহ। হযরত মুহাম্মদ বিন আমর (রা) বর্ণনা করেছেন, তিনি একদিন আবূ সালমার কন্যা যয়নবের [ তিনি নবী (স) এর স্ত্রী উম্মে সালমার কন্যা ছিলেন। প্রথম স্বামী আবূ সালমার পক্ষের কন্যার] নিকট গেলেন। এ সময় যয়নব আমার সাথে তার বোনের নাম জিজ্ঞেস করলেন। আমি তাকে বললাম, তার নাম বাররাহ।
সে বললো, তার নাম পরিবর্তন করে দাও। কেননা নবী করীম (স)-এর শাদী যখন যয়নব বিনতে জাহশের সাথে হয়েছিল তখন তাঁর নাম ছিল বাররাহ। নবী করীম (স) তাঁর নাম পরিবর্তন করে যয়নব রেখেছিলেন। তখন তার মা তাকে বাররাহ বারাহ বলে ডাকছিলো। এ সময় নবী (স) বললেন, নিজের পবিত্রতার ডংকা বাজিও না। আল্লাহই ভালো জানেন, তোমাদের মধ্যে কে নেককার ও কে বদকার এবং বললেন, তার নাম যয়নব রাখো। আমার মা উম্মে সালমা বললেন, ঠিক আছে তাহলে তার নাম যয়নব রাখা হলো ।
হযরত রায়েতা বিনতে মুসলিম বলেন, আমার পিতা মুসলিম আমাকে বললেন, আমি হুনাইনের যুদ্ধে রাসূল (স) এর সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? আমি বললাম, আমার নাম গুরাব (কাক)। তিনি বললেন, না তোমার নাম মুসলিম ।
হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি নবী (স) এর মজলিসে উল্লেখ করলো যে, তাকে শিহাব বলা হয়। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (স) বললেন, না বরং তুমি হিশাম । নবী করীম (স) ফরমিয়েছেন, নিজের সন্তানের নাম হুবাব রেখো না, কেননা শয়তানের নাম হুবাব । সন্তানের নাম হুবাব হতে পারে না । বরং সন্তানের নাম হলো আবদুর রহমান । সাপকে হুবাব বলা হয় এবং দুনিয়াকে উম্মে হবুবা বলা হয়ে থাকে । এ জন্যে তিনি হুবাব নাম রাখতে নিষেধ করেন ।
“হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, আল্লাহর নিকট চূড়ান্ত খারাপ ও ক্রোধ সম্বলিত নাম হলো কোন ব্যক্তিকে মালিকুল আমলাক নামে ডাকা।”
মালিকুল আমলাক শব্দের অর্থ বাদশাহদের বাদশাহ। ফারসীতে তার অর্থ হলো শাহানশাহ। অর্থের দিক থেকে এটা অত্যন্ত খারাপ নাম। কেননা এতে শিরকের ইঙ্গিত রয়েছে।
ক্ষমতা এবং বাদশাহী এককভাবে আল্লাহর অধিকারভুক্ত। এ অধিকারে অন্য কারো অংশীদার নেই। সহীহ মুসলিমে এ শব্দও রয়েছে। এর অর্থ হলো বাদশাহী এবং ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ।
প্রিয় নবী (স) কোন কোন সময় আদর করে পুরো নাম উচ্চারণের পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত নামও নিতেন, যেমন ওসমানের পরিবর্তে ও সম। এবং আয়েশার পরিবর্তে আয়েশ !
সন্তানের প্রতি যত্নবান হতে হবে
“হযরত আবূ হুরায়রাহ (রা) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেছেন, নবী করীম (স)-এরনাতি হযরত হাসান ইবনে আলী (রা) কে চুম্বন দিলেন এবং আদর করলেন। সে সময় আকরা বিন হাবিসও সেখানে বসেছিলেন । বলতে লাগলেন, আমার তো ১০টা বাচ্চা। কিন্তু আমি তো কখনো কোন একটি বাচ্চাকেও আদর করিনি। নবী করীম (স) তার দিকে তাকালেন এবং বললেন, “যে রহম করে না, আল্লাহও তার প্রতি রহম করেন না।”
“হযরত আয়েশা (রা) বলেন, জনৈক গ্রামবাসী নবীর (স) নিকট এসে বললো, তোমরা কি শিশুদেরকে চুমু দাও, আদর করো। আমরা তো শিশুদেরকে চুমু দিই না। নবী (স) এ কথা শুনে বললেন, আমার কি ক্ষমতা! আল্লাহ্ যদি তোমাদের অন্তর থেকে রহম ঝেঁটিয়ে বিদায় করে থাকেন।” (বুখারী-মুসলিম)
“হযরত আদি ইবনে ছাবিত (রা) বলেন, আমি হযরত বারা (রা) থেকে শুনেছি তিনি বলতেন, “আমি নবী (স) কে তাঁর ঘাড়ে হযরত হাসান (রা) কে সওয়ার অবস্থায় দেখেছি এবং তিনি বলেছেন, হে আল্লাহ! আমি তাকে ভালোবাসি, তুমিও তাকে ভালোবাসো।”
একবার হযরত হাসান (রা) অথবা হযরত হোসাইন (রা) তাঁর ঘাড়ে সওয়ার ছিলেন। জনৈক ব্যক্তি তা দেখে বলরেন, বাঃ! ইসলামিক কাহিনী ।
খুব সুন্দর সওয়ারী পেয়েছ তো! নবী করীম (স) এ কথা শুনে বললেন, “সওয়ারও খুব ভালো সওয়ার।” (সিরাতুন্নবী দ্বিতীয় খণ্ড)
হযরত উছামাহ বিন যায়েদ (রা) বলেছেন, নবী করীম (স) আমাকে কোলে নিয়ে এক ঊরুর উপর আমাকে ও অন্য উরুর উপর হযরত হাসান (রা) কে বসাতেন এবং আমাদের দু'জনকে বুকের সাথে চেপে ধরে বলতেন হে আল্লাহ! এ দু'জনের উপর রহম কর। আমি তাদের উপর দয়া দেখিয়ে থাকি । (বুখারী)
হযরত হাসান এবং হযরত হোসাইন (রা) কে তিনি অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন, এরা আমার গলার মনি । তিনি কন্যার গৃহে গমন করে বলতেন, আমার বাচ্চাদেরকে আনো। তাদের আনা হলে তিনি তাদেরকে কোলে করতেন, চুমু দিতেন এবং বুকের সাথে চেপে ধরতেন। (সিরাতুন্নবী দ্বিতীয় খণ্ড)
Disclaimer: যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে দোযখের কঠোর আযাব ও বেহেশতের মহা শান্তি নিয়ে তাই আমরা চাই যাতে সবাই সঠিক শিক্ষা পায় এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সাথে এই ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ পোস্ট লিখেছি যাতে ভুল কোন কিছু না হয় তারপরও যদি আপনার চোখে পড়ে কোন ধরনের ভুল হয়েছে তাহলে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমাদের ইমেইল এর মাধ্যমে এবং আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আমাদের ই-মেইল anwaraliapps@gmail.com বাংলায় লিখতে গিয়ে হয়তো কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে তাই আমাদের অনুরোধ রইলো যদি আপনার চোখে এরকম কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবেন এবং আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন যদি এই পোস্ট আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্য আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন ! |